খবর৭১ঃ করোনা টেস্ট জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিরুদ্ধে এবার মুদ্রা পাচার আইনে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মঙ্গলবার উত্তরা পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলাটি করে।
সিআইডি জানিয়েছে, সাহেদের ৪৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব হিসাবে সর্বমোট ৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল। এর মধ্যে তিনি তুলে নিয়েছেন ৯০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ঋণের ৮০ লাখ টাকাসহ এ মুহূর্তে তার ব্যাংক হিসাবগুলোয় জমা আছে দুই কোটি চার লাখ টাকার মতো। সিআইডি অনুসন্ধানে জেনেছে এসব অর্থের উৎস প্রতারণা ও জালিয়াতি।
সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, প্রতারণা ও জালিয়াতি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর আওতাভুক্ত অপরাধ। এর মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে রূপান্তর এবং ভোগবিলাসে ব্যয় করার অপরাধে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগ সাহেদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাটি করে। মামলার তদন্তও করবে তারা।
সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এই পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন সাহেদ। অপরাধলব্ধ আয় লেনদেনের সুবিধার্থে সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড ও অন্যান্য অস্তিত্ববিহীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করত।
সাহেদের পক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি মাসুদ পারভেজ ব্যাংক হিসাবসমূহ প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করে আসছিল। এই ৪৩টি ব্যাংক হিসাবে সর্বমোট জমা হয়েছে ৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পর্যায়ক্রমে তোলা হয়েছে ৯০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বর্তমানে স্থিতির পরিমাণ রয়েছে দুই কোটি চার লাখ টাকা।
সাহেদের নামে ৮০ লাখ টাকা ঋণের তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি রিজেন্টের এমডি মাসুদ পারভেজের ১৫টি ব্যাংক হিসাবেরও সন্ধান পায় সিআইডি। যেখানে ওই সাড়ে তিন বছরে মোট জমা ছিল তিন কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যা পরে তুলে নেয়া হলেও বর্তমান স্থিতির পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা।
সাহেদ, মাসুদ পারভেজসহ অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জন পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্নভাবে ১১ কোটি দুই লাখ ২৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন বলে সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সাহেদ সাত কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং কোভিড- ১৯ এর ভূয়া পরীক্ষা এবং জাল সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিন কোটি ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, সাহেদসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩০টি মামলার তথ্য পেয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর গত ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার অভিযোগে সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব। সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়। এরপর গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।