যদি আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা

0
580
মুজিব প্রটোকলঃ জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে লিভার বিশেষজ্ঞদের শ্রদ্ধার্ঘ্য
লেখকঃ অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও অর্থ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

খবর৭১ঃ আবারও আগস্ট, পিতা হারানোর শোকে আরও একবার শোকাতুর বাংলাদেশ। গানটা সারাবছরই কমবেশি বাজে বারবার, তবে আগস্টে বাজে অনেক বেশিবার। যতবারই শুনি, ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত ……’ – মনে হয় হতেওতো পারত। হওয়াটা খুব কি অসম্ভব ছিল? রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাতো আটকে দিতেও পারত ৩২-এর দিকে এগুতে থাকা কর্নেল ফারুকের ট্যাঙ্কটিকে। তাদের মেশিনগানের গুলিতেতো ঝাঁজড়া হয়ে যেত পারত খুনি ফারুক। বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়েই যদি জেনারেল সফিউল্লাহ ৩২-এ পাঠিয়ে দিতেন দুই প্লাটুন কমান্ডো- শেখ কামাল হয়তো তখনও ৩২- এ থাকা সেন্ট্রিদের নিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে রেখেছেন ঘাতক সেনাদের।

তাদের সাথে ৩২-এর পেছনের দেয়াল টপকে হয়তো যোগ দিয়েছেন কর্নেল জামিলও। আর এরই মাঝে পৌঁছে গেছে কমান্ডোরাও। সামনে-পেছনে সাঁড়াশি আক্রমণে পর্যুদস্ত ঘাতকের দল। সূর্যের আলো ফুটতে ফুটতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। রাতভর গোলাগুলির শব্দে দিশেহারা নগরবাসী ভোরবেলা বাংলাদেশ বেতারের ঘোষণায় জানতে পারলো ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। হামলাকারীদের হামলায় আহত চারজন সেনা সদস্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তবে নিরাপদে আছেন বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবারের সদস্যরা।

অলীক এ কল্পনা বাস্তব হবার না। জুলস ভার্নের সাইন্স ফিকশনের বেশিরভাগই তো আজ বাস্তব। আমাদের নিজেদেরই আছে একাধিক সাবমেরিন। পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। কল্পনাতেই রয়ে গেছে শুধু জুলস ভার্নের টাইমমেশিনটা। না হলে ইতিহাসের অঘটনগুলোকে শুদ্ধ করে ইতিহাসকে ইতিহাসের সঠিক পথে ঠিকই ফিরিয়ে আনা যেত। ধরুন ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বয়সের কারণে দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। গত বারোটি বছর ধরে দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা জাতির অভিভাবক হিসেবে এখনও জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী বছর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে প্রতীক্ষায় দিন গুনছে পুরো দেশ। কোভিডের সহসা হানায় বাতিল করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখায় সরকারের নানা উদ্যোগ। কিন্তু কোভিডের সেই ধাক্কাটা ঠিকঠিকই কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। কোভিড হাসপাতালগুলোয় সত্তর শতাংশ বিছানাই এখন খালি। খালি পড়ে আছে কোভিড হাসপাতালগুলোর অর্ধেকের বেশি ভেন্টিলেটরও। আশা করা যাচ্ছে কোভিডের বেয়াড়া কার্ভটা সামনেই মাথানত করবে বাংলাদেশে।

কথা ছিল মুজিববর্ষেই উদ্বোধন করা হবে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সাগর সেতুটি। হয়নি, কোভিডের কারণে পিছিয়েছে কাজ। দেশে ফিরে গিয়েছিল প্রকল্পের বিদেশি কনসালটেন্টরা। এখন আবার ফিরতে শুরু করেছেন তারা। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে উদ্বোধন করা যাবে স্বপ্নের এই সেতুটি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই যমুনা সেতুর পরিকল্পনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সরকার। আশির দশকের মাঝামাঝি উদ্বোধন করা হয়েছে যমুনার উপর সড়ক ও রেল সেতু। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল যমুনা সেতু।

