রাব্বুল ইসলাম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার ও ভেকু মেশিন বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করার মহৎসব চলছে। শীত শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু ও মাটি কেটে নদীর চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে। বালু ও মাটি উত্তোলনের এই মহৎসব দেখে মনে হচ্ছে জেলায় কোন প্রশাসন নেই। নেই কারো জবাবদিহীতা।
এতে করে ফসলি জমি, বসতবাড়ী ও পাকা রাস্তা হুমকির মুখে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে ও নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীর পাড়ের জমি ও ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বালু বোঝায় ট্রাক দিন রাত রাস্তায় চলাচল করায় সরকারের কোটি কোটি টাকার রাস্তা নষ্ট হচ্ছে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় নদীতে ভেকু ও ড্রেজার ম্যাশিন বসিয়ে ২৪ ঘন্টা দেদারছে নদীর বুক থেকে বালু আর মাটি কেটে সাবাড় করে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে বালু খেকোরা বলছেন তারা ডিসি, ইউএনও ও ভুমি অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, মির্জাপুর ও শ্রীরামপুর কালি নদী থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু ও মাটি অবৈধ উপায়ে কাটা হচ্ছে। বালু ও মাটি বোঝায় শত শত ট্রাক চলাচলের কারণে ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মির্জাপুর গ্রামের মানোয়ার দীর্ঘদিন ধরে ২টি ড্রেজার ম্যাশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন ভেকুম্যাশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। ইতিপূর্বে বালু উত্তোলনের অপরাধে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন আলাল বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বালু উত্তোলন করছে, সবাই যদি বালু উত্তোল বন্ধ করে তাহলে আমিও করবো। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, নিউজ করলে সবার বিরুদ্ধে করবেন, আমার একার সমস্যা হলে আপনাদের সমস্যা আছে, আমি কিন্ত এতো ভালো মানুষ না!
এদিকে মির্জাপুর গ্রামে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে বালু খেকো মানোয়ার বলেন, আমি ডিসি, ইউএনও, ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছি। আপনারা আসছেন ৫০০ টাকা নিয়ে চলে যান, ছবি তুলছেন কেন?
এলাকার সচেতন মহল বলেন, ড্রেজার ও ভেকু ম্যাশিন দিয়ে নদীর বুক থেকে প্রতিনিয়তই বালু উত্তোলন করছে। ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ফিটনেস বিহীন ছোট বড় নানা প্রকার যানবাহনে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে মাটি ও বালু। বালু ও ফসলী জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হলেও প্রশাসন নির্বাকার রয়েছে।
আশপাশের জমির মালিকরা অভিযোগ করেন, জমির চারিদিক থেকে ভূমি খেকোরা বালু ও মাটি কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর তাদের নিজ নিজ জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়ে বালু ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন অভিযান চালালে বেশ কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। কিন্ত অনেক দিন প্রশাসন ও দুদক অভিযান না চালানোর জন্য ভূমি খোকোরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা সাধারণ মানুষ দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জনান, নদী থেকে বালু ও মাটি কেটে পরিবেশন বিপন্ন হওয়ার মতো কাজ কেউ করলে তাকে আমরা ছাড় দিব না। বালু উত্তোলন কারীদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।