খবর৭১ঃ
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘গানে বলছে মানুষ দানব হতে পারে না, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষই এখন দানব হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে মানুষকে ফেরাতে হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের (গ্রাজুয়েট) ভালো ভূমিকা রাখতে হবে। তোমরা যদি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পেইন করো তাহলে এগুলি বন্ধ হবে।’
রবিবার বিকালে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পঞ্চম সমাবর্তনে সভাপতির ভাষণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,‘এগুলো বন্ধ না হলে একদিন আমরা জাতি হিসেবে ধ্বংস হয়ে যাবো, পঙ্গু হয়ে যাব। এর হাত থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে হবে। এ ব্যাপারে মানুষকে জাগ্রত করতে হবে, যাতে এগুলো বর্জন করে। অনেক জায়গায় পকেট মারলে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এধরণের কাজ করলে তাদেরকেও গণপিটুনির ব্যবস্থা হওয়া দরকার।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ একটা কথা বলতে চাই। গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে একটু শুরু করেছিলাম, সময়ের অভাবে পারি নাই। এখানে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আছে, শুধু মেয়র সাহেব নাই। তাদের বলেছিলাম- সামনে আমের মৌসুম আসছে। সামনের আমের মৌসুমে আমার জন্য যেন ফরমালিনমুক্ত আম পাঠায়। গত বছরের আগের বছর রাজশাহীর শত শত টন আম প্রশাসন নষ্ট করেছে। কারণ এগুলোর মধ্যে ফরমালিন দেওয়া হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘ফরমালিন এক ধরণের বিষ, যা খাইলে মানুষের দেহের অপরিসীম ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু গত বছর আমে ফরমালিন দেয়ার প্রবণতা কমেছে, এটা একটা ভালো লক্ষণ। আবার এও শুনি কৃষকরা আম গাছে থাকতেই বিক্রি করে দেয়। ব্যবসায়ীরা গাছের মধ্যেই নাকি স্প্রে করে দেয়, যাতে এগুলিতে পোকামাকড় না ধরে। ছোটবেলায় দুই-তিনটা আম কাটলে একটাতে পোকা পাওয়াই যেত, আজকাল আর সমাবর্তনে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ।ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘গানে বলছে মানুষ দানব হতে পারে না, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষই এখন দানব হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে মানুষকে ফেরাতে হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের (গ্রাজুয়েট) ভালো ভূমিকা রাখতে হবে। তোমরা যদি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পেইন করো তাহলে এগুলি বন্ধ হবে।’
রবিবার বিকালে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পঞ্চম সমাবর্তনে সভাপতির ভাষণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,‘এগুলো বন্ধ না হলে একদিন আমরা জাতি হিসেবে ধ্বংস হয়ে যাবো, পঙ্গু হয়ে যাব। এর হাত থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে হবে। এ ব্যাপারে মানুষকে জাগ্রত করতে হবে, যাতে এগুলো বর্জন করে। অনেক জায়গায় পকেট মারলে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এধরণের কাজ করলে তাদেরকেও গণপিটুনির ব্যবস্থা হওয়া দরকার।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ একটা কথা বলতে চাই। গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে একটু শুরু করেছিলাম, সময়ের অভাবে পারি নাই। এখানে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আছে, শুধু মেয়র সাহেব নাই। তাদের বলেছিলাম- সামনে আমের মৌসুম আসছে। সামনের আমের মৌসুমে আমার জন্য যেন ফরমালিনমুক্ত আম পাঠায়। গত বছরের আগের বছর রাজশাহীর শত শত টন আম প্রশাসন নষ্ট করেছে। কারণ এগুলোর মধ্যে ফরমালিন দেওয়া হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘ফরমালিন এক ধরণের বিষ, যা খাইলে মানুষের দেহের অপরিসীম ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু গত বছর আমে ফরমালিন দেয়ার প্রবণতা কমেছে, এটা একটা ভালো লক্ষণ। আবার এও শুনি কৃষকরা আম গাছে থাকতেই বিক্রি করে দেয়। ব্যবসায়ীরা গাছের মধ্যেই নাকি স্প্রে করে দেয়, যাতে এগুলিতে পোকামাকড় না ধরে। ছোটবেলায় দুই-তিনটা আম কাটলে একটাতে পোকা পাওয়াই যেত, আজকাল আর আমে পোকার বংশ নাই।