খবর৭১ঃ রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের মাদলা গ্রামের জাহাঙ্গীর মন্ডল (৪৫)। লেখা পড়া করেননি তেমন। সাংসারিক জীবনে জীবিকার তাগিদে রিক্সা চালানোসহ মাঠে ঘাটে বহু রকম কাজই করেছেন। হটাৎ সব কাজ ছেড়ে হয়ে ওঠেন সমাজ সেবক। গড়ে তোলেন ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক দুস্থ ও প্রতিবন্ধী সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন।
এই সংগঠনের তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা এবং ভারতের কোলকাতার চেয়ারম্যান। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, সকল মন্ত্রী, সেনাপ্রধান, পুলিশ প্রধান, দেসের সকল ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য আরও অনেকেই তার কমিটির উপদেষ্টা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জেলা জুড়ে সংঠনের সদস্য বানিয়েছেন লক্ষাধিক। প্রতিবন্ধী,দুস্থ, অসহায়, বৃদ্ধ,স্বামী পরিত্যক্ত, কৃষকসহ, দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরাই তাদের প্রধান টার্গেট। বিধবাদের বিধবা কার্ড করে দেওয়ার আশ্বাস, বয়স্কদের বয়স্ক ভাতা , ভূমিহীনদের দেখাচ্ছেন বাড়ি করে দেওয়ার স্বপ্ন, যার ঘর নেই তাকে সরকারি ভাবে পাকাপোক্ত ঘর করে দেওয়ার কথা বলছেন, যার চাকরি নেই তাকে অল্প টাকায় সরকারি চাকুরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে দ্রুত বৃদ্ধি করছেন সংগঠনের সদস্য।
এর জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে সদস্য ফি বিবদ নিচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। লোভনীয় আশ্বাস দিয়ে মাইকিং করে বেশ কয়েকজন ফিল্ড অফিসারের মাধ্যমে তিনমাসে এক লাখেরও বেশি সদস্য করেছেন। আর এই বিপুল পরিমান মানুষকেই দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন আশ্বাস। একইসাথে এত পরিমান সদস্যদের থেকে সংগৃহীত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন একাই। এদিকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের টাকা নিয়ে সদস্য করে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ ঝারছেন অনেকেই। সংগঠনের সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে থাকায় এবং বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বড় মাপের অনেক মানুষের নাম সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকায় সহজ সরল মানুষ কোনকিছু চিন্তা না করে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছে দ্বিধাহীন ভাবে। কিন্তু দীর্ঘদিন কোন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় এবং সংগঠনের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মন্ডলকে ফোনে না পাওয়ায় সরল মানুষগুলোর মধ্যে হতাশার পাহার জমতে থাকে। আর সংগঠনের সাথে জড়িত নামগুলোর প্রতি সৃষ্টি হয়েছে বিরুপ ধারণা। বঙ্গবন্ধুসহ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে সংগঠন বানিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে এমন প্রতারনামূলক কাজ কিছুতেই মানতে পারছেন না স্থানীয় জনসাধারণ, সুশীল সমাজ এবং সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর মন্ডলের শাহজাদপুর পৌর সদরের দিলরুবা বাসস্ট্যান্ডের অফিসে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যায়। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মাদলা গ্রামে তার বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেন। তার প্রতিবেশীরা জানায়, কিছুদিন আগেও জাহাঙ্গীর মন্ডল মাটি কাটার কাজ ও রিকশা চালিয়ে সংসার চালিয়েছে, কিন্তু এখন তার চলাফেরা দেখে মনে হয় সে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে। তারা আরো জানায় এই প্রতারক জাহাঙ্গীর মন্ডল কোটি টাকায় ঢাকাতে ফ্ল্যাট কিনেছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহাকে অবিহিত করলে তিনি জানান, এভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যাবহার করে প্রতারণা গুরুতর অপরাধ। বিষটি খতিয়ে দেখে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এই বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ জানান, এধরনের ঘৃণ্য অপরাধের জন্য প্রতারনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।