খবর ৭১ঃ নড়াইল সদর হাসপাতালের চিত্র পাল্টে গেছে পুরোপুরি। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ঝটিকা অভিযানের পর আগের চেয়ে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন রোগীরা। যদিও চিকিৎসক সংকট দূর করার এতটুকু উদ্যোগ নেই।
গত ২৫ এপ্রিল মাশরাফি হাসপাতালে এসে চিকিৎসক না পাওয়ার পর সতর্কতা দেন তিনি। বরখাস্ত করা হয় চার জন চিকিৎসককে। এরপর থেকে চিকিৎসকদের ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমেছে।
হাসপাতালটি এখনো তীব্র চিকিৎসক সংকটে ভুগছে। এখানে চিকিৎসকদের ৩৯টি পদ থাকলেও এখন কর্মরত কেবল ১৩ জন। আর এ কারণে রোগীদের কাংখিত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও যে চিকিৎসকরা আছেন, তারা আগের চেয়ে বেশি আন্তরিকভাবে দেখছেন।
হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় এক হাজার রোগী আসেন। একশ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি থাকেন গড়ে ২৫০ জন।
চিকিৎসা নিতে আসা সদরের রঘুনাথপুরের ফসিয়ার বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে ভালোভাবে দেখেছেন। এমন ব্যবহার এর আগে পাইনি।’
মহিষখোলার রহিমা বেগম বলেন, ‘আমি বহির্বিভাগে টিকিট কেটে ডাক্তারের ভালো চিকিৎসা পেয়েছি। আগের মতো অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়নি।’
তবে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি রোগীরাও জানেন। আর এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলেছেন তারা। দক্ষিণ নড়াইলের জয়নাল বলেন, ‘একজন চিকিৎসক অনেক রোগী দেখতে গিয়ে ঠিকমত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। দ্রুত চিকিৎসক সংকট দুর করা প্রয়োজন।’
বর্তমানে হাসপাতালে দালালদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিও কমে গেছে। তবে, বিভিন্ন অপকৌশলে দালালরা রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়টিতেও নজর দেওয়ার দাবি আছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস শাকুর বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালে ৩৯ চিকিৎসক থাকার কথা। এতদিন ছিলেন ১৭ জন। চার জন বরখাস্ত হওয়ার পর এখন আছেন ১৩ জন।’
হাসপাতালে নার্স কর্মরত আছেন ৬৮ জন। এই পদে কোনো সংকট নেই। তবে আটজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা সুইপারের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন চারজন। এদের মধ্যে একজন আবার ক্যান্সারের রোগী।
গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শনে যান মাশরাফি। সেদিন চারজন চিকিৎসক হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলেন। ফোনে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস শাকুর এবং সার্জারি বিশেষজ্ঞ আকরাম হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চান।
এই ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হওয়ার পর গত ২৮ এপ্রিল সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) আকরাম হোসেন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) শওকত আলী, জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) রবিউল আলম ও মেডিকেল অফিসার এ এস এম সায়েমকে প্রথমে ওএসডি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরদিন তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।