খবর৭১ঃ গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন দমাতে এবার তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো শুরু করেছেন ভিসি।
গতকাল মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে নোংরা মন্তব্য করেন।
ভিসি নাসির বলেন, ‘আন্দোলনের নামে ছাত্রছাত্রীরা ঝোপঝাড়ে অশালীন কাজ করে বেড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের বের করতে দেবেন না, অথচ দেখেন তারা রাস্তায় রাস্তায়, ঝোপঝাড়ে অশালীন কাজ করে বেড়াচ্ছে; সারারাত থাকছে। তাদের ইনভাইটেড গেস্ট (আমন্ত্রিত অতিথি), অছাত্ররাও এসে রাত কাটাচ্ছে- হোয়াট ইস দিস?’
আন্দোলনের জন্য সাংবাদিকদের দায়ী করে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা বলে দিচ্ছেন- এভাবে দাঁড়াও, ওভাবে নাচ। সংবাদ কাভার (প্রচার) বন্ধ রাখেন, দুই ঘণ্টায় সমাধান হয়ে যাবে।’
ভিসি আরও বলেন, ‘ভিসি (ভাইস চ্যান্সেলর/উপাচার্য) অপসারণের জন্য আপনারা দাবি করতে পারেন, মানববন্ধন করতে পারেন। কিন্তু আড়াই কোটি টাকার ভুল তথ্য পেপারে দিয়ে ভিসি তাড়াতে হবে এটি তো ঠিক না।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘আমি সাংবাদিক ভাইদের বললাম- আপনারা আমার সঙ্গে বসেন। সমাধান ৫ মিনিটে। আপনারা এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। কিন্তু আপনারা আমাদের কথাগুলো লিখছেন না।’
এর আগেও ভিসি নাসির বাবা-মা তুলে শিক্ষার্থীদের ‘জানোয়ার’ বলে গালাগাল দেন। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অডিও ক্লিপে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এই জানোয়ার তোর বাপ বিশ্ববিদ্যালয় চালায়? জানোয়ারের দল। লাথি দিয়া বের করে দিতে ইচ্ছে করে। তোর বাপেরে চালাইতে ক। দেখি কি চালায় তোর আব্বা। তোরা জানোয়ারের দল। কোনডারে ছাড়ব না। একটার চেয়ে আরেকটা বেশি। তোরা চালা তাইলে বিশ্ববিদ্যালয়।’
আরেকটি অডিওতেও ভিসিকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মা উভয়কে নিয়ে নানা কথা বলেন।
প্রসঙ্গত ভিসি নাসিরের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের সূত্রপাত হয় একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে।
এর মধ্যে জিনিয়া ও ভিসির কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ওই ছাত্রীকে বকাঝকা ও হুমকি-ধমকি দিতে শোনা যায় উপাচার্যকে। মেয়েটির বাবাকে নিয়েও তির্যক মন্তব্য করেন তিনি। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১৪টি বিষয় মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার না করা, অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান না করা এবং ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করার কথা রয়েছে।
তবে এতে সন্তুষ্ট না হয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনসহ আন্দোলন অব্যাহত রাখেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ক্যাডারদের হামলায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়।