উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: আয় রে আয় টিয়ে নায়ে ভরা দিয়ে না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে। তা দেখে দেখে ভোঁদর নাচে ওরে ভোঁদর ফিরে চা। খোকার নাচন দেখে যা সেই খরস্রোতা চিত্রা নদী আর নেই, শহরের পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা এই নদীর দু’কূল চিত্র বা ছবির মতো সাজানো আর সুন্দর ছিলো বলেই এই নদীর নাম হয়েছে এই চিত্রা। চিত্রা নদীর নাম নিয়ে এমন জনশ্রুতি শোনা যায় মানুষের মুখে মুখে। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, ১৯৪৭ সালের ভারতভাগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত তানভীর মোকাম্মেলের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’র সেই চিত্রাও আর নেই। তৌকির আহমেদ আর আফসানা মিমির মত আজ আর কেউ হয়তো সেই নদীর পারে আড্ডা দেয় না। সময়ের ফেরে নদীর পারে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। দূষণের করাল গ্রাস আর স্রোতের গতিপথে বাধা দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করে স্থানে স্থানে নৌকা চলাচলের মত নাব্যতাও হারিয়েছে চিত্রা। কিন্তু সময়ের সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে চিত্রা পাড়ের সংগ্রামী ভোঁদর জেলে! চিত্রা পাড়ের সংগ্রামী জেলেদের ভোঁদর; চিত্রার পাড়ের নড়াইল জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ভোগরা, গোয়ালবাড়ি, রতডাঙ্গা, পঙ্কবিলাস আর গোয়ালবাড়ির জেলেরা আজও ভোঁদর ব্যবহার করে মাছ ধরেন। প্রাকৃতিকভাবে নড়াইল ছাড়াও খুলনা, সিলেট এবং পাবর্ত্য অ লে ভোঁদর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মোট ৩ প্রজাতির ভোঁদর পাওয়া যায়, যাদের বেশীরভাগই বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু কেন? ভোঁদরের প্রিয় খাদ্য মাছ। তবে মাছ ছাড়াও বিভিন্ন জলজ প্রাণী শিকারে পটু ভোঁদর। বসবাস জলাশয়ের পাশে বনজঙ্গলে। জলাশয়ের গতিপথ পরিবর্তন, বনজঙ্গল ধ্বংস করে নদীর পারে বসতি নির্মাণ, কারেন্ট জালে মাছ শিকারের সময় ধরা পড়া ভোঁদড় মেরে ফেলার ফলে ভোঁদরের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে আসছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রাণীটিকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করা হলেও স্থানীয় মানুষের নানা কুসংস্কার আর অসচেতনতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাণীটি। পুকুরের মাছ খেয়ে ফেলবে এই ভয়ে অনেকেই লোকালয়ের আশেপাশের ভোঁদর মেরে ফেলতে উদ্যত হোন। অনেক চক্র আবার ভোঁদরের চামড়ার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ের জেলেরা শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে পালন করে যাচ্ছেন ভোঁদর। বন্যপ্রাণী আইনে ভোঁদর একটি সংরক্ষিত প্রাণী; ছবিসূত্র: নফ২৪ষরাব.পড়স মূলত পোষা ভোঁদরের সাহায্যে তারা মাছ শিকার করেন। পাশাপাশি ভোঁদরের মত একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে সংরক্ষণেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু ভোঁদর ব্যবহার করে মাছ ধরা হয় কীভাবে? মোটামুটি দু’শ বছরের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের নড়াইল এবং সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় মাছ ধরার কাজে ভোঁদর ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে তিনটি প্রজাতির মধ্যে নামের প্রজাতিটি মাছ শিকারে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় প্রজাতির ভোঁদরগুলো প্রভুভক্ত এই স্তন্যপায়ী প্রানী দেখতে অনেকটা বিড়ালের মত। তবে এই প্রাণীকে মাছ ধরতে নামানোর আগে প্রশিক্ষণ দিয়ে নেওয়া হয়। প্রশিক্ষিত ভোঁদর জাল থেকে মাছ খায় না। বরং মাছের ঝাঁককে তাড়িয়ে জালের দিকে নিয়ে আসে।পুকুর, বিল কিংবা খরস্রোতা নদীতে দক্ষভাবে মাছ ধরতে পারে। ভোঁদর ব্যবহার করে মাছ শিকার নড়াইল, খুলনা আর সুন্দরবন এলাকাতেই সীমাবদ্ধ; অক্টোবর থেকে জানুয়ারী, এই সময়ে নড়াইল, খুলনা সহ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জেলেরা ভোঁদর ব্যবহার করে নদী থেকে মাছ ধরেন। মাছ ধরার জন্য জেলেরা সাধারণত দলে ভাগ হয়ে নেন। প্রতিটি দলে তিন থেকে পাঁচজন জেলে, একটি জাল এবং কম পক্ষে তিনটি ভোঁদর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রতিটি দলে দুটি পুর্ণবয়স্ক এবং একটি কমবয়সী ভোঁদর থাকে। ভোঁদর ব্যবহার করে মাছ ধরার মূল কৌশল; প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বয়স্ক ভোঁদর দুটিকে সাধারণত খুঁটির সাথে দড়িতে বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। কমবয়সী ভোঁদরটিকে মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে মূলত একটি ত্রিভুজাকৃতি ক্ষেত্র তৈরী করা হয়। বয়স্ক ভোঁদর দুটিকে দড়ির মাধ্যমে সময়ে সময়ে টান দিয়ে