খবর৭১ঃ কোভিড-১৯ তথা করোনার বিস্তার ঠেকাতে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াতের কড়া নির্দেশনা থাকলেও পরিবহন শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের অনেকেও তা মানছে না। আর এমন উদাসীনতার কারণে সংক্রামক ব্যাধিটির সংক্রমণ ঝুঁকিও বাড়ছে। তবে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা একে অপরকে দুষছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লকডাউন তুলে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। বেশ কিছুদিন স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি মেনে চলা হলেও পরিবহণ মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যে এখন সচেতনতা কমে এসেছে। শুরুর দিকে গণপরিবহনে উঠতে মাস্ক পরা মাধ্যতামূলক ছিল। আর বাসে যাত্রী তোলা হতো বেশ দূরত্ব বজায় রেখে। বাসের ভেতরে যাত্রীদের দূরত্ব আগের মতো থাকলেও মাস্ক পরার বাধ্যবাধতা যেন আর নেই। বর্তমানে গণপরিবহনের চলাচলের দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই দেশে করোনা ভাইরাসের মহামারী চলছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কে চলাচলকারী বাসে যে সকল যাত্রী যাতায়াত করছে তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। বাস স্ট্যান্ডগুলোতে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করার প্রতিযোগিতা। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন চায়ের দোকানগুলোতে পরিবহণ শ্রমিকদের উপচে পড়া ভিড়। চলছে চা-সিগারেটের আড্ডা।
এসব দোকানে ভিড় করতে দেখা গেছে যাত্রী ও অন্যান্য পথচারীদের। কারও মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো মানসিকতা চোখে পড়েনি। একই অবস্থা শ্যামলি, কল্যানপুর, গাবতলী, বাংলামোটর, খিলগাঁও, রামপুরা, সদরঘাট, আগারগাও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের প্রায় সকল জায়গায়।
এদিকে মাস্ক ছাড়াই যাত্রীরা বাসে উঠছেন কিংবা উঠার চেষ্টা করেন বলে দাবি করেছে পরিবহন মালিকরা। মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর হয়ে এয়ারপোর্ট-আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী প্রজাপতি পরিবহণের মালিক রফিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অনেক যাত্রী মাস্ক ছাড়াই বাসে ওঠে। কথা শোনে না। তবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি। এক সিট পর পর যাত্রী বসানো হচ্ছে। জীবাণুনাশক ছিটানোসহ সরকারের সকল নির্দেশনা আমরা মেনে চলছি।’
এয়ারপোর্ট-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহণের মালিক বাবুল শেখের কণ্ঠেও একই রকম অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। অনেক যাত্রীকে দেখে মনেই হবে না দেশে করোনাভাইরাস বলতে কিছু আছে। তারা মাস্ক একেবারেই পরতে চায় না।’
পরিবহন মালিকরা যাত্রীদের ঘাড়ে দোষ চাপালেও ভিন্ন চিত্রও আছে। রাজধানীতে ছুটে চলা প্রায় সকল বাসের চালক ও চালকের সহকারীদের নিয়মিত ধূমপান করতে দেখা যায়। চলন্ত বাস থেকে চালকের সহকারী দৌড়ে গিয়ে সিগারেট নিয়ে বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছেন।
এক্ষেত্রে পরিবহন শ্রমিকরা কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানছে প্রশ্নে প্রজাপতি পরিবহণের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টির দিকে নজর দিয়েছি। গতকাল (শনিবার) এবিষয়ে একটা মিটিং করেছি। এবিষয়ে আমরা অবশ্যই কঠোর হবো।’
বাসের চেয়ে খারাপ দশা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচলকারী লেগুনায়। সামাজিক দূরত্বের কানাকড়িও মানা হচ্ছে না দ্রুতগতির এই পরিবহনে। শ্যামলী থেকে ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী, মোহাম্মদপুর থেকে জিগাতলা, জিগাতলা থেকে ফার্মগেট ইন্দিরা রোড, গাবতলি থেকে বেড়িবাঁধ সিকসন রুটে চলাচলকারী লেগুনাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো ছাপ নেই।
স্বাভাবিক সময়ে এসব লেগুনায় ছয় জন করে ১২ জন যাত্রী এবং চালকের সঙ্গে দুইজন যাত্রী পরিবহন করা হতো। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে যাত্রীর পরিবহণে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে ছয়জনের স্থানে চারজন করে ৮ জন যাত্রী এবং চালকের পাশে একজন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একজন যাত্রী থেকে অপর জনের দূরত্ব থাকছে এক ফুটেরও কম। এটি সরকার বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত সামাজিক দূরত্বের বিধির পরিপন্থী।
এছাড়া সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিবহন শ্রমিকদের অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক দেখা যাচ্ছে না অনেক যাত্রীর মুখেও। আর এজন্য সরকারকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘লকডাউন তুলে দেওয়ার পর সরকারের এদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরকার এবং এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’