নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে

0
310

খবর৭১ঃ ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করা প্রচার করা হয়েছে। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশের মাটিতে যেমনি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, তেমনি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ওই কিশোরীকে হত্যার ঘটনায় বিচার দাবিতে দশমদিনেও রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। ১৯ বছর বয়সী ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকাও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত জাহান রাফি গত ১০ এপ্রিল হাসপাতালে মারা যান।

এএফপির খবর বলছে, অনেকেই মনে করেন, নারী ও শিশুদের ওপর যৌন অপরাধের ঘটনায় পার পেয়ে যাওয়ার বিদ্যমান সংস্কৃতির কারণেই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পেরেছে। অনেক ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার নারী-শিশুরা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়ে আসছেন।

অপু নামের এক বিক্ষোভকারী এএফপিকে বলেন, দেশে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এমনকি নুসরাত রাফির মতো চরম সাহসী কিশোরী মেয়েটিও ন্যায়বিচার পেলেন না।

‘বরং অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। যদি পুলিশ ও প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করত, তবে তাকে রক্ষা করা যেত’

বার্তা সংস্থাটির খবর বলছে, মার্চের শেষ দিকে পুলিশের কাছে মামলা করতে গিয়েছিলেন নুসরাত রাফি। একটি ফা৥স হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় থানা পুলিশ প্রধান তার অভিযোগ নথিভুক্ত করলেও বড় কোনো ঘটনা বলে গুরুত্ব দেননি।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, আমাদের সিস্টেম পুরোপুরি ব্যর্থ। যখনই আমরা নারী-শিশুদের ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন হতে দেখি, তখন সব ক্ষমতাসীনরা অপরাধীদের রক্ষায় একজোট হয়ে যান।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার দুই সপ্তাহেরও কম সময় পর তিনি এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

খবরে বলা হয়, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে তার সাহসী উচ্চারণ, গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পাঁচদিন পর তার মৃত্যুসহ এর মধ্যে যা কিছু ঘটেছে, তা নিপীড়নের শিকার হওয়া নারী-শিশুদের জন্য অনিশ্চয়তার বিষয়টিই সামনে চলে এসেছে।

পরিবার ও সমাজের ভয়ে বহু নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা চেপে যান। কিন্তু নসুরাত ছিলেন সবার চেয়ে একেবারে আলাদা। তিনি প্রতিবাদ করেছেন। পরিবারের সহায়তায় তিনি পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন ন্যায়বিচার পেতে।

স্থানীয় থানায় গিয়ে তিনি নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। কিন্তু যন্ত্রণা ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার কথা ভেবে তাকে একটা নিরাপদ পরিবেশের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। কিন্তু তাকে সেই সুরক্ষা দেয়া হয়নি, বরং তিনি যখন নিপীড়নের বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন পুলিশ কর্মকর্তা তা নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিলেন।

ভিডিওতে নুসরাতকে বিপর্যস্ত দেখা গেছে। নিজের হাত দিয়ে তিনি মুখ ঢাকতে চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা গেছে, এটা তেমন কোনো ঘটনা না, বরং তার চেহারা থেকে হাত সরিয়ে নিতে বলছিলেন তিনি।

পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, হত্যাকারী নুসরাতের পুড়িয়ে হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নুসরাতকে উদ্ধারের পর তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। মৃত্যুর আগে তিনি সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে গেছেন।

এবিসি নিউজের খবর বলছে, নুসরাত তার পরিবারকে বলেছেন, গত ৬ এপ্রিল তাকে মাদ্রাসার ছাদে যেতে প্রলুব্ধ করা হয়েছে। এরপর বোরকা পড়া পাঁচ ব্যক্তি তাকে মামলা তুলে নিতে বলেন।

কিন্তু তিনি মামলা প্রত্যাহারে অস্বীকার করলে তার হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে নুসরাত সেই কথা তার ভাইকে বলেন। তার ভাই মোবাইলে সেই সাক্ষ্য রেকর্ড করেন।

শুক্রবারের বিক্ষোভে আলিসা প্রধান নামের এক মডেল বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমাদের কন্যাশিশুদের নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। আমরা সব ধরনের নারী নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here