লালমনিরহাট শিবরাম স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতের লেখায় আছে যাদুর ছোঁয়া

0
587

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ রোববার ঘড়ির কাটায় রাত ঠিক ৮টা বাজে। লালমনিরহাট শহরের প্রান কেন্দ্র মিশন মোড় দিয়ে এয়ারপোর্ট রোডস্থ হাতের বামে চোখ পড়ার মত ধাঁ-ধাঁ-লো একটি সাইনবোর্ড। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে সাইন বোর্ডটিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা “শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল”, লালমনিরহাট। রাতের আলোক সজ্জ্বায় সজ্জ্বিত ঝকঝকে শোভা পাচ্ছে লেখাটি। রাত ৮টা পেরিয়ে সাইনবোর্ডের নিচ দিয়ে স্কুলটির দিকে তাকালে দেখা যায়, স্কুলটির প্রবেশ গেটে তখনোও খোলা রয়েছে। একটু খানি যেতে ছাত্র/ছাত্রীদের কোলাহলের শব্দ কানে পড়ে। স্কুলটিতে প্রবেশ করার পর দেখা হয় পরিচালক রাশেদুল ইসলাম রাশেদের সাথে। রাশেদের সাথে কথা বলে যতটুকু জানা যায়, বর্তমান স্কুলটিতে সাড়ে ৩শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ১১ধরনের পাঠদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার নিয়ে শিক্ষা পদ্ধতি প্রশংসিত স্কুলটির পরিপাটি পরিবেশ, সুশৃঙ্খল পরিচালন, শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় শিক্ষণপদ্ধতি ও শিক্ষা-উপকরণ, শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রমের অতিরিক্ত প্রতিভা বিকাশের অনুকুল সাংস্কৃতিক-সামাজিক কার্যক্রম ইত্যাদির জন্য পুরস্কারই পেয়েছন। দেশের অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিবরাম স্কুলটি নানা দিক থেকে ব্যতিক্রমী।
স্কুলটির গোড়ার কথা : পরিচালক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (৩৫) নামক একজন সৃজনশীল যুবক। টগবগে এই যুবকের চেষ্টায় অর্থ, মেধা, সততা, শ্রম দিয়ে তিনি পরিচালক হিসেবে আত্মবিশ্বাসে স্কুলটি নতুনরূপে-“শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল” লালমনিরহাটের মাটিতে পর্দাপন করে আজ সাফল্যের শিখরে পা রেখেছে। ২০১৫ সালে প্রথম দিকে লালমনিরহাটের হাড়ীভাঙ্গায় “শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল” টি গড়ে উঠে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২ বছরের ব্যবধানে ২০১৭ইং সালে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল রোডস্থ আপনপাড়া “শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল” এর আরও একটি শাখা খোলা হয়। একজন দক্ষ পরিচালক ও প্রাক্তন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে।
স্কুল শাখা ২টি যেমন : শিশুর পাঠ্যভাসে মুখরিত স্কুল চত্বর। ছাত্র/ছাত্রীদের শ্রেণী কক্ষে বসিয়ে গ্রুপভিত্তিক পাঠদান। অত্যাধুনিক খেলনা উপকরণ দ্বারা খেলার ছলে শিক্ষার্থীদের মন-জয় করে দুর্বল ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে বন্ধুত্ব ও বিনোদন দিয়ে সহজ সরল শব্দ মালা গেঁথে সুন্দর ঝকঝকে এবং স্পষ্ট হাতের লেখা ইংরেজিতে কথা বলা উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুলটি একটি শিক্ষার বাতিঘর, শিক্ষার্থীদের হাতের লেখায় আছে যাদুর ছোঁয়া। আলো ছায়ার ব্যবহারে এসব শিশুদের আনন্দ-সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যদিয়ে শুরু হয় পাঠদান শেষ হয় খেলাধুলা দিয়ে। আসন্ন ২০১৯ সালের সব শাখায় স্কুলটিতে ভর্তি চলছে।