তাড়া দেওয়া হয়, ফলে এরা মাছের ঝাঁককে জালের দিকে তাড়া করে। মাছ ধরা শেষ হওয়ার পরে জাল গুটিয়ে নেওয়া হয়, পাশাপাশি দড়ি ধরে ভোঁদরগুলোকেও নৌকায় নিয়ে আসা হয়। শিক্ষানবিশ ছোট ভোঁদরটিকেও টোপ দিয়ে তুলে আনা হয়। এভাবে শিক্ষানবিশ ভোঁদরটিকে বেশ কয়েকবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মাছ ধরা শেষ হওয়ার পরে তুলে আনা হয় ভোঁদরকে মাছ ধরে আনার পরে পুরষ্কার হিসেবে ছোট ছোট মাছ ভোঁদরদের দিয়ে দেওয়া হয়। মূলত এর মাধ্যমেই ভোঁদরগুলো মানুষের প্রতি সহনশীল হয়ে উঠে। সহজ কথায়, এভাবেই বন্য ভোঁদর ধীরে ধীরে পোষ মানানো হয়। পুরষ্কার হিসেবে ছোটমাছ যায় ভোঁদরের পেটে পরিবারের সদস্য যখন ভোঁদর নড়াইলের অনেক জেলে পরিবারের নিয়মিত সদস্য প্রাণীটি। জলাশয়গুলোতে মাছ কমে আসার ফলে বংশানুক্রমে ভোঁদর পালন করে আসা জেলে পরিবারগুলোতে এখন বাজছে বিচ্ছেদের সুর। জলাশয়গুলোতে কমে আসছে মাছ; অনেকেই পেশা বদলাচ্ছেন। অনেকেই পরিবার ভোঁদর পালনের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে না পেরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীর চামড়ার মূল্য অনেক বেশী হওয়ায় পাচারকারী চক্র বেশ সজাগ দৃষ্টি রাখে জেলেদের উপর। জেলেদের অনেকেই তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করে দেন ভোঁদর। সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যুর উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় জেলেদের অনেকেই মাছ ধরে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। জেলেদের পেশা বদলের সাথে সাথে এই প্রাণীগুলোর বিলুপ্তির আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে। প্রজনন একেকটি ভোঁদর বেঁচে থাকে প্রায় ২০ বছর। দেখতে অনেকটা বিড়ালের মত এই প্রাণী ওজনে ৩ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী ভোঁদর প্রতি বছরে একবার তিন থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। বেশ দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী হয় একেকটি ভোঁদর; সংরক্ষণ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি আইন ২০১২ সালে পাস হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, “এই আইনটি পাস হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে কোনো ব্যক্তির কাছে সংগৃহীত ও সংরক্ষিত কোনো বন্য প্রাণী থাকলে সেগুলো নিবন্ধনের আওতাভুক্ত করতে হবে। ভোঁদর সংরক্ষণে জোর উদ্যোগ নেওয়ার সময় এখনই কিন্তু সেই আইনে প্রাণী সংরক্ষণের উপর তেমন জোর দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অ লের জেলেদের বেশীরভাগই এই নিবন্ধন কার্যক্রমের সাথে মোটেই পরিচিত না হওয়ায় এই এলাকায় কী পরিমাণ ভোঁদর আছে তার কোনো রেকর্ডও নেই। তাই এই বন্যপ্রাণীটি অবহেলা আর অনাদরেই থকে যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং গবেষক ভোঁদরের প্রজনন, বিস্তার এবং সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, সাজেদা বেগম এবং মোহাম্মদ কামরুল হাসানের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে কীভাবে ভোঁদর দিয়ে মাছ শিকার করা জেলেরা বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীর সংরক্ষণে নীরব ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাদের গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে জেলেদের পোষা ভোঁদরগুলো বন্য পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। সুতরাং যদি কৃত্রিমভাবে প্রজননকৃত ভোঁদরের একটি অংশকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে একদিকে যেমন ভোঁদরটিকে তার যথাযথ প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে ভোঁদর পালন এবং এটি ব্যবহার করে মাছ ধরার মাধ্যমে একে তার বন্য পরিবেশের বাইরেও সংরক্ষণ (বী-ংরঃঁ পড়হংবৎাধঃরড়হ) করা সম্ভব হবে। আর তা যদি এখনই সম্ভব না হয়, তাহলে হয়তো রবীন্দ্রনাথের ছেলেভোলানো ছড়ার সেই ভোঁদর প্রাণীটির নাচন নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাবে। আয় রে আয় টিয়ে নায়ে ভরা দিয়ে না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে। তা দেখে দেখে ভোঁদর নাচে ওরে ভোঁদর ফিরে চা। খোকার নাচন দেখে যা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কোনো নৈরাজ্য ও সহিংসতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নড়াইলের পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন পিপিএম