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বাজার থেকে দেখতে সুন্দর আপেল কিনলাম। ফরমালিনের কথা শুনে বাজার থেকে কিনে এনে বাসায় রাখলাম। দুইমাস পরেও দেখি আপেল পঁচে নাই, শুধু একটু কুঁচকে গেছে। ছোটবেলায় যখন প্রাইমারিতে পড়তাম, ইন্ডিয়া বা সিলেটের ছাতক থেকে নৌকায় নদী পথে কমলা আসতো। কমলার সিজনে আমরা কিছু কমলা পেতাম। বাজার থেকে ৩০-৪০টা করে কমলা নিয়ে আসতো। আমরা এখনকার মতো দুই-একটা ভাইবোন ছিলাম না, ভাই-বোন ছিলাম দশ-বারোজন। ভাইবোনদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কমলা বেশি নিয়ে দুই একটা খেয়ে বেশিভাগ লুকিয়ে রাখতাম। পরে সুযোগমত খাওয়ার জন্য। দুইদিন পরে দেখা যেত সবকমলা পঁচে গোবর হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘চীন থেকে আসে ছোট ছোট কমলা। গাছ থেকে পেড়ে চীন থেকে এনে বাংলাদেশে বাজারজাত করতে মিনিমাম দুই মাস লাগে। গ্রামের বাজারে বাজারে যাওয়ার পরও তরতাজা দেখা যায়। যেখানে তিনদিন কমলা রাখতে পারলাম না। সেখানে দুইমাস রেখে বিক্রি হয়, আমরা সেগুলো খাই। এমন কোনো জিনিস নেই যে ফরমালিন দেওয়া হয় না। আমার মনে হয় কাঁঠালের মধ্যেও ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে। এখন কাঁচাকলায়ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল এন্ড ফুড প্রসেসিং বিভাগ চালু হবে। আমার মনে হয় একমাত্র কচু ছাড়া সবকিছুতে ফরমালিন দেওয়া হয়। এব্যাপারে তোমাদের (গ্রাজুয়েট) দায়িত্ব আছে। মানুষকে বলতে হবে বোঝাতে হবে, এগুলো ভালো না।’
স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যখন কলেজে পড়াশোনা করি তখন শুনছি কয়েকটা ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে একটা ক্যান্সারের রোগী পাওয়া যেত। আর এখন এমন কোনো গ্রাম নাই যেখানে ৭-৮টা ক্যান্সার রোগী পাওয়া যায়না। অধিক মুনাফার জন্য ব্যবসায়ীরা-মজুদদাররা এ ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। মানে নিশ্চিন্তে যে মানুষ একটা জিনিস খাবে, ভালো একটা জিনিস, নির্ভেজাল একটা জিনিস। এটা রেয়ার (বন্ধ) হয়ে গেছে। আজকে দুঃখ হয়, কষ্ট হয়, পৃথিবীর প্রায় ৮০-৮৫টা দেশ ঘুরছি। পৃথিবীর কোনো দেশে খাদ্যের মধ্যে এ ধরণের প্রতারণা-প্রবঞ্চনা কোথাও তারা করে না।’
তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, কয়েকদিন আগে নেপাল গেলাম, ওখানে খাদ্যের মধ্যে এগুলো করে না। পৃথিবীর মধ্যে এই বাংলাদেশের আমরাই মনে হয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি। আমার কাছে সাহায্যের জন্য যারা আসে তাদের ৮০% ক্যান্সার রোগী। খাদ্যে ভেজাল-ফরমালিনের কারণেই এগুলো হচ্ছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। এখন রাজশাহী যশোর খুলনা বেল্টের মানুষ অসুখ হলেই কলকাতা যায়। কেন? আমাদের দেশে ডাক্তাররা তো কম না। ইন্ডিয়ার ডাক্তার-নার্স-ব্রাদাররা যে আচরণ করে তাদের মতো আমাদের দেশের ডাক্তার নার্সরা ভালো আচরণ করে না, সময় দেয় না। এজন্য ওখানকার ৮০% রোগী আমার দেশের। এখানে অনেক রাজনীতিবিদসহ অনেকেই আছেন। এই বিষয়টা নিয়ে ভাবা দরকার। এর কারণ হল খাবারে ভেজাল ও ফরমালিন বিষ। এখন মানুষ নিশ্চিন্তে আর কিছু খেতে পারে না।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ প্রকৌশলী সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দেশ যতবেশি উন্নত সে দেশ ততবেশি সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমাদের বিপুল মানবসম্পদ থাকা সত্ত্বেও কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা কাঙ্খিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ায় আমরা আশানুরুপভাবে এগুতে পারিনি। বর্তমান সরকার কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ যাবত কালের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নয়ন বাজেট প্রদান ও গবেষণা বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যমান সুবিধাসমূহের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুণগত উচ্চশিক্ষা প্রদানে ব্রতী হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সার্টিফিকেট দেওয়া এবং শিক্ষার প্রসারই শেষ কথা নয়। আমাদের প্রেয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা। বর্তমানে প্রতিনিয়তই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। কাজেই