‘রিকশায় আসছি’ জানালেও মেয়ের মরদেহ এসেছে বাবার কাছে

0
382

খবর৭১ঃবাবাকে মেয়ে জানিয়েছিলো রিকশায় বান্ধবীদের সঙ্গে বাসায় ফিরছি, দ্রুত পৌঁছে যাবো। কিন্তু আসার পথে চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর নানা ভোগান্তি শেষে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে বাবা ফিরে পেলেন মেয়ের মরদেহ।

দুই বান্ধবী ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টি ও রেহনুমা তারান্নুম দোলা রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে অগ্নিকাণ্ডের দিন রিকশায় করে শিল্পকলা একাডেমি থেকে ফিরছিলেন তারা দুইজন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সংগ্রহ করা স্বজনদের ডিএনএ নমুনা অনুসারে, গত ৬ মার্চ হস্তান্তর করা হয় বৃষ্টির মরদেহ। একই পদ্ধতিতে এর ছয়দিন পর একই রিকশায় থাকা বান্ধবী দোলার মরদেহ হস্তান্তর করা হলো স্বজনদের কাছে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে দোলার মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হয়। দোলার মরদেহ গ্রহণ করতে মর্গে আসেন দোলার বাবা দলিলুর রহমান।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের দিন শিল্পকলা একাডেমি থেকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতি শেষে বাসায় ফিরছিলেন দুই বান্ধবী। ওয়াহেদ ম্যানশনের কিছু আগে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখার সিসিটিভি ফুটেজে তাদের দেখেছেন এই দুই পরিবারের স্বজনেরা। তার আগ পর্যন্ত তারা অনিশ্চিত ছিলেন মেয়ে দু’টি কোথায় নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু এই সুযোগে আবার মেয়ের খোঁজ দেওয়ার কথা বলে দুই পরিবারের কাছ থেকে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা। এ বিষয়ে লালবাগ থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছে তাদের পরিবার।

সব ভোগান্তি শেষে মঙ্গলবার বাবার কাঁধে উঠেছে মেয়ের মরদেহ। এ বিষয়ে দোলার বাবা দলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাবার কাঁধে যখন মেয়ের মরদেহ থাকে তখন সে পরিস্থিতি কাউকে বলে বোঝানো যায় না। তবু সান্ত্বনা অন্তত মরদেহটা ফিরে পাচ্ছি। ঘটনার দিন দোলা রাত ৯টা ৩০ মিনিটে শিল্পকলার অনুষ্ঠান শেষ করে বাসার উদ্দেশে রওনা দেয়। আমার মেয়ের বাসায় আসতে কখনও দেরি হয় না। আমি ৯টা ৪০ মিনিটে দোলাকে ফোন দিলে আমাকে বলে বান্ধবীরা সবাই মিলে আছি, রিকশায় আসছি। দ্রুত আজিমপুর চলে আসবো। কিন্তু আর এলো না। এর মধ্যে আবার আমাদের দুই পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। মামলাও করেছি। আমরা ঘটনাস্থলের কাছে ব্র্যাক ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজে মেয়েকে দেখে শিওর হয়েছিলাম এই দুর্ঘটনার স্বীকার আমার মেয়েও। পরে ডিএনএ নমুনা দিয়ে এখন মরদেহ নিতে এসেছি।

শৈশবকাল থেকেই বৃষ্টি ও দোলার বন্ধুত্ব ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিকে একসঙ্গে পড়ার পর বৃষ্টি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ভর্তি হন। আর দোলা ভর্তি হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের আইন বিভাগে। দু’জনেই যুক্ত ছিলেন আবৃত্তি সংগঠনে। পুরান ঢাকার আমতলীতে দোলার বাসা। বৃষ্টির বাসা পোস্তায়। ২০ ফেব্রুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠান শেষে দু’জনে বাড়ির পথ ধরেছিলেন একইসঙ্গে।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here