সংকটে আমাদের সামনে একমাত্র আশার বাতিঘর

0
536
সংকটে আমাদের সামনে একমাত্র আশার বাতিঘর

খবর৭১ঃ দেখতে দেখতে সময় চলে যায় ১৯৯৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম ১৮তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে শুরুর দিককার উপজেলায় চাকরির গতানুগতিক অভিজ্ঞতাটা সহসাই নাটকীয় একটা মোড় নিয়েছিল সহসাই অসম্ভব একটা সুযোগমেঘ না চাইতে জলেরমতো এসে হাজির হয়েছিল আমার সরকারি চাকরির টার্মস অব রেফারেন্সে বাড়তি যোগ হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য পরীক্ষকের দায়িত্ব

১৯৯৬ নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রথম মেয়াদে তখন দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তারপর স্বপ্নের মতো টি বছর। ঢাকা শহরের প্রান্ত থেকে প্রান্ত তখন চষে বেড়াচ্ছি এই কাজে। কখনও বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনাল তো কখনও আউটার স্টেডিয়ামে নেত্রীর জনসভায়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে যেমন ছিলাম জাতীয় শোক দিবসের স্মরণসভায়, তেমনি গিয়েছি তখনকার ঢাকার হাতেগোনা পাঁচতারকা হোটেল দুটিতেও। ফুড টেস্ট করেছি ভারতের পরলোকগত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সম্মানে দেয়া রাষ্ট্রীয় ডিনারে যেমন একদিকে, তেমনি নেত্রী যখন ছুটে গেছেন ধানমন্ডিতে কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুর সংবাদে, ছিলাম আমি সেখানেও। যতবার দেখেছি এক অদ্ভুত অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়েছি বারবার। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে এত কাছ থেকে দেখার সেই সুযোগ আমার পেশাগত প্রাপ্তিগুলোর তালিকায় একেবারে সবার উপরে

ধান ভানতে শিবের গীতগাওয়ার উদ্দেশ্য একটাই।৯৬ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন ছিল বাংলাদেশের একটি ক্রান্তিকালে।৭৫এর পর নামেবেনামে, কখনও উর্দিতে, আবার কখনও বা উর্দি ছেড়ে এদেশে টানা চলেছে স্বাধীনতাবিরোধী শাসন।৯০ গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতন আমাদের মনে ক্ষণিক আশার জন্ম দিলেও পরের পাঁচটি বছরের অপশাসন আমাদের অস্বিত্বকেই সংকটাপন্ন করে তুলেছিল। এমনি এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে উদ্ধারে ত্রাতার ভূমিকায় এসেছিলেন তিনি। তারও আগে৮১ সালে ছয় বছরের নির্বাসন শেষে বাংলাদেশে তার আগমনটাও ছিল সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই

সংকটে আমাদের সামনে একমাত্র আশার বাতিঘর
লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ। অর্থ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

৭৫ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর রাজাকার যখন মন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী, তখনও তার আগমনেই সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল এদেশের স্বাধীনতার সপক্ষীয়রা। সেদিন তিনি ফিরে না এলেস্বাধীনতা, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, ‘জয় বাংলা’- এই শব্দগুলো সম্ভবত আমাদের ডিকশনারি থেকে বিলুপ্তই হয়ে যেত। তারপর আবারও একএগারোর বিপর্যয়। মাইনাস টু ছদ্দবেশে মাইনাস ওয়ানের হিডেন ফর্মুলায় দেশের ঘাড়ে আরও একবার চেপে বসতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। যাত্রায় তারা সফল হলে বাংলাদেশ থেকে বাংলা আর বাঙালিকে চিরতরে ঝেটিয়ে বিদায় করার এজেন্ডা ছিল তাদের

একএগারোর সরকার যেদিন নেত্রীকে গ্রেফতার করেন আমি সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উপস্থিত ছিলাম। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার উদ্যোগে উপস্থিত চিকিৎসকদের একটি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল সেদিন বেরিয়েছিল ওই বটতলা থেকেই। দিকহারা মিছিলকারীদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের গুলশানের বাসভবন। এমনি ছোটছোট অনেক প্রতিবাদের জোয়ারে চেপেই ২০০৮এর আজকের এই দিনে কারামুক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের দিকদিশারী আমাদের প্রিয়বড় আপা যখনই বিপদে আর বিভ্রান্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ, তিনি এসেছেন ত্রাতা হয়ে। আর টেনে তুলেছেন ডুবন্ত দেশটাকে

এই এক আপার হাত ধরেই তো কতবার উদ্ধার পেল বাংলাদেশ। প্রিয় বাংলাদেশ আজ আরও একদফা বিপদে। এক অদৃশ্য ভাইরাসের তাণ্ডবে যখন নাস্তানাবুদ গোটা বিশ্ব, তখন বাংলাদেশ তো আর কোন ছার! আমেরিকাতেই যখন আগেভাগে খুঁড়তে হয়েছে গণকবর আর উন্নততমের দাবিদাররা যখন প্রকাশ্যে বন্দুক হাতে দাবি জানায় লকডাউন তুলে নেয়ার কিংবা অসহিষ্ণুতার নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশে যখন রাস্তায় লুটায় নিঃস্তব্ধ জর্জ ফ্লয়েড, তখন শত সংকটেও অবিচল বাংলাদেশ

আজকের বাংলাদেশের সংকটের একটি নাম কোভিড১৯। নাম জানানা জানা, চেনাঅচেনা আর বলা যায় আর যায় না, এমন অসংখ্য সংকট আজ আমাদের চারপাশে কিলবিল করছে। এর মাঝে আমাদের আশার একটিমাত্র বাতিঘর আমাদেরবড় আপাআপনার হাত ধরেই আরও একবার উদ্ধার পাক বাংলাদেশ’, অপশক্তিকে পরাজিত করে আপনার সর্বশেষ কারামুক্তির আজকের এই দিনটিতে এতটুকুই প্রত্যাশা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here