খবর৭১ঃ বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে ছন্দপতন হলো। স্বামীর শেষ আদেশ মেনে ছাদে উঠে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টার কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে। কর্মস্থল ৯ম তলা থেকে ১৮ তলার সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর সিঁড়িতেই লুটিয়ে পড়ে তার দেহ। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ঠাঁই হয় তার। তবে পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছাড়পত্র মেলে বৃষ্টির।
ভোররাতে মরদেহ বুঝে নেওয়ার পর শুক্রবার সকাল ৭টায় রওনা হয়ে দুপুরে যশোর এসে পৌঁছায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। জানাজা শেষে বিকালে যশোরের কারবালা গোরস্থানে বৃষ্টির দাফন হয়।
নিহত বৃষ্টির দেবর কাজী নিপুন বলেন, বেলা পৌনে ১২টায় ভাইকে ফোন দিয়ে আগুন লাগার কথা জানান ভাবি। এসময় ভাই তার স্ত্রীকে ছাদে উঠে অবস্থান নিতে বলেন। সেই অনুযায়ী তিনি সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেও শুরু করেন। ১৮ তলার সিঁড়িতে মরদেহের সঙ্গে পাওয়া ব্যাগে মোবাইল থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা স্বজনদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মর্গে জামাকাপড় ও স্যান্ডেল দেখে আত্মীয় ও সহকর্মীরা লাশ শনাক্ত করেন। তিনি আরও জানান, চেহারা চেনা না গেলেও শরীর পোড়েনি। আগুনে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়।
রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে নিহত যশোরের মেয়ের পুরো নাম শেখ জারিন তাসমিম বৃষ্টি (২৫)। তিনি ছিলেন শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাকোত্তর ডিগ্রি নেন। যোগ দেন বনানীর এফআর টাওয়ারে থাকা ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগে।
২০১৬ সালে ২৬ মার্চ সহপাঠী যশোরের পুরাতন কসবা এলাকার কাজী সাদ নূরের সঙ্গে বিয়ে হয় বৃষ্টির। কাজী সাদ নূর ঢাকার রেডিসন হোটেলে কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। চাকরির সুবাদে ঢাকার খিলক্ষেতে বসবাস করতেন তারা। মাত্র দুদিন আগে ২৬ মার্চ তৃতীয় বিয়ে বার্ষিকী উদযাপন করেছিলেন তারা।
বৃষ্টি তার ফেসবুকে স্বামীর সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে হ্যাশট্যাগে লিখেছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এক সঙ্গে ১০৯৫ দিন, শুভ বিবাহবার্ষিকী, ২৬ মার্চ মি ও মিসেস নূর’। কিন্তু সেই আনন্দঘন মুহূর্ত স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।
দুই বোনের মধ্যে বৃষ্টি ছিলেন ছোট। চাকরির কারণে বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়া কম ছিল। তবে বড় বোনের সঙ্গে সমন্বয় করে ঈদের ছুটিতে যশোরে বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে আসতেন তারা।
বৃষ্টির বাবা মটর পার্টস ব্যবসায়ী শেখ মুজাহিদুল ইসলাম খবর পেয়ে বৃহস্পতিবারই মেয়ের মরদেহ আনতে ঢাকায় যান। দিন তিনেক আগে তার মা গিয়েছিলেন ঢাকায়। লাশের বোঝা কাঁধে নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বৃষ্টির শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী, দেবর পৌঁছান যশোর শহরের বেজপাড়া মেইন রোডের বাড়িতে। সেখানকার সুনশান বাড়ির নিস্তব্ধতাকে গুড়িয়ে দেয় স্বজনদের আহাজারি।