আমাদেরও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাস্তবভিত্তিক এবং প্রায়োগিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। গুণগত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সাথে ল্যাবরেটরির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি গবেষণা ও হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। এ জন্য গবেষণা ও ল্যাবরেটরি কর্মের উপর অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে ন্যানো টেকনোলোজি, রোবোটিক্স, ব্লক চেইন ম্যানেজমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা যাতে দেশের কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে ব্যবহৃত হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলে উদ্যোগী হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আহ্বানে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করি। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাইতো তিনি স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় জীবনে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আজ আমরা মহাকাশেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। এই যে আমাদের সামনে বিশাল কর্মযজ্ঞ, তা বাস্তবায়নে দক্ষ প্রকৌশলীর প্রয়োজন। অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, মেরিন, তথ্যপ্রযুক্তি ও মহাকাশ গবেষণা প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকৌশলীদের ভূমিকা অনন্য। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রধান কারিগর হচ্ছে প্রকৌশলীরা। সুতরাং প্রকৌশলীদের স্ব-স্ব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, সনদপ্রাপ্ত গ্রাজুয়েটবৃন্দ, তোমরা আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি। অবশ্য সার্টিফিকেট যে দিচ্ছি, ডিগ্রি দিয়ে যাচ্ছি, চেহারা দেখলাম না কারো। এতোদুর থেকে চেহারা দেখার কোনো সুযোগ নাই। কয়টা ছেলেকে দিলাম, কয়টা মেয়েকে দিলাম তাও আমি বুঝি না। মানে এটা অন্ধকারে ঢিল মারার মতো অবস্থা। উপস্থাপন হলো এদেরকে দেওয়া হোক, আমিও বললাম দিয়ে দিলাম। কি দিলাম, কাকে দিলাম, কিছুই বুঝলাম না, এটা একটা মুশকিল। তবে আজকে একটা নতুন জিনিস দেখলাম, প্রায় ইউনিভার্সিটিতে দেখা যায় ৯০% গোল্ড মেডেল মেয়েরা নিয়ে যায়। তখন মনে মনে ছেলে হিসেবে ভাবি যদিও বৃদ্ধ ছেলে, তখন ভাবি এইডা কি হইলো শুধু মেয়েরা নিয়ে যাচ্ছে, ছেলেরা পাচ্ছে না। নিজেকে ইনফেরিওর (ছোট মনে হয়), কিন্তু আজকে সুপ্রিরিয়র মনে হচ্ছে। আজকে সবগুলি ছেলে, একটি মাত্র মেয়ে। তাও আমি একটি মেয়েকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যে, সে মেয়ে কুলের ইজ্জতটা রাখতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, তোমরাই আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি। তোমরা যে বিপুল স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলে আজ তা পাখা মেলতে শুরু করেছে। তোমাদের স্বপ্নের পাখা আজ দিগন্ত বিস্তৃত। অর্জিত জ্ঞানের পাখায় ভর করে তোমরা দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হবে, দেশবাসী তা প্রত্যাশা করে। এই দেশ তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে রাখতে হবে এই দেশ, এদেশের জনগণ তোমাদের এতোদিন দিয়ে এসেছে। তাদের করের অর্থেই তোমরা আজ গ্র্যাজুয়েট, প্রকৌশলী। তাই তোমরা দেশ ও জাতির কাছে ঋণী। তোমাদের মেধা, কর্ম ও মনন দিয়ে সে ঋণ শোধ করতে হবে। সততা মানুষের জীবনে মূল্যবান সম্পদ। কর্মজীবনে তোমরা সৎপথে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবে। তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতীকে উল্লেখ আছে ‘ঐশী জ্যোতিই আমাদের পথ প্রদর্শক’। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু মহসিন আহমেদ সততার পরাকাষ্ঠার প্রতীক হিসেবে এই কথা সংযোজন করেছিলেন। তার শুভ ইচ্ছার সাথে সংগতি রেখে আমিও চাই অশুভ হাতছানি যেন কখনোই তোমাদের বিবেককে ধ্বংস করতে না পারে।
তিনি বলেন, কেবল চ্যান্সেলর হিসেবে নয়, তোমাদের গুরুজন হিসেবে বলতে চাই, উচ্চশিক্ষা শেষে একটা ভালো চাকুরি পাওয়াই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজে শিক্ষিত হওয়া ও অন্যকে শিক্ষিত করা এবং বৃহৎ মানবতার কল্যাণ করা। তাই ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে মানবসত্ত্বা দিয়ে দেশকে আলোকিত করবে, বিশ্বকেও সে আলোর আভায় রাঙিয়ে তুলবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে তোমরা সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে আলোর পথে এগিয়ে যাও। তোমাদের নতুন জীবন মঙ্গলময় হোক।
