মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর প্রতিনিধিঃ আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে সৈয়দপুরে অনলাইন ও খামারে গবাদিপশু কেনার আগ্রহ বেড়েছে পশু ক্রেতাদের। করোনা সংক্রমণ এড়াতে কোরবানীদাতারা পশুর হাটে না গিয়ে খামারে তাদের পছন্দের পশু কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। খামারীরাও করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে খামারগুলোতে পশু বিক্রি শুরু করেছে। ক্রেতারা যাতে অনলাইনে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কিনতে পারেন তার ব্যবস্থা করেছে খামারীরা। ইতোমধ্যে ক্রেতারা খামারে খামারে গিয়ে অথবা অনলাইনে পশুর দরদাম করে পশু কিনতে শুরু করেছেন।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলায় নিবন্ধিত ছোটবড় মিলিয়ে মোট ৭৬টি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে ৯ হাজার ১৯০টি গরু-ছাগল প্রস্তুত করেছে খামারীরা। এসব গরু-ছাগল মোটাতাজা করতে দেশীয় প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। এজন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও তদারকি করা হয়েছে। সরেজমিনে শহরের বাঁশবাড়ী এলাকার শেষ প্রান্তে অবস্থিত মেসার্স ইউসুফ হৃষ্টপুষ্ট খামার ও ইউসুফ ডেইরী ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, খোলামেলা উন্নত পরিবেশে লালন-পালন করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের গরু ও ছাগল। এ ফার্মের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা রোটারিয়ান জামিল আশরাফ মিন্টু জানান, আসন্ন কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটাতে তার খামারে ১৯১টি গরু ও ৪৭টি ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতাদের সামর্থ্য চিন্তা করে বড়, মাঝারি ও ছোট আকৃতির গরু রয়েছে। তার খামারে সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকার গরু রয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় ক্রেতারা গরু পছন্দ করে কেনার অর্ডার দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার খামার থেকে ১০৬টি গরু ও ৩০টি ছাগল বিক্রি করা হয়েছে। বাদবাকি পশু বিক্রি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খামারে গরুর পাশাপাশি ৪৭টি ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ খামারের গরু ও ছাগল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু লালন-পালনে নিয়মিত তদারকি করছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মীরা।
রোটারিয়ান মিন্টু জানান, চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে তার খামারে অনলাইনে এবং সরাসরি পশু বিক্রি করা হচ্ছে। খামারে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পশু বিক্রির কাজ চলছে। এছাড়াও কেউ চাইলে খামারে গরু-ছাগল কোরবানীর ব্যবস্থা করে মাংস বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি জানান, করোনার কারণে এবার খামারে ক্রেতাদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য তার খামারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু বিক্রির প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর খামারের সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু ছাগল লালন পালনের মাধ্যমে মোটাতাজা করা হয় বলে ক্রেতাদের ভীড় বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ বিভিন্ন জাতের গরু ছাগল কিনেছেন। অনেকে পশু পছন্দ করে বায়না করে রেখেছেন। তিনি বলেন আশা করছি চলমান পরিস্থিতির মধ্যে পশুর বেচাবিক্রি খারাপ হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ি এলাকার ওই খামারে দেখা যায় কোরবানী দিবেন এমন মানুষজন পশু পছন্দ করছেন। এদের মধ্যে ২/৪ জন তাদের পছন্দের পশু কিনতে অর্ডারও দিয়েছেন। ক্রেতারা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পশুর হাটে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঝুঁকি এড়াতে অনেক খোঁজ খবর নিয়ে ইউসুফ হৃষ্টপুষ্ট খামার ও ইউসুফ ডেইরী ফার্মে এসেছেন। সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়,এবারের কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটাতে সৈয়দপুরে যে পরিমাণ গরু-ছাগল লালন-পালন করা হয়েছে তাতে পশুর কোন ঘাটতি হবে না, বরং চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে খামার মালিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং অনলাইনে পশু বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এজন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।