মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
ঢাকাগামী আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন নির্দিষ্ট সংখ্যক কোচ নিয়ে চলাচল করছে না। ফলে কোচের সংখ্যা ঠিক রাখা নিয়ে নৈরাজ্য চলছে নীলসাগর এক্সপ্রেসে। ট্রেনের আসন সংখ্যা অনুযায়ী টিকিট বিক্রি করা হলেও নির্দিষ্ট কোচ রাখা হচ্ছে না ট্রেনে। এমন অহরহ ঘটনায় টিকিট কেটেও আসন ছাড়াই ঢাকা যাচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে রেলওয়ের অব্যবস্থানায় ঢাকাগামী যাত্রীরা ভয়ানক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নৈরাজ্যের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। এ দিনের ট্রেনে নির্দিষ্ট কোচ না থাকায় অনেক যাত্রী আসন ছাড়াই যাত্রা করতে বাধ্য হয়েছেন। যাত্রীদের এমন দুর্ভোগ নিয়মে পরিণত হলেও রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন। এ নিয়ে যাত্রীরা অভিযোগ জানালেও কোন প্রতিকার মিলছে না।
ভূক্তভোগী যাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, ঢাকাগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের নির্দিষ্ট কোচের বিপরীতে প্রতিদিন ১৬১টি টিকিট বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে শোভন শ্রেণীর ১২০টি টিকিট রয়েছে। মূলতঃ এসব টিকিটের যাত্রীরাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যাত্রীদের অভিযোগ তারা দূর দূরান্ত থেকে টিকিট সংগ্রহ করলেও ট্রেনে উঠতে গিয়ে নির্দিষ্ট কোচ পাচ্ছেন না। ফলে নির্দিষ্ট কোচ না পেয়ে আসন ছাড়াই দাঁড়িয়ে অন্য কোচে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক যাত্রী বিপাকে পড়ে যাত্রা বাতিলও করছেন। গত চারদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও কোন সমাধান মিলছে না স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা কোচ না থাকার পরও টিকিট বিক্রি করে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মহিলা-শিশুরা। এর মধ্যে গত ১১ অক্টোবর নির্দিষ্ট কোচ খোঁজার হুড়োহুড়িতে কমপক্ষে ১০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। এ সময় আলম আখন্দ নামের এক যাত্রীর পুরো টাকা খোয়া যায়, আবার অনেকে ট্রেনে উঠতে না পেরে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন। এ দিনের ভুক্তভোগী নাজমুল আহসান নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ওই ট্রেন ধরে পরের দিনই ঢাকার বেসরকারি একটি ফার্মে যোগ দেবেন। তাই আসন ছাড়াই দাঁড়িয়ে ৪০০ কিলোমিটারের পথ ভ্রমণ করেছেন। সরফরাজ মুন্না নামের অপর এক যাত্রী জানান, ট্রেনটি সৈয়দপুর ষ্টেশনে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছালে আমাদের টিকেটের উল্লেখিত কোচ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন পরিচালক (গার্ড) এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ‘ঞ’ কোচটি পিছনে। অনেক কষ্টে পিছনে গিয়ে দেখি ওই বগি নেই। যখন ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে তাই অন্য একটি বগিতে উঠে যাই। পরে পার্বতীপুর স্টেশনে পৌঁছালে আবার গার্ড এর সাথে কথা বললে তিনি রাগান্বিত হয়ে দুর্ব্যবহার করেন। একই ঘটনার শিকার ওই কোচের টিকেটধারী ২০/২৫ জন যাত্রী ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ট্রেনের টিকেট পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার মত অবস্থা। তার ওপর বাড়তি ঝামেলা। এটা কতৃপক্ষ আগে জানালে এমন দুর্ভোগে পড়তে হত না। মাহমুদ নামে একজন যাত্রী বলেন, ফ্যামিলি নিয়ে দাঁড়িয়ে ৪০০ কিলোমিটার যাওয়া কি পরিমাণ ভোগান্তি তা প্রকাশ করতে পারবো না।
রেলওয়ে স্টেশনের একজন দোকানী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রায় দিনই এ রকম ঘটনা ঘটছে। তারা টিকিট কেটেও যাত্রা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অথচ এ নিয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের কোন ভাবান্তর নেই। তারা ঠিকই নির্দিষ্ট টিকিট বিক্রি করছেন। স্টেশন কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শওকত আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই দিন চিলাহাটি স্টেশনের ট্রেন পরীক্ষক কোচে যান্ত্রিক ত্রুটি পেয়ে কোচটি ড্যামেজ ঘোষণা করেন। তবে আমাদের হাতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিষয়টি মাইকিং করে জানানো হয় যাত্রীদের। কারণ কোচের ফিটনেসের বিষয়টি ট্রেন পরীক্ষকরা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।