খবর৭১ঃ আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ নিয়ে শেখ হাসিনা নবমবার সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর আগে শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশন উদ্বোধন করেন সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এ কাউন্সিল অধিবেশনের পর নেতা নির্বাচনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৭ হাজার ৭৩৭ জন কাউন্সিলর অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে তাদের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত হয় নতুন কমিটি।
আওয়ামী লীগের প্রথম অর্থাৎ প্রতিষ্ঠাকালীন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন; পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে। তখন অবশ্য দলটির নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। ১৯৫৩ সালে ৩, ৪ ও ৫ জুলাই ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণের মাধ্যমে দলটি অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়; দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যার নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
সর্বশেষ দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নতুন কমিটিতে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। সামান্য ব্যতিক্রম বাদে পুরনো নেতাদের নিয়েই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে বললে ভুল হবে না।
তবে নবমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে, ৩৯ বছর থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এখনও কোনো ‘বিকল্প নেই’। অবশ্য অধিবেশনের আগে থেকেই সভাপতি পদে যে কোনো পরিবর্তন আসছে না, তা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল।
মূলত আলোচনা ছিল সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। কাউন্সিল অধিবেশনের পর এ বিষয়েও সংশয়ের অবসান হয়েছে।
বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির যে কোনো সংকট আর ক্রান্তিকালে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেবল অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়নি; জনগণের ভালোবাসায় সিক্তও হয়েছিল।
পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর হত্যা ট্র্যাজেডিসহ নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দলটি আজকের অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে; আবার অনেক দল হারিয়েও গেছে।
আওয়ামী লীগ ৭০ বছর ধরে বলিষ্ঠভাবে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে; এর কারণ সম্ভবত এটাই যে, দলটির নেতৃত্ব সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। দলটির একটা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছে।
২১তম কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকৃতপক্ষে ‘মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন’ই হচ্ছে মূল কথা।
এটি সম্ভব হলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে আরও বহু বছর, এতে কোনো সন্দেহ নেই।