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কোনো নৈরাজ্য ও সহিংসতা হলে তা কঠোর ও কঠিনভাবে মোকাবেলার জন্য নড়াইলের পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন (পিপিএ), পুলিশকে নির্দেশ দেন। নির্বাচন ঘিরে কোনো সহিংসতা বরদাশত করবে না নড়াইলের পুলিশ। এ ছাড়া ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন-সন্ত্রাস যাতে সৃষ্টি না হয়- সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়। এদিকে শিগগিরই নড়াইলের অবৈধ মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সুপার। অতীতে দুর্বৃত্তরা নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেই নাশকতার ঘটনা ঘটায়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই সন্নিকটে। আর এ কারণে নড়াইলে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পুলিশ সুপার
। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম এর সাথে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ শরফুউদ্দিন, নড়াইল সদর থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইলিয়াস হোসেন, নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আশিকুর রহমান, নড়াইল জেলা বিশেষ শাখার ডিআইও-১। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, সর্বদা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে পুলিশ। পুলিশ নির্বাচনে কারও পক্ষপাতিত্ব করে না। সব জায়গায় শৃঙ্খলা বজায় রক্ষার্থে এবার নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়াও নির্বাচনকালীন সময়ে ভদ্রবেশী দুষ্কৃতিকারীদের ধরতে সাদা পোশাকেও পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া গ-গোলের সম্ভাবনা আছে এমন কেন্দ্রগুলোতে থাকবে বাড়তি সতর্কতা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে এ্যাকশান। এক্ষেত্রে কারও কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। এক কথায় কেউ নির্বাচন বানচাল করতে চাইলে পুলিশ তাকে কঠোর হস্তে দমন করবে। পুলিশের মধ্যে নির্বাচনে গ্রুপিং থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, আমার ডিপার্টমেন্টে কেউ কোনো অপরাধ করে পার পায় না। সম্প্রতি ইয়াবাসহ এসআই মানিক গ্রেফতার, কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শমসেরকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো পুলিশ যদি নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করার চেষ্টা করে তাহলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমানে পুলিশ সুপারের কাছে বিবিধ বিষয়ে কি পরিমাণ অভিযোগ আসছে এবং তিনি সে সকল অভিযোগ কিভাবে নিষ্পত্তি করছেন জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, প্রতিদিন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনেক অভিযোগ আসতেই থাকে। কিন্তু কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়ার পূর্বে তার প্রাথমিক তদন্ত করি। প্রাথমিক তদন্তে যদি অভিযোগের সত্যতা দেখা দেয় তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করি। কারণে অনেকে এই অভিযোগকে পুঁজি করে নিরীহ লোকদের ফাঁসিয়ে থাকে। এছাড়াও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে নড়াইলের বেশ কয়েকটি গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিবাদ নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার জানান, মানুষ একটি সামাজিক জীব। আর মানুষ যদি নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে মারামারি, হানাহানি করে তাহলে তাদেরকে সভ্য সমাজের বাসিন্দা বলা যায় না। এজন্য আমার কর্ম এলাকা নড়াইলের মানুষের মধ্যে যাতে সামাজিক বন্ধন ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এলক্ষ্যে আমি স্বউদ্যোগে এ সকল বিরোধ মিমাংসা করে থাকি। এছাড়াও পুলিশের মৎস্য অ্যাকুরিয়াম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যে জায়গায়টিতে পুলিশ মৎস্য অ্যাকুরিয়াম করেছি ওটা আগে মানুষের কাছে বিরক্তিকর একটি জায়গা ছিল। এছাড়াও ওই নালা থেকে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতো যা পথচারীদের কষ্টের কারণ ছিল। এ বিষয়টি অনুধাবন করে আমি ওই নালাটি পরিষ্কার করিয়ে সেখানে মাছ চাষ শুরু করেছি। সেই সাথে ওখানে বিনোদনের সুবিধার্থে পানির ফোয়ারা এবং বসার স্থানও তৈরি করেছি, যা নড়াইলবাসী সাদরে গ্রহণ করেছে। মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস কি নড়াইল থেকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে কি না নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়ের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস সামাজিক ব্যধি। এদেরকে খুব সহজেই সমাজ থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব নয়। তবে নড়াইল জেলা পুলিশ নিয়মিত অভিযান ও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নড়াইল জেলা প্রায় মাদকশূন্য হয়ে পড়েছে। তবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাইরের জেলা থেকে কিছু মাদকব্যবসায়ী নড়াইলে মাদক প্রবেশের চেষ্টা করে থাকে। আমাদের গোয়েন্দা শাখাসহ বিভিন্ন টিম সর্বদা সতর্ক থাকায় আমরা এরূপ বেশ কয়েকটি মাদকের চালান এবং মাদকব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বেশি বেশি মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো ও পুলিশকে সহায়তা করার জন্য তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধও করেন। গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যাসহ ক্লাবের সকল সদস্যবৃন্দ ### ছবি সংযুক্ত
