সহিংসতায় মৃত্যু ও বর্জনে পঞ্চম ধাপের ভোট সম্পন্ন

0
287

খবর৭১ঃ সহিংসতায় একজনের মৃত্যু, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে পঞ্চম ধাপে দেশের ২৯ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গণনা।

নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্র ও রাজশাহীর চারাঘাটে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রবিবার সকাল ৪টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এই ধাপে সব পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০০ জন। তাদের মধ্যে ১৪টি পৌরসভায় ২২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী।

এ ধাপের ১৪ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কায় নির্দিষ্ট সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়েও বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এই ১৩টির মধ্যে আটটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তবুও থামানো যায়নি সহিংসতা ও গণ্ডগোল।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার নাম ছোটন অধিকারী। এসময় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে উপজেলার মুন্সিপাড়ার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের বাইরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত ছোটন উপজেলার মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে তার লাশ সৈয়দপুর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এসে নীলফামারী পৌর নির্বাচনে ভোটবর্জন করেন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম।

অন্যদিকে বেলা ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্রের পাশের সড়কে হঠাৎ করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এসময় পথচারীরাসহ ভোটাররাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিস্ফোরণের পরই কেন্দ্রটিতে ভোটারদের উপস্থিতি কমতে থাকে।

বেলা পৌনে ১২টার দিকে সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কোনো ভোটার দেখা যায়নি।

ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্র থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। তবে কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়নি।

এছাড়াও ভোটকেন্দ্রে হাতবোমা বিস্ফোরণের পর রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভা নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকুল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। দুপুর দেড়টায় পৌর এলাকার মিয়পুর মহল্লায় নিজের বাড়িতে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিকুল বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে আমার সামনেই হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট থাকতে দেয়া হয়নি। প্রশাসন নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। বার বার অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন সহযোগিতা না করার কারণে আমি মনে করি, ভোটে আমার থাকা উচিত নয়।’

বেলা ১১টার দিকে সারদা থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

ঘটনার সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একরামুল হক এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকুল ভোটকেন্দ্রেই ছিলেন। তারা টেলিভিশন সাংবাদিকদের ইন্টারভিউ দিচ্ছিলেন। তখনই সামান্য দূরে ভোটারদের সারির পেছনে হাতবোমা দুটি নিক্ষেপ করা হয়।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থী কেন নির্বাচন বর্জন করছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন।

চারঘাট ছাড়াও জেলার দুর্গাপুর পৌরসভায় নির্বাচন হয়। ভোটগ্রহণকালে দুর্গাপুরের একটি কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেদে সম্প্রদায়ের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ইসলাম নামে এক যুবক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অন্যদিকে, কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন পৌরসভার ধানের শীষ প্রতীকের ময়ের প্রার্থী মাহবুবার রহমান।

এছাড়া, ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে হইচই করার অভিযোগে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী ও এক ভোটারকে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভিন। বেলা ১১টার দিকে শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়।

ঝিনাইদহে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন মহেশপুর পৌরসভার বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম খান চুন্নু। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এছাড়া সমর্থদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট দিচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা।

বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন নীলফামারী পৌরসভার জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিদ্দিকুল আলম। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনারের কাছে পুনর্নির্বাচন দাবি করেন।

এর আগে অনুষ্ঠিত সাতটি পৌরসভায় বন্ধ ঘোষিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে এবং মৃত্যুজনিত কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড, ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড, এবং সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদেও আজ ভোটগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি ও শৈলকুপায় ভোটগ্রহণ হয়েছে ইভিএমে।

নির্বাচন কমিশন গত ১৯ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ৩১ পৌরসভার নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে। পরে অন্য ধাপ থেকে পঞ্চমে যুক্ত হয় সৈয়দপুর পৌরসভা।

এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে যশোর পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। আর ভোটগ্রহণের আগ মুহূর্তে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌর নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে ইসি।

এছাড়া চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলরসহ সব পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান। ফলে আজ ২৯ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here