খবর৭১ঃ বরগুনায় রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ (২৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের সময় স্ত্রী ছাড়া রিফাতকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
মিন্নি বলেন, তিনি তার সর্বোচ্চটা দিয়ে স্বামী রিফাত শরীফকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। এই আক্ষেপ আর বেদনা নিয়ে বাকি জীবনটা কীভাবে পার করবেন, সেটা এখন বুঝে উঠতে পারছেন না।
বুধবার অবিশ্বাস্য এই ঘটনার শিকার হওয়ার পরদিন বরগুনাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মিন্নি। জানান, সন্দেহভাজন খুনি নয়ন বন্ড তাকে কী ধরনের উত্ত্যক্ত করতেন।
মিন্নি বলেন, ‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি পারিনি, আমি আমার স্বামীকে আপ্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি…। আমি চিৎকার করেছি, সবাইরে ডাকছি কেউ আমারে সাহায্যে করেনি।’
বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে একদল দুর্বৃত্ত হামলা করে রিফাতের ওপর। আশেপাশে অনেক মানুষ ছিল। এর মধ্যেই দা দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় রিফাতকে। এই ঘটনায় ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, মিন্নি অস্ত্রধারীদের হাত টেনে ধরার চেষ্টা করছেন। রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষ ঘটনার ভিডিও ধারণ করছেন, ছবি তুলছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলছেন, কেউ বা চেয়ে চেয়ে দেখছেন। আর হামলাকারীরা মনের আক্রোশ মিটিয়ে চলে গেছে, কিন্তু কেউ কিছু বলেনি।
এই ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনার পর উচ্চ আদালত মর্মাহত হয়েছে। কেউ এগিয়ে আসল না-এটা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দুই বিচারপতি।
এই ঘটনায় নয়ন বন্ডকে দায়ী করে মিন্নি তার ফাঁসি চেয়েছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তিনি। বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর মৃত্যুর বিচার চাই, আমি নয়নের ফাঁসি চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করছি- উনিও একজন নারী আমিও একজন নারী। আমি আমার স্বামীর মৃত্যুর বিচার চাই, আমি সবার ফাঁসি চাই।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বামী হারা তরুণী বলেন, ‘আমি আর আমার স্বামী কলেজে বের হই। হঠাৎ আমাদের উপর আক্রমণ করে। …আমরা কলেজ থেকে বের হবার পর প্রথমে কয়েকজন আমাদের আটকায়। সে সময় ওরা আমার স্বামীকে মারতে শুরু করে। এসময় দা টা কী কী যেন নিয়ে আসে ওরা। পরে সবাই ছেড়ে দেয়। এ সময় রিশাত নামে একজন ছেলে রিফাতকে ধরে। পরে নয়ন ও রিফাত ফরাজী দুইজন মিলে আমার স্বামীকে কোপাতে থাকে।’
‘রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় নয়ন মাঝে মধ্যে তার রিকশায় লাফ দিয়ে উঠত। বলত তার সঙে ছবি তুলতে হবে। কথা না শুনলে হুমকি ধামকি দিত নয়ন। এসব কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলারও হুমকিও দেওয়া হতো।’
ভয়ে আগে কাউকে কিছু বলতেন না মিন্নি। তবে বিরক্তিরর মাত্রা বাড়লে বিষয়টি পরিবারে জানান তিনি। পরে রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। খুব ভালোই চলছিল তাদের সংসার।
‘ও (রিফাত) আমাকে অনেক ভালোবাসত। আমিও ওকে খুব ভালোবাসতাম। কিন্তু বিয়ের পরেও নয়ন আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করেনি। বরং মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। এই বিষয় আমার স্বামী রিফাতকে বলি, সে শোনে…। এটা নিয়ে নয়নের সঙে আমার স্বামীর কোন ঝামেলা হয়েছে কি না আমি জানি না’- কাঁদতে কাঁদতে বলেন মিন্নি।