জেলার পুলিশ সুপার, বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের আগে এ বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের করণীয় নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানান।
বৈঠকে আইজিপি বলেছেন, সবার সহযোগিতায় আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হব। কাউকে নির্বাচন ঘিরে অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন আইজিপি।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া লাইসেন্স করা একজনের অস্ত্র যাতে অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শিগগিরই জোরালোভাবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানোর কথা বলা হয়।
এ ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে একটি চক্র সারাদেশে নৈরাজ্য চালিয়েছে। এবার যাতে এ ধরনের কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে আগে থেকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই সময়ের ঘটনায় যেসব আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি তাদের সমন্বিত তালিকা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। এ ছাড়া নতুনভাবে কেউ ষড়যন্ত্র করছে কি-না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ যাতে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে সে ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। দূরপাল্লার সব গাড়িতে স্পিড কন্ট্রোলার বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়, যাতে কোনো গাড়ি ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চললে তা ধরা পড়ার ব্যবস্থা থাকে। এরই মধ্যে এনা পরিবহনের গাড়িতে এ ধরনের স্পিড কন্ট্রোলার বসানোর উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য আইন ভঙ্গ করলেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। সীমান্ত পথে যাতে কোনো চোরাই মোটরসাইকেল দেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে পুলিশ।
এদিকে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভুঁইফোঁড় অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিংয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে যাতে কোনো গোষ্ঠী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সুপারদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে জঙ্গিরা যাতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। তাদের ব্যাপারে নিরবচ্ছিন্ন দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়। এ ছাড়া মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে। পুলিশের পেশাদারি অভিযানের কারণেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বৈঠকে বলা হয়, মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সরকারের। মাদক ব্যবসায়ী যতই শক্তিশালী হোক তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এ ছাড়া আসন্ন আশুরা ও দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেন আইজিপি।
বৈঠকে অপরাধ পর্যালোচনায় দেখা যায়- চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারাদেশে এক লাখ ১৪ হাজার ১২৪টি মামলা রুজু হয়েছে। এ সময়ে মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানকৃত পণ্য উদ্ধারের ঘটনায় মামলার সংখ্যাও বেড়েছে। ডাকাতি, দস্যুতা, দ্রুত বিচার, দাঙ্গা, নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, সিঁধেল চুরি, চুরি, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা সংখ্যা কমেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে ৭১৪টি। এর মধ্যে পুলিশ ৫৭৩টি গাড়ি উদ্ধার করেছে। এ সময়ে মাদক আইনে মামলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (্প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, পুলিশ একাডেমি সারদার প্রিন্সিপ্যাল মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান, শিল্পা ল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আবদুস সালাম, এপিবিএনের অতিরিক্ত আইজিপি সিদ্দিকুর রহমান, রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আবুল কাশেম, ডিএমপির পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, এসবির অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলামসহ পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।