তারপর বছর দশেক আগে মাওয়া আর আরিচা পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে জোড়া পদ্মা সেতু। বিদেশি অর্থায়ন এতে ছিল সামান্যই। এবারে যখন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সাগর সেতুর পরিকল্পনা করা হচ্ছিল তখন তাতে অর্থায়নের কথা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট-ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-বিশ্বব্যাংক-এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একটি কনসোর্টিয়ামের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোনো কারণ ছাড়াই বেঁকে বসেছিল তারা। কারণটা অবশ্য দেশের মানুষ ভালোই জানে।

এই সেতুটি নির্মিত হলে ‘সেন্টমার্টিন বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে’ বিদেশি বিনিয়োগের হিড়িক পড়বে। অর্থনীতিবিদরা হিসেব কষে দেখিয়েছেন এতে দেশের জিডিপি বাড়বে ০.৫ শতাংশ। এমনিতেই গত চার বছর ধরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি থাকছে দুই অংকের ঘরে। কোভিডের ধাক্কায় তা এক অংকে নেমে এলেও আবারও দু’ অংকে ফিরতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, অর্থনীতিবিদদের ধারণা তেমনটাই। আর এখন এই বাড়তি প্রবৃদ্ধি যোগ হলে এদেশকে দাবায় রাখে সাধ্য কার? সে কারণেই শেষ মুহূর্তে সরে পড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। তাতে অবশ্য পিছপা হননি শেখ হাসিনা। দেশীয় অর্থায়নেই এগিয়ে নিয়েছেন ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন বঙ্গবন্ধু সাগর সেতু’-র নির্মাণ কাজ।

শুধু কি তাই? সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ পরিণত হতে যাচ্ছে বিদ্যুত রফতানিকারক দেশে। এ বছরই বরিশালে স্থাপিত হয়েছে দেশের দ্বাদশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রথমটি স্থাপিত হয়েছিল আশির দশকের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর আমলে রূপপুরে। বাংলাদেশ এখন শতভাগ পারমাণবিক বিদ্যুৎনির্ভর দেশ। তেল-কয়লা-গ্যাস পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এদেশে এখন ইতিহাসের বিষয়। সস্তা বিদ্যুৎ আর সস্তাশ্রমের হাতছানিতে এদেশে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আর সেই সাথে লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে উন্নয়নের সূচকগুলো। একবার যদি বিদ্যুত রফতানি শুরু হয়, তাহলে এদেশ যে কোথায় গিয়ে থামবে তা এক উপরওয়ালাই জানেন।

শুধু যে দেশের চেহারাই বদলে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু তাই নয়, একাত্তরের চেতনায়, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি সত্যিকারের অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে। এদেশে সত্যি-সত্যিই ‘ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার’। এ নিয়ে টিভির টকশোতে মাত্রই তুমুল আলোচনা হলো। টকশো শেষে বেরিয়ে আসতে আসতে সেসব নিয়েই গল্প করছিলেন ‘সম্প্রীতি বিশ্ব’-র আহ্বায়ক নাট্যব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ’৭১-এর চেতনায় একটি অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করায় বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ এখন সারা পৃথিবীতে রোল মডেল। বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ বিশ্বের দেশে-দেশে ছড়িয়ে দিতে সম্প্রীতি বিশ্ব নিয়ে কাজ করছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সামনেই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কথা বলতে চীনে যাচ্ছেন তিনি। দৌড়াদৌড়ির শেষ নেই তার।

আলোচনায় ছেদ টেনে একসময় বাড়ির পথ ধরেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্পনায় ছেদ টানার পালা এবার আমারও। পিতা হারানোর শোকে ভারাক্রান্ত যখন হৃদয়, কী হতে পারত আর কী হলো না সেই হিসাব কষতে গিয়ে পাওয়া না পাওয়ার বিশাল ব্যবধানে বিষণ্ন এখন মন। তারপর একসময় নিজেকেই প্রবোধ দেই, হতে তো পারত আরও খারাপ। বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু হালটাতো নেত্রীর হাতেই। তাই বা কম কীসে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here