খবর৭১ঃ
গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য রোধে যে অগ্রগতি হয়েছে করোনার প্রভাবে সেটি উল্টো পথে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) উল্লেখ করেছে, চলতি বছর শেষ নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি না হয়ে বরং ৪ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যাবে। তবে উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে খুব কম দেশই প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে। সংস্থাটি বলছে ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গতকাল ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে সারাবিশ্বের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের আয় কমে যাওয়া ১ দশমিক ৯ ডলার দৈনিক আয় করেন এমন দারিদ্র্য রেখার নিচে চলে আসবে নতুন করে ৯ কোটি মানুষ।
করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। বহু মানুষ অসুস্থ হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে—এ বছর করোনা প্রভাবে চরম বঞ্চনার শিকার হবে বিশ্বের ৯ কোটি মানুষ। এখন কঠিন সময়, তবে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয়ও রয়েছে। সংস্থাটির হিসাবে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে এবং এক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখছে সংস্থাটি। গত জুলাই মাসে বিশ্ব অর্থনীতির যে পূর্ভাবাস দিয়েছিল সংস্থাটি এবার সেটি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। করোনার প্রকোপ উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে দ্রুত বিস্তার করছে। চীন বাদে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
তবে সংস্থাটি বলছে, ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। উত্পাদন কার্যক্রমে ব্যাপক আঘাত হেনেছে করোনা। তুলনামূলক পর্যটন নির্ভর ছোট দেশগুলোর ক্ষতি হয়েছে অনেক। স্বাভাবিকভাবে করোনার প্রভাবে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানবসম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর শেষ নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি না হয়ে বরং ৪ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যাবে। আগামী বছর অর্থাত্ ২০২১ সালে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন এবং বড় সময় উত্পাদন বন্ধ থাকায় চলতি বছর এমন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়েছে। আইএমএফ আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত মধ্যমেয়াদে বিভিন্ন দেশের পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার ভ্যাকসিনের আবিষ্কারের সংবাদে আগামী বছর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে সংস্থাটি। আগামী বছর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন দেশে উদ্যোগ থাকবে, পাশাপাশি অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করবে। তবে বিষয়টি নির্ভর করে জনস্বাস্থ্য কতটা উন্নত হয় সেটির ওপর। করোনার প্রথম ধাক্কায় লকডাউন এবং বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি রয়েছে। এর পাশাপাশি চাহিদা স্বাভাবিক হতে কতটা সময় লাগবে সেটির ওপরও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া নির্ভর করছে। দুর্বল চাহিদা এবং রেমিট্যান্সে আঘাত আসলে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আরো বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪ শতাংশের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও মধ্যমেয়াদে অর্থাত্ ২০২৫ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারতের চলতি বছর ১০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকোচন হবে এবং আগামী বছর ৮ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। একইভাবে নেপালের এ বছর শূন্য প্রবৃদ্ধি হলেও পরের বছর আড়াই শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ সংকোচনের পর ৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হয়েছে।