মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর প্রতিনিধি :
সৈয়দপুরে জুয়াড়িদের হামলায় নিহত আলোচিত আলমগীর হত্যা মামলার প্রধান আসামী বাবু ওরফে বাবুয়া (৩০) আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। গত সোমবার নীলফামারী আদালতে আত্মসমর্পণ করে সে। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামী বাবুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার এজাহার নামীয় আসামি বাবুয়ার বড়ভাই আদিলকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের একটি দল। তাঁকে পার্বতিপুর শহরের একটি দোকান থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরআগে হত্যা মামলার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে এজাহারনামীয় আরও দুই আসামী মনু (২৮) ও চঞ্চলকে (২১) গ্রেফতার করে পুলিশ।
সূত্র জানায়, গত ৩১ মে দুপুরে হাতিখানা হাওয়ালদার পাড়া এলাকায় রেললাইনের পাশে জুয়া খেলছিল বাবুয়াসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এ সময় জুয়া খেলতে নিষেধ করে ওই এলাকার প্রতিবাদী যুবক দিনমজুর আলমগীর (৩০)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুয়ার নেতৃত্বে জুয়াড়িরা আলমগীরের ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করে এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিকেলে আলমগীর বাড়ি থেকে বের হয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে বাজার যাওয়ার সময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা বাবুয়ার নেতৃত্বে জুয়াড়িরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আলমগীরের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জুয়াড়ি বাবু ওরফে বাবুয়া আলমগীরের পেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যপুরী ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন আলমগীরকে প্রথমে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আলমগীরের মামা আব্দুল মালেক বাদি হয়ে গত ৩ জুন ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ আসামীদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে শহরের হাতিখানা ক্যাম্প এলাকা থেকে মামলার এজাহার নামীয় ৭নং আসামী চঞ্চলকে গ্রেফতার করে। এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ৮ জুন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় প্রতিবাদি যুবক আলমগীর। পরে আলমগীরের মৃত্যুতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আলমগীরের স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী ওইদিন শহরে প্রতিবাদ সভা করে। পরবর্তীতে হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের কয়েকটি দল সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। বাবুয়াসহ অন্যান্য আসামীদের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন লোকজনকেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
রেলওয়ে থানা পুলিশের বিরামহীন অভিযানে দিনাজপুর জেলার রাণীরবন্দর পাকেরহাট এলাকা থেকে মামলার এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামী বাবুয়ার বড় ভাই মো. মনুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যে অন্যান্য এলাকায় অভিযান চালায় তারা।
সূত্র জানায়, রেলওয়ে থানা পুলিশের কয়েকটি গ্রুপের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকায় এবং গ্রেফতার হওয়া সময়ের ব্যাপার বুঝতে পেরে আলমগীর হত্যা মামলার প্রধান আসামী বাবু ওরফে বাবুয়া গত সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেফতার হয় মামলার এজাহার নামীয় ৩নং পলাতক আসামি বাবুয়ার বড় ভাই আদিল। সে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত পার্বতিপুরে একটি ফার্নিচার দোকানে কাজ করছিল।
এনিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলো তিনজন আসামি। জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার আসামী বাবুয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করাসহ গতকাল বৃহস্পতিবার আদিলকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন হত্যার বিষয়ে প্রধান আসামি বাবুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে চলতি সপ্তাহে তাকে রিমান্ডে আনা হবে। তিনি বলেন মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগির তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।