চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় বাসে না চড়ে সহোদরের ভ্যানে চড়ে হাসপাতালে যাওয়ার অপরাধে ৮ মাসের অন্তঃসত্বা এক নারীকে মারপিট করেছে বাস চালক ও তার সহকারী। বুধবার দুপুরে শহরের কপোতাক্ষ ব্রিজের উপর এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুরে মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা গ্রামের শফিকুল ইসলামের কন্যা ৮ মাসের অন্তঃসত্বা শাহানাজ বেগম, শাহানাজের মা ফেরদৌসি বেগম ও খালা আম্মা পারুল বেগম চৌগাছা হাসপাতালের উদ্যেশে বাড়ি থেকে রওনা হয়। তারা সকলেই শাহানাজের ভাই ফিরোজ হোসেনের ভ্যানে চড়ে আসছিলেন। পথিমধ্যে পুড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে পৌছালে সেখানে অবস্থানরত যশোর-ব- ১১-০১৪০ নম্বর যাত্রীবাহি বাসের চালক শাহাজান আলী ও তার সহকারীরা ভ্যানের গতিরোধ করে বলে অবৈধ যানবাহনে চড়ে যাওয়া যাবে না, বাসে যেতে হবে। ভ্যানে গর্ভবতী রোগী রয়েছে, আমাদের দ্রুত হাসপাতালে যেত হবে এই বলে তারা ওই যাত্রা রক্ষা পাই। অন্তঃসত্বা নারীর বহনকারী ভ্যানটি চৌগাছা শহরের কপোতাক্ষ ব্রিজের উপর পৌছালে পেছন থেকে ওই বাসটি ব্রিজের ওপরে ভ্যানটিকে পুনরায় গতিরোধ করে। বাস চালক শাহাজান আলী ও সুপারভাইজার বাস থেকে নেমে ভ্যানের চালক ফিরোজকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এসময় অন্তঃসত্বা শাহানাজ তাকে মারতে নিশেধ করলে ড্রাইভার শাহাজান ওই নারীকেও চড়-থাপ্পড় মারে। তাদের মারপিটে সকলেই ভ্যানের উপর চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের মারপিটের কবল থেকে উদ্ধার করে। গর্ভবতীকে মারপিটের ঘটনায় স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে পড়লে চালক ও তার সহকারীরা বাসটি নিয়ে দ্রুত চলে যায়। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুল আলমকে জানালে তিনি থানায় অভিযোগ করার কথা বলেন। পরবর্তীতে তারা সংশ্লিষ্ঠ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
গর্ভবতী নারীকে মারপিট করলে কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত কুমার বাগচী বলেন সমস্যা তো হবেই। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত সাইক্লোজিক্যাল ট্রমায় গর্ভের শিশুর মানষিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে চালক শাহাজান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে রাস্তায় চালাচ্ছি। তারা বাসে না চড়ে ভ্যানে চড়ার কারনে তাদের মারপিট করেছি। আপনি যাত্রীকে মারতে পারেন কিনা প্রশ্নে শাহাজান কোন উত্তর দেন নি। এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজিব বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাওছার আলমকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ভিকটিমকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়টি অবশ্যই আমি গুরুত্ব সহকারে দেখব। এদিকে বিআরটিএর একটি সূত্র জানিয়েছে, চৌগাছার বাসগুলির চৌগাছা-পুড়াপাড়া সড়কে কোন রুট পারমিট নেই। রুট পারমিট ছাড়াই বাসগুলি ওইরুটে চলাচল করে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ চৌগাছার বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংস্থার লোকজন সড়কে লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে ভ্যান-রিক্সার পরিবর্তে বাসে চড়তে বাধ্য করে থাকে। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সাথে বাস শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে।
খবর৭১/ইঃ