খবর৭১ঃ আগাম জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে মামলার এজাহার, আসামির সংশ্লিষ্টতা, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নেওয়াসহ ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে বলা হয়েছে, আসামিকে আগাম জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে হাইকোর্টকে এসব নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
রায়ে বলা হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য আগাম জামিন দেওয়া যাবে না। এটি তদন্তকে ব্যাহত করে। এছাড়া হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধের মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে কখনোই আগাম জামিন নয়। কারণ আগাম জামিন প্রদানের বিষয়টি একটি ব্যতিক্রমী ক্ষমতা, এ ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাইকোর্টকে সতর্ক থাকতে হবে।
নাশকতার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ এক ডজন বিএনপি নেতার আগাম জামিনের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এ রায় দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বৃহস্পতিবার রায়টি প্রকাশ পেয়েছে।
রায়ের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে: হাইকোর্টকে মামলার এজাহার সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় নিতে হবে। আগাম জামিন দিলে আসামি পালিয়ে যাবে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আসামির চরিত্র, আচার-আচরণ বিবেচনায় নিতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অপদস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না তা দেখতে হবে। আগাম জামিন পেয়ে আসামি যাতে সাক্ষীকে ভয় ভীতি দেখাতে না পারে সেজন্য জামিনে শর্ত জুড়ে দিতে হবে। সর্বোপরি জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে আদালতকে। জামিন পাওয়ার পর তদন্ত কর্মকতাকে সহযোগিতা করতে হবে। আট সপ্তাহের বেশি আগাম জামিন নয়। এ ধরনের জামিনের অপব্যবহার করলেই তা বাতিল চাইতে পারবে রাষ্ট্রপক্ষ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন নাশকতার মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শীর্ষ নেতা মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, খন্দকার মাহবুব হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরকতউল্লাহ বুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, হাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ, মো. শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মোরশেদ হাসান খান ও মো. আমিনুর রহমানও আগাম জামিন পান।
হাইকোর্টের দেওয়া এই আগাম জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ১৮ এপ্রিল ওই আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই সসপ্তাহের মধ্যে এসব শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পন করতে বলা হয়েছে।