মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ যশোরের চৌগাছা উপজেলার ৭১ রনাঙ্গন বলে খ্যাত জগন্নাথপুর হানাদার মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে মুক্তিনগর শহীদ স্মরণী শিক্ষা নিকেতনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকালে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। র্যালীটি মশিউর নগর জগন্নাথপুর এলাকা প্রদক্ষিন করে মুক্তিনগর শহীদ স্মরনী শিক্ষা নিকেতনে এসে শেষ হয়। সেখানে এ দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে স্মৃতিচারণ মূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজান আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন সাবেক সিনিয়র শিক্ষক লিয়াকত আলী, সিনিয়র শিক্ষক ইজারুল ইসলাম বসির, আক্কাচ আলী, ডালিয়া পারভীন, সোনিয়া সাইদান নাহার, হারুন অর রশিদ, আব্দুল ওহাব, সাইদুর রহমান প্রমুখ। আলোচকবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ২২ নভেম্বর জগন্নাথপুর আম্রকাননে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে সময় পাক সেনাদের হামলায় এখানকার ৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ জনগন মৃত্যুবরণ করেন। আলোচনা সভা শেষে যুদ্ধে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন জানান, জগন্নাথপুর যুদ্ধ ছিল এলাকার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাকসেনারা সিংহঝুলী, মশিউরনগর মাঠ ও জগন্নাথপুরে সাজোয়া ট্রাংকসহ সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করতে থাকে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয় জগন্নাথপুর ও গরীবপুর মাঠ সংলগ্ন চাড়ালের বাঁশ বাগানে ও তেঁতুল তলা এলাকায়। ২১ নভেম্বর ঈদের দিন থেকেই এখানে যুদ্ধের সূচনা হয়। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে কোনঠাসা হয়ে পড়লে পাকসেনারা আকাশযুদ্ধ শুরু করে। তারপরও পাক বিমান চৌগাছার আকাশে বেশিক্ষন উড্ডয়ন করতে পারেনি। মিত্র বাহিনী দুটি বিমানকে ভূপাতিত করে দুজন পাইলটকে আটক করে। যুদ্ধের এক পর্যায় উভয়ের গোলাবারুদ শেষ হলে জগন্নাথপুর আম্রকাননে শুরু হয় মল¬যুদ্ধ। উভয় পক্ষ অস্ত্রের বাট, বেয়নেট, কিল, ঘুষি, লাথি এমনকি কুস্তাকুস্তির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গ্রামবাসি দা, শাবল, কাস্তে, লাঠি নিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে। এ দিন মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্দিক আক্রমন ও রণকৌশলে পাক সেনারা দিশেহারা হয়ে বিদ্ধস্ত ৮ টি ট্যাংক, বাকসো ভরা মার্কিন চাইনিজ অস্ত্রশস্ত্র ফেলে রেখে যশোর সেনানিবাস অভিমুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্ত হয় জগন্নাথপুর গ্রাম। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫৭ জন সাধারণ জনগন মৃত্যুবরণ করেন। মল্লযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষনের জন্য সাবেক জেলা প্রশাসক ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর জগন্নাথপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করেন মুক্তিনগর। পরবর্তীতে তিনি মল্লযুদ্ধের স্থানে মুক্তিনগর শহীদ স্মরণি শিক্ষা নিকেতন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেন। জগন্নাথপুর গ্রামের আম্রকাননে ১৯৯৭ সালের আগষ্ট মাসে ভারতীয় সেনা প্রধান শংকর রায় চৌধুরী পরিদর্শনে আসেন। এ এলাকায় তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের নেতৃত্বে দেন। বিখ্যাত সেই আকানন এখন আর সেখানে নেই। যুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার ও নিহতদের স্মরণে নামফলক।
খবর৭১/ইঃ