আকর্ষণীয় শিক্ষণ পদ্ধতি : শিশুরা ভীষণ মজা পায় ‘শিক্ষা উপকরণ’ বাঘ, ভল্লুক, হরিণ, পাখি, গাড়ি-ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর মডেল ও নানা ধরনের খেলনা। আছে, দেশ-বিদেশের বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক-বিজ্ঞানী-রাষ্ট্রনেতা প্রমুখের ছবি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র বা সুকুমার সেনকে শিশুরা চিনে নিচ্ছে এখান থেকেই। সভা, ইনডোর খেলা, চিত্রাঙ্কন, কোরান তেলোওয়াত, জাতীয় সঙ্গীত, শ্রেণিকক্ষে জ্ঞান, শৃঙ্খলা, আচার-আচারণ, ধর্মীয় শিক্ষা, কবিতা আবৃত্তি, শরীর-চর্চা, নৃত্য, বাদ্যযন্ত্র, কম্পিউটার শিক্ষা, গান, কবিতা, ছড়া, গল্প, বিতর্ক সভা, অভিনয়, চিত্রাঙ্কনসহ পিটি প্যারেড সবেই শেখানো হয় খেলার তালে তালে। গল্প বলে শিশুদের নানা বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম : আবাসিক/অনাবাসিক/ডে-কেয়ার পেগ্রুপ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম চলছে। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫০জন। আসন সংখ্যা সীমিত প্রতিটি শাখায় ১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্লে থেকে প্রথম শ্রেণী সকাল ৮.৪৫মিঃ থেকে ১১.৪৫ পর্যন্ত। দ্বিতীয় শ্রেণী সকাল ৮.৪৫মিঃ থেকে ১২ টাঃ পর্যন্ত, বিকাল ৩টাঃ থেকে ৫.৩০টাঃ পর্যন্ত। তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণী সকাল ৮.৪৫মিঃ থেকে ১২ টাঃ পর্যন্ত। বিকাল ৩টাঃ থেকে রাত ৮টাঃ পর্যন্ত। প ম থেকে অষ্টম শ্রেণী সকাল ৮.৪৫মিঃ থেকে দুপুর ১টাঃ পর্যন্ত। বিকাল ৩টাঃ থেকে রাত ৮.৩০ পর্যন্ত পাঠদান চলছে। স্কুলে পাঠদান এবং ডে-কেয়ার সন্ধ্যা থেকে রাত ৮.৩০মিঃ পর্যন্ত অতিরিক্ত পাঠদানে আলাদা কোন ফি নেই। ফলে “শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল” এর শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট বা কোচিং অন্য কোথাও পড়তে হয় না। ১ম, ২য় ও বার্ষিক পরীক্ষার পাশাপাশি সাপ্তাহিক/মাসিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের রাফখাতা, হ্যান্ডনোটের মাধ্যমে পড়ালেখার মান যাচাইসহ পরীক্ষার খাতায় অভিভাবকের মন্তব্য নিশ্চিত করা হয়।
২০০৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৫জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে ৩জন এ+ ও ২জন এ এবং ৩জন বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ২০১৭ সালে ১১জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯জন এ+ ও ২জন এ এবং ৪জন বৃত্তিপ্রাপ্ত হন।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোঃ রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল’টির শ্রেণিবিন্যাস ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমান স্কুলে আবাসিক সু-ব্যবস্থার পাশাপাশি ডে-কেয়ার সুনামের সাথে পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্কুলটির সার্বিক কর্মপরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ও সাফল্যের ধারাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষক-অভিভাবকসহ স্থানীয় সচেতন মহলের সহযোগীতা কামনা করছি। কারণ হল, এই স্কুল থেকে বেরোনো ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ক্যাডেটসহ দেশের নামী দামী স্কুল ও কলেজে অনায়াসে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here