তিনি গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের, তাদের পিতা-মাতা ও শিক্ষকমন্ডলীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সাড়ম্বরে উদযাপনের জন্য রুয়েট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি রুয়েট প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং দেশের প্রকৌশল শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির অবদান তুলে ধরে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির দুইটি সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। তিনি বিজয়ের এই মাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধা ও রুয়েটের শহীদ শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াটেক এডভান্সড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. সাইফুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রুয়েট উপাচার্য প্রফেসর রফিকুল ইসলাম সেখ।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. সেলিম হোসেন। ডিগ্রি প্রদানের জন্য গ্রাজুয়েটদের চ্যান্সেলরের সামনে উপস্থাপন করেন বিভিন্ন অনুষদের ডিনগণ।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাবি উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান, বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্রালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ওসমানগণি তালুকদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য প্রফেসর সাইদুর রহমান খান, রাজশাহী মহানগর সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনি, সংসদ সদস্যবৃন্দ, রুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীকে সনদপত্র এবং স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ৯ শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। পোকার বংশ নাই।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বাজার থেকে দেখতে সুন্দর আপেল কিনলাম। ফরমালিনের কথা শুনে বাজার থেকে কিনে এনে বাসায় রাখলাম। দুইমাস পরেও দেখি আপেল পঁচে নাই, শুধু একটু কুঁচকে গেছে। ছোটবেলায় যখন প্রাইমারিতে পড়তাম, ইন্ডিয়া বা সিলেটের ছাতক থেকে নৌকায় নদী পথে কমলা আসতো। কমলার সিজনে আমরা কিছু কমলা পেতাম। বাজার থেকে ৩০-৪০টা করে কমলা নিয়ে আসতো। আমরা এখনকার মতো দুই-একটা ভাইবোন ছিলাম না, ভাই-বোন ছিলাম দশ-বারোজন। ভাইবোনদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কমলা বেশি নিয়ে দুই একটা খেয়ে বেশিভাগ লুকিয়ে রাখতাম। পরে সুযোগমত খাওয়ার জন্য। দুইদিন পরে দেখা যেত সবকমলা পঁচে গোবর হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘চীন থেকে আসে ছোট ছোট কমলা। গাছ থেকে পেড়ে চীন থেকে এনে বাংলাদেশে বাজারজাত করতে মিনিমাম দুই মাস লাগে। গ্রামের বাজারে বাজারে যাওয়ার পরও তরতাজা দেখা যায়। যেখানে তিনদিন কমলা রাখতে পারলাম না। সেখানে দুইমাস রেখে বিক্রি হয়, আমরা সেগুলো খাই। এমন কোনো জিনিস নেই যে ফরমালিন দেওয়া হয় না। আমার মনে হয় কাঁঠালের মধ্যেও ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে। এখন কাঁচাকলায়ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল এন্ড ফুড প্রসেসিং বিভাগ চালু হবে। আমার মনে হয় একমাত্র কচু ছাড়া সবকিছুতে ফরমালিন দেওয়া হয়। এব্যাপারে তোমাদের (গ্রাজুয়েট) দায়িত্ব আছে। মানুষকে বলতে হবে বোঝাতে হবে, এগুলো ভালো না।’
স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যখন কলেজে পড়াশোনা করি তখন শুনছি কয়েকটা ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে একটা ক্যান্সারের রোগী পাওয়া যেত। আর এখন এমন কোনো গ্রাম নাই যেখানে ৭-৮টা ক্যান্সার রোগী পাওয়া যায়না। অধিক মুনাফার জন্য ব্যবসায়ীরা-মজুদদাররা এ ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। মানে নিশ্চিন্তে যে মানুষ একটা জিনিস খাবে, ভালো একটা জিনিস, নির্ভেজাল একটা জিনিস। এটা রেয়ার (বন্ধ) হয়ে গেছে। আজকে দুঃখ হয়, কষ্ট হয়, পৃথিবীর প্রায় ৮০-৮৫টা দেশ ঘুরছি। পৃথিবীর কোনো দেশে খাদ্যের মধ্যে এ ধরণের প্রতারণা-প্রবঞ্চনা কোথাও তারা করে না।’
তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, কয়েকদিন আগে নেপাল গেলাম, ওখানে খাদ্যের মধ্যে এগুলো করে না। পৃথিবীর মধ্যে এই বাংলাদেশের আমরাই মনে হয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি। আমার কাছে সাহায্যের জন্য যারা আসে তাদের ৮০% ক্যান্সার রোগী। খাদ্যে ভেজাল-ফরমালিনের কারণেই এগুলো হচ্ছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। এখন রাজশাহী যশোর খুলনা বেল্টের মানুষ অসুখ হলেই কলকাতা যায়। কেন? আমাদের দেশে ডাক্তাররা তো কম না। ইন্ডিয়ার ডাক্তার-নার্স-ব্রাদাররা যে আচরণ করে তাদের মতো আমাদের দেশের ডাক্তার নার্সরা ভালো আচরণ করে না, সময় দেয় না। এজন্য ওখানকার ৮০% রোগী আমার দেশের। এখানে অনেক রাজনীতিবিদসহ অনেকেই আছেন। এই বিষয়টা নিয়ে ভাবা দরকার। এর কারণ হল খাবারে ভেজাল ও ফরমালিন বিষ। এখন মানুষ নিশ্চিন্তে আর কিছু খেতে পারে না।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ প্রকৌশলী সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দেশ যতবেশি উন্নত সে দেশ ততবেশি সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমাদের বিপুল মানবসম্পদ থাকা সত্ত্বেও কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা কাঙ্খিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ায় আমরা আশানুরুপভাবে এগুতে পারিনি। বর্তমান সরকার কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ যাবত কালের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নয়ন বাজেট প্রদান ও গবেষণা বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যমান সুবিধাসমূহের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুণগত উচ্চশিক্ষা প্রদানে ব্রতী হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সার্টিফিকেট দেওয়া এবং শিক্ষার প্রসারই শেষ কথা নয়। আমাদের প্রেয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা। বর্তমানে প্রতিনিয়তই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। কাজেই আমাদেরও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাস্তবভিত্তিক এবং প্রায়োগিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। গুণগত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সাথে ল্যাবরেটরির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি গবেষণা ও হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। এ জন্য গবেষণা ও ল্যাবরেটরি কর্মের উপর অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে ন্যানো টেকনোলোজি, রোবোটিক্স, ব্লক চেইন ম্যানেজমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা যাতে দেশের কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে ব্যবহৃত হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলে উদ্যোগী হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আহ্বানে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করি। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাইতো তিনি স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় জীবনে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আজ আমরা মহাকাশেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। এই যে আমাদের সামনে বিশাল কর্মযজ্ঞ, তা বাস্তবায়নে দক্ষ প্রকৌশলীর প্রয়োজন। অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, মেরিন, তথ্যপ্রযুক্তি ও মহাকাশ গবেষণা প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকৌশলীদের ভূমিকা অনন্য। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রধান কারিগর হচ্ছে প্রকৌশলীরা। সুতরাং প্রকৌশলীদের স্ব-স্ব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, সনদপ্রাপ্ত গ্রাজুয়েটবৃন্দ, তোমরা আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি। অবশ্য সার্টিফিকেট যে দিচ্ছি, ডিগ্রি দিয়ে যাচ্ছি, চেহারা দেখলাম না কারো। এতোদুর থেকে চেহারা দেখার কোনো সুযোগ নাই। কয়টা ছেলেকে দিলাম, কয়টা মেয়েকে দিলাম তাও আমি বুঝি না। মানে এটা অন্ধকারে ঢিল মারার মতো অবস্থা। উপস্থাপন হলো এদেরকে দেওয়া হোক, আমিও বললাম দিয়ে দিলাম। কি দিলাম, কাকে দিলাম, কিছুই