খবর৭১ঃ জনবহুল রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ভূমিকা রাখায় সরকারের প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস। রবিবার (৫ জুলাই) সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে ‘রোহিঙ্গা রেসপন্স অ্যান্ড কোভিড১৯’ বিষয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি।
আলোচনায় রোহিঙ্গা শিবিরে বাহির থেকে লোক প্রবেশ এবং শিবির থেকে বাহিরে যাওয়ার বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সহযোগীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস। অবশ্য এই অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে চলবে না বলেও জানান তিনি। আলোচনায় স্টিভেন জানান, ধীরে ধীরে স্থানীয়দের (রোহিঙ্গা শিবিরের কাছে থাকা) জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থেকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ এর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কক্সবাজারে ভালো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পেড়েছি। এটি এক সফলতার গল্প, বিশ্বের জানা উচিত।’
মাহবুব আলম জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘের সংস্থাগুলি এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, আগের তুলনায় রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার হার ২০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাম্প থেকে বাহিরে যাওয়ার হার কমিয়ে ১০ ভাগ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
আরআরআরসি জানায়, এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন মারা গেছেন। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেই। আমরাও আতঙ্কিত নই। বেশ ভালো প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। আমরা সবার সহযোগিতায় কোভিড-১৯ ভালভাবেই মোকাবিলা করতে পারব।
আলোচনায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে প্রত্যাবাসন নেয়া উদ্যোগগুলো কিছুটা কমেছে। কিন্তু তা (প্রত্যাবসন) দ্রুত করার চেষ্টা করছি।
রাখাইন রাজ্যে আরো একবার নির্মূল কার্যক্রম ও সহিংসতা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি সহায়ক নয়।’ এ সময় জবাবদিহিতার বিষয়গুলি স্মরণ করিয়ে দেন পররাষ্ট্র সচিব।
এ সময় লাইভে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিজ জন্মস্থান নিরাপদে প্রত্যাবাসন করা।
ভূমিধস, পাচার ও র্যাডিকালাইজেশন সহ রোহিঙ্গাদের একাধিক ঝুঁকি কমাতে সরকার ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমি ভাসান চর পরিদর্শন করেছি। সেখানে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ভাসান চরে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি।’
পররাষ্ট্র সচিব জানান, বর্তমানে নারী ও শিশুসহ ৩০৬ জন রোহিঙ্গা সেখানে বসবাস করছেন।
বাংলাদেশের এই কার্যক্রমের যেন কোন ভুল ব্যাখ্যা তৈরি না হয় সে জন্য পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তাই বলে এটা মনে করার কোন সুযোগ নেই যে, রোহিঙ্গারা সীমাহীন সময়ের জন্য বাংলাদেশে বাস করবে। আমাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা।
সৌভিক দাস তমালের সঞ্চালনায় এবারের ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবক সুমাইয়া তাসনিম এবং রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের স্বেচ্ছাসেবক প্রোগ্রাম থেকে জানি আলম।