আজ বুধবার সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো। এর আগেই গত কয়েকদিন ধরে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে একের পর এক নতুন তথ্য সামনে আসছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, খাসোগি হত্যার দায় আমার ওপরই বর্তায়।
মার্কিন দাতব্য সংস্থা গণসম্প্রচার সার্ভিসের (পিবিএস) মার্টিন স্মিথকে তিনি বলেন, ‘এটা আমার নজরদারিতে ঘটেছে। আমি সব দায়িত্ব নিচ্ছি, কারণ এটা আমার নজরদারিতে ঘটেছে।’ ‘সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রটির প্রাক-প্রচার নিরীক্ষা থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
কিন্তু এবার তদন্তে এ হত্যাকাণ্ড ব্যাপারে আরও বেশ কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব তথ্য সরবরাহ করেছেন ব্রিটিশ আইনজীবী হেলেনা কেনেডি ও খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের অন্যতম সদস্য অ্যাগনেস ক্যালামার।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের কাছে ৪৫ মিনিটের একটি গোপন অডিও রেকর্ড সরবরাহ করেছে তুরস্ক। হেলেনা কেনেডি জাতিসংঘের ওই তদন্তকারী দলকে সহায়তা করছেন।
সোমবার রাতে বিবিসি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এসে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে হেলেন কেনেডি দাবি করেন, খাসোগিকে হত্যার জন্য একজন ফরেনসিক প্যাথলজিস্টকে সৌদি দূতাবাসে আনা হয়েছিল। আর খাসোগিকে হত্যার পর গান শুনতে শুনতে তার দেহ টুকরো টুকরো করেছেন সেই প্যাথলজিস্ট।
জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের কাছে সরবরাহকৃত ওই অডিও রেকর্ডে এটাই প্রতিয়মান হয়েছে বলে জানান কেনেডি।সেদিন তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যাকারীরা খাসোগির আসার জন্য অপেক্ষা করছিল বলে জানান কেনেডি।
কেনেডি বলেছেন, ‘অডিও রেকর্ডে একটি আলোচনা চলছিল যেখানে বলা হচ্ছিল, ব্যাগে মরদেহ ঠিকভাবে ঢোকানো যাবে কি না। এরপর হাসাহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এক সময় কেউ একজন বলে ওঠে, বলি দেয়ার যোগ্য জানোয়ারটা কি এসেছে?’
এ থেকে বোঝা যায় যে, হত্যাকারীদের ওই দল খাসোগির আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। খাসগির মরদেহ মেঝেতে শুইয়ে টুকরো করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন কেনেডি। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি অডিওতে শোনা ওই প্যাথলজিস্টের বক্তব্যকে কোড করেন।
তিনি বলেন, ‘খাসোগির মরদেহ কাটার সময় ওই প্যাথলজিস্টকে বলতে শোনা গেছে, জীবনে প্রথমবার আমি মাটিতে শুইয়ে লাশ কাটছি। এমনকি কসাইরাও পশু কাটার সময় সেটিকে ঝুলিয়ে নেয়।’
এ সময় প্যাথেলজিস্ট আরও বলেন, ‘লাশ কাটার সময় আমি প্রায়ই গান শুনি। কখনো কখনো হাতে কফি কিংবা সিগারেটও থাকে।’
দূতাবাসে ঢোকার পরপরই খাসোগি বুঝে গিয়েছিলেন, তার সঙ্গে খারাপ কোনো কিছু ঘটতে চলেছে। এমন দাবিও করেছেন কেনেডি।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘অডিওতে খাসোগির কণ্ঠে ভয়ের ছাপ টের পাওয়া যাচ্ছিল। একপর্যায়ে খাসোগি তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছ থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে লাগলেন। ’
অডিওটি শুনে এ হত্যাকাণ্ডের ভয়ানক দৃশ্যটি বক্তব্যের মাধ্যমে কল্পনায় নিয়ে এসেছেন অ্যাগনেস ক্যালামার। যিনি জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের অন্যতম সদস্য। তুরস্কের সরবরাহকৃত খাসোগি হত্যার সেই ৪৫ মিনিটের অডিও রেকর্ডটি শুনেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুর আগে খাসোগি তার হত্যাকারীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমরা কি আমাকে ইনজেকশন দিতে চলেছ?
কেউ একজন জবাব দিলেন, হ্যাঁ। এরপরই একটি গোঙানির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। ঠিক যেন কারও মাথা প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে মুড়ে ফেললে লোকটির দম বন্ধ হয়ে আসার শব্দের মতো। খাসগির কণ্ঠ থেকে তেমন শব্দই বেরিয়ে আসছিল।
এ সময় হত্যাকারীরা বলে ওঠে, মাথা মুড়ে ফেল। তারপরই খাসোগির আর সেই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়নি। অ্যাগনেস ক্যালামার বলেন, এরপরই হয়তো খাসোগির শরীর থেকে মাথাটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকে নিখোঁজ হন। ওই সময়ে সৌদি আরব খাসোগির বিষয়ে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে তুরস্ক প্রথম থেকেই এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করে।
পরবর্তী সময়ে জানা যায়, রিয়াদ থেকে পাঠানো ১৫ জনের একটি দল তাকে হত্যা করে। তার লাশ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীকালে সৌদি সরকার জামাল খাসোগির হত্যার দায় নিয়ে ১১ জনকে বিচারের সম্মুখীন করে। তাদের মধ্যে পাঁচজন মৃত্যুদণ্ডের মুখে রয়েছে।