বুঝলাম না, এটা একটা মুশকিল। তবে আজকে একটা নতুন জিনিস দেখলাম, প্রায় ইউনিভার্সিটিতে দেখা যায় ৯০% গোল্ড মেডেল মেয়েরা নিয়ে যায়। তখন মনে মনে ছেলে হিসেবে ভাবি যদিও বৃদ্ধ ছেলে, তখন ভাবি এইডা কি হইলো শুধু মেয়েরা নিয়ে যাচ্ছে, ছেলেরা পাচ্ছে না। নিজেকে ইনফেরিওর (ছোট মনে হয়), কিন্তু আজকে সুপ্রিরিয়র মনে হচ্ছে। আজকে সবগুলি ছেলে, একটি মাত্র মেয়ে। তাও আমি একটি মেয়েকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যে, সে মেয়ে কুলের ইজ্জতটা রাখতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, তোমরাই আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি। তোমরা যে বিপুল স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলে আজ তা পাখা মেলতে শুরু করেছে। তোমাদের স্বপ্নের পাখা আজ দিগন্ত বিস্তৃত। অর্জিত জ্ঞানের পাখায় ভর করে তোমরা দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হবে, দেশবাসী তা প্রত্যাশা করে। এই দেশ তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে রাখতে হবে এই দেশ, এদেশের জনগণ তোমাদের এতোদিন দিয়ে এসেছে। তাদের করের অর্থেই তোমরা আজ গ্র্যাজুয়েট, প্রকৌশলী। তাই তোমরা দেশ ও জাতির কাছে ঋণী। তোমাদের মেধা, কর্ম ও মনন দিয়ে সে ঋণ শোধ করতে হবে। সততা মানুষের জীবনে মূল্যবান সম্পদ। কর্মজীবনে তোমরা সৎপথে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবে। তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতীকে উল্লেখ আছে ‘ঐশী জ্যোতিই আমাদের পথ প্রদর্শক’। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু মহসিন আহমেদ সততার পরাকাষ্ঠার প্রতীক হিসেবে এই কথা সংযোজন করেছিলেন। তার শুভ ইচ্ছার সাথে সংগতি রেখে আমিও চাই অশুভ হাতছানি যেন কখনোই তোমাদের বিবেককে ধ্বংস করতে না পারে।
তিনি বলেন, কেবল চ্যান্সেলর হিসেবে নয়, তোমাদের গুরুজন হিসেবে বলতে চাই, উচ্চশিক্ষা শেষে একটা ভালো চাকুরি পাওয়াই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজে শিক্ষিত হওয়া ও অন্যকে শিক্ষিত করা এবং বৃহৎ মানবতার কল্যাণ করা। তাই ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে মানবসত্ত্বা দিয়ে দেশকে আলোকিত করবে, বিশ্বকেও সে আলোর আভায় রাঙিয়ে তুলবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে তোমরা সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে আলোর পথে এগিয়ে যাও। তোমাদের নতুন জীবন মঙ্গলময় হোক।
তিনি গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের, তাদের পিতা-মাতা ও শিক্ষকমন্ডলীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সাড়ম্বরে উদযাপনের জন্য রুয়েট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি রুয়েট প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং দেশের প্রকৌশল শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির অবদান তুলে ধরে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির দুইটি সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। তিনি বিজয়ের এই মাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধা ও রুয়েটের শহীদ শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াটেক এডভান্সড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. সাইফুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রুয়েট উপাচার্য প্রফেসর রফিকুল ইসলাম সেখ।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. সেলিম হোসেন। ডিগ্রি প্রদানের জন্য গ্রাজুয়েটদের চ্যান্সেলরের সামনে উপস্থাপন করেন বিভিন্ন অনুষদের ডিনগণ।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাবি উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান, বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্রালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ওসমানগণি তালুকদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য প্রফেসর সাইদুর রহমান খান, রাজশাহী মহানগর সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনি, সংসদ সদস্যবৃন্দ, রুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীকে সনদপত্র এবং স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ৯ শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন।