খবর৭১ঃআহলান সাহলান মাহে রমজান
একটি বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র রমজান। আজ বাদ এশা অনুষ্ঠিত হবে প্রথম তারাবি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মতে অধিকাংশ মসজিদে ২৭ রমজানে কোরআন খতম করা হয়। প্রথম ৬ তারাবিতে দেড় পারা করে মোট ৯ পারা পড়া হয়। পরবর্তী ২১ তারাবিতে এক পারা করে বাকি ২১ পারা পড়া হয়। এভাবে ২৭ দিনে ৩০ পারা মানে এক খতম কোরআন পড়া হয়।
১. সূরা ফাতেহা : ১-৭
উম্মুল কোরআন, ফাতিহাতুল কোরআন, সূরাতুস সালাহসহ অনেক নাম রয়েছে এ সূরার। এটি মক্কায় নাজিল হয়েছে। ফরজ-সুন্নাত-নফল কোন নামাজই এ সূরা ছাড়া আদায় শুদ্ধ হবে না।
এ সূরার প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও তার গুনগান করা হয়েছে। তারপর বান্দার জন্য সহজ-সরল পথ ‘সিরাত-আল-মুসতাকিম’ চাওয়া হয়েছে। সিরাতাল মুস্তাকিমের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সর্বশেষ পথভ্রষ্টদের পরিচয় এবং সে পথে না যাওয়ার প্রার্থণা করা হয়ে। এ কারণে এ সূরাকে সূরাতুদ দোয়া মানে প্রার্থনার সূরা নামেও নামকরণ করা হয়েছে।
১ম তারাবি
আজকের তারাবিতে পবিত্র কোরআনের প্রথম দেড় পাড়া তিলাওয়াত করা হবে।
এ অংশে সূরা বাকারার ১ থেকে ২০৩ নম্বর আয়াত তথা প্রথম থেকে পঁচিশতম রুকুর মাঝামাঝি পর্যন্ত পড়া হবে।
২. সূরা বাকারাহ : ১-২০৩
সূরা বাকারাহ মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। ক্রমিক নাম্বারে এটি পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সূরা। এর মোট ২৮৬টি আয়াত এবং ৪০টি রুকু রয়েছে।
প্রথম রুকু ১ থেকে ৭ আয়াত পর্যন্ত।
এখানে পবিত্র কোরআন সন্দেহাতীতভাবে নির্ভুল একটি গ্রন্থ সে কথা বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, এ কিতাব মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত। মুত্তাকি কারা? কী তাদের বৈশিষ্ট্য? তাদের পরিণাম কী এবং যারা খোদাভিরু নয় তাদেরই বা পরিণাম ও বৈশিষ্ট্য কেমন হবে- এসব বলা হয়েছে এখানে।
দ্বিতীয় রুকু- ৮ থেকে ২০ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য কী? তারা কিভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকাতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে ঠকায়, এর বিস্তারিত আলোচনা উদাহরণ দিয়ে বলেছেন আল্লাহ তায়ালা।
২১ থেকে ২৯ নম্বর আয়াত- তৃতীয় রুকুতে মানুষের উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান করা হয়েছে, তার প্রতিপালকের ইবাদত করার জন্য। কেন ইবাদত করতে হবে এর যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে। তারপর বলেছে, যদি তোমরা ইবাদাত করতে না চাও, এ কোরআনকে অবিশ্বাস কর, তবে এর মত আরেকটি কোরআন বানিয়ে নিয়ে আসো। আর তোমরা এটি পারবে না। তাই এখনই জাহান্নামের জন্য সতর্ক হয়ে যাও। যারা সতর্ক থাকে এবং ইমানের জীবনযাপন করে তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
৩০ থেকে ৩৯ নম্বর আয়াত- চতুর্থ রুকুতে আদম (আ.) এর সৃষ্টি, ফেরেশতাদের সিজদাহ, ইবলিসের অহংকার এবং আদম ও মা হাওয়ার (আ.) জান্নাত থেকে অবতরণের ঘটনা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, রিসালাতের নির্দেশ অনুসরণের মাধ্যমেই মানবজাতি আবার জান্নাতের আবাস ফিরে পাবে।
৪০ থেকে ১০৩ নম্বর আয়াত- পঞ্চম থেকে ১২তম রুকু পর্যন্ত বনি ইসরাইলদের বিভিন্ন বিষয় নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের বারবার বলা হয়েছে, তোমাদের কিতাবের নির্দেশনা অনুযায়ী এ কিতাব ও এ নবীর ওপর ইমান আন। বনি ইসরাইলের ওপর আল্লাহ তায়ালা কী কী অনুগ্রহ করেছেন, বিনিময়ে তারা কত জঘন্য নাফরমানি করেছে এসব ঘটনাও বলা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।
বিশেষ করে মুসা (আ.) এর অনুপস্থিতিতে গরু-পূজা, তাদেরকে ক্ষমার শর্ত দেয়ার পরও সে শর্ত ভঙ্গ করা, জান্নাতি খাবার ‘মান্না ও সালওয়া’ খেতে অনীহা প্রকাশ করা, সম্পত্তির জন্য একজন আরেকজনকে হত্যা করলে তা জানানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা হত্যাকৃত ব্যক্তির গায়ে গরুর-মাংশ স্পর্শের নিদেশ দেন, ওই নির্দেশের বিপরীতে বনি ইসরাইল কেমন গোড়ামী ও প্যাঁচের পথ বেছে নেয়- এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এ বৃহৎ অংশে।
১০৪ থেকে ১১৯ নম্বর আয়াত- ১৩ থেকে ১৪তম রুকুতে উম্মতে মুহাম্মাদিকে উদ্দেশ করে বলা হচ্ছে, তোমরা বনি ইসরাইলের মত অকৃতজ্ঞ হয়ো না। তোমরা রাসুলের সহযোগী হও। পূর্ববর্তী উম্মতরা যেমন ধর্মীয় কোন্দলে নিজেরা শতধা বিভক্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে তোমরা সেরকম হয়ো না। এসব হেদায়াতের পর আবার বনি ইসরাইলকে উদ্দেশ করে তাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বার হজরত ইবরাহিম (আ.) এর দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। কাবা ঘর নির্মানের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইবরাহিমি ধর্ম ও মুহাম্মদি ধর্ম একই ধর্ম। এর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কেবল নির্বোধ ছাড়া আর কেউই এ ধর্ম থেকে মুখ ফেরাতে পারে না। ১২২ থেকে ১৪১ নম্বর আয়াত তথা পনের ও ১৬তম রুকুতে এসব কথা বলা হয়েছে।
১৪২ থেকে ১৫২ নম্বর আয়াত- ১৭ ও ১৮তম রুকুতে কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশনা, কারণ ও যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা কেবলা পরিবর্তনের ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি কিংবা আল্লাহ কেন আগের কেবলা বদলে দিলেন প্রশ্ন করে- তারা আসলে নির্বোধ ছাড়া কিছুই নয়।
কারণ, পূর্ব-পশ্চিম প্রতিটি দিকই আল্লাহর জন্য। কেবলা পরিবর্তন করা হয়েছে কে আল্লাহর হুকুম মানে নবীর অনুসরণ করে আর কে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
১৯তম রুকু- ১৫৩ থেকে ১৬৩ নম্বর আয়াতে বিশ্বাসীদের গুণাবলী, তাদের জীবনে আসা পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। সাফা মারওয়া সায়ীর কথা বলা হয়েছে। সত্য গোপনকারীদের প্রতি কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহর নাজিল করা সত্য যে গোপন করে, তার ওপর আল্লাহ এবং সব ন্যায়বান ভালো মানুষের অভিশাপ ঝড়বে। তবে কেউ তাওবা করে সত্য মেনে নিলে, তার জন্য ক্ষমা এবং প্রতিদান হিসেবে অনাবিল সুন্দর জান্নাত তাকে দেয়া হবে।
২০ ও ২১তম রুকু- ১৬৪ থেকে ১৭৬ নম্বর আয়াতে মানুষের জন্য সাধারণ হেদায়াত বা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন, হালাল খাওয়া, হারাম বর্জন করা, সত্য গোপন না করা, এসব নির্দেশ না মানলে কঠিন শাস্তি রয়েছে ইত্যাদি। বিশতম রুকুর শুরুতে তাওহিদের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার সৃষ্টিরাজির উদাহরণ টেনেছেন।
তারপর বড় অবাক হয়ে আল্লাহ বলছেন, আল্লাহর অস্তিত্বের এত উজ্জল থেকে উজ্জলতম নির্দশন থাকা সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে কাল্পনিক ইলাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। বড়ই আশ্চর্য মানুষের চরিত্র!
২২তম রুকু- ১৭৭ থেক ১৮২ নম্বর আয়াতে ইমানের তাৎপর্য ও সৎকাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। কিসাসের বিধান এবং কিসাসের মাঝেই যে জীবন নিহিত রয়েছে- সে যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। আরো আলোচনা হয়েছে মৃত্যুপথযাত্রীর অসিয়তের বিধান সম্পর্কে।
২৩ ও ১৪তম রুকু- ১৮৩ থেকে ১৯৬ নম্বর আয়াতে রোজার বিধান, সফর ও মুসাফিরের রোজা, অসুস্থ ব্যক্তির রোজা, চাঁদ দেখা ও রমজান মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে- এসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। ১৯০ থেকে ১৯৬ নম্বর আয়াতে যুদ্ধের নির্দেশ ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে মুসলিম বাহিনীকে।
১৯৭ থেকে ২০৩ নম্বর আয়াত তথা পঁচিশতম রুকুর মাঝামাঝি পর্যন্ত হজের বিধিবিধান বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কখন হজের মৌসুম শুরু হয়? হজের সময় কী করা যাবে আর কী করা যাবে না এবং হজের শেষে করণীয় কী তা বলা হয়েছে এ রুকুতে।