নিরপেক্ষ সরকার ও ইসির অধীনে পুনর্নির্বাচন দাবি বিএনপির

0
362

খবর৭১ঃনিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসার প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে দলের পক্ষে এই দাবি জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচনই হয়নি। আমরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের সঙ্গে ফলও প্রত্যাখ্যান করেছি। তখনই আমরা বলেছিলাম, একটি নিরপেক্ষ সরকার ও ইসির অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে। আজকে আমরা আবার একই দাবির পুনরাবৃত্তি করছি।

‘আমরা বলতে বলতে চাই—অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে, এই সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেখানে জনগণ যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের রায় দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে’-যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

একাদশ সংসদের অধিবেশনকে অবৈধ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটা সংসদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।

দখলদার সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর একটি ভোট ডাকাতির ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইনশৃংখলা বাহিনী সম্পূর্ণ ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে দখলদারি সংসদ ও দখলদারি সরকার বসিয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ‘মিথ্যা মামলা’ দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের আগে থেকেই জনগণ যেন ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে, ভীতি সৃষ্টি ও অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।আমরা এসব মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, প্রায় এক বছর আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একইভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।আমরা আজকের কর্মসূচি থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের সাজা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের অধিকার, ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য, ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার জন্য—ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। সংসদকে বাতিল করে একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সরকার গঠনের আহবান জানাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।

দেশে পচাত্তরের মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭৫ সালে তারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধংস করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো। ঠিক একই কায়দায় আজকে তারা জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একদলীয় দখলদারিত্বের সংসদ গঠন করেছে।

গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধংস করে দিয়ে এই রাষ্ট্রকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার সব ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

মানববন্ধনে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। এই ভুয়া ভোটের সংসদের কোনো বৈধতা নেই।

এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বক্তারা বলেন, আর কোনো নির্বাচন না গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, অনেকে বলে থাকেন- বিএনপি কেন নির্বাচনে যায় না। এখন তারাও দেখেছেন- শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাই বলব আর কোনো নির্বাচন নয়, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করুন।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, বিলকিস জাহান শিরিন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮ আসনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে। আজ নতুন সরকারের প্রথম অধিবেশন বসছে।বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে, শপথ নেয়নি ধানের শীষের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here