খবর ৭১ : নিত্যনতুন হোটেল নিঃসন্দেহে সবার কাছেই রোমাঞ্চের। তবে আভিজাত্যের সঙ্গে তুলনা চলে না কোনো কিছুর। শতাব্দীর প্রাচীন এমন একঝাঁক হোটেল আরাম-আয়েশ ও আতিথেয়তার বৈশ্বিক মানদণ্ড তৈরি করে রেখেছে। এসব অসাধারণ হোটেল উঠে এসেছে অসংখ্য চলচ্চিত্র ও শিল্প-সাহিত্যে। ইতিহাসেরও অংশ এগুলো। বিশ্বের সেরা সাত প্রাচীন অভিজাত হোটেলের বর্ণনা যুগান্তরের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল-
দ্য প্লাজা, নিউইয়র্ক : ১৯০৭ সালে চালু হয় নিউইয়র্কের দ্য প্লাজা হোটেল। ১৯৬৯ সালে হোটেলটিকে আমেরিকার অন্যতম স্থাপনা হিসেবে মনোনীত করা হয়। নিউইয়র্ক সিটির ফিফথ এভিনিউ ও সেন্ট্রাল পার্ক সাউথে অবস্থিত ২০ তলার হোটেলটি পঞ্চাশের দশকে মার্কিন লেখিকা কেই থম্পসনের লেখা শিশুতোষ গ্রন্থ সিরিজ ‘ইলয়েস’-এ তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ‘ফানি গার্ল’ (১৯৬৮), ‘হোম অ্যালোন টু : লস্ট ইন নিউইয়র্ক’ (১৯৯২), ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’সহ (২০১৩) হলিউডের বহু ছবিতে এ হোটেল রয়েছে। প্রতি রাতের জন্য এ হোটেলের বিল ৭৫ হাজার ২৪ টাকা।
হোটেল রিৎজ, প্যারিস : ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার কোকো শানেল, মার্কিন ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ও সুইডিশ অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের মতো বিখ্যাত তারকাদের হেডকোয়ার্টার বলা যায় হোটেল রিৎজকে। ১৮৯৮ সালে এ হোটেলটি লুভর জাদুঘরে পাশে অবস্থিত। একে বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক হোটেল আখ্যা দিয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন। অড্রে হেপবার্ন অভিনীত ‘ফানি ফেস’ (১৯৫৭) ও ‘লাভ ইন দ্য আফটারনুন’ (১৯৫৭), ‘হাউ টু স্টিল অ্যা মিলিয়ন’ (১৯৬৬) ছবির শুটিং হয়েছে এখানে। ১৫৯ কক্ষবিশিষ্ট এ হোটেলে প্রতি রাতের ভাড়া ১ লাখ ৭ হাজার ৫৫২ টাকা।
ক্লারিজে’স, লন্ডন : ১৮১২ সালে লন্ডনের মেফেয়ারে চালু হয় হোটেলটি। এই শহরে এলে এখানেই উঠতেন কিংবদন্তি ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেতা ক্যারি গ্র্যান্ট, ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন ও রুশ অভিনেতা ইয়ুল ব্রাইনার। মার্কিন অভিনেতা স্পেন্সার ট্রেসি একবার বলেছিলেন, মেফেয়ারে এলে স্বর্গে যাওয়ার পরিবর্তে ক্লারিজে’সকে বেছে নেবেন তিনি! ইংল্যান্ডে প্রথম হোটেলটিতে ২০৩টি কক্ষ রয়েছে। ১৯৪৫ সালের জুনে হোটেলের ২১২ নম্বর স্যুটকে ঘোষণা করা হয়েছিল যুগোস্লাভিয়ার অঞ্চল! হোটেলে এক রাতের খরচ ৯৩ হাজার ৯৫৩ টাকা।
র্যাফেলস, সিঙ্গাপুর : সিঙ্গাপুরের রূপকার স্ট্যামফোর্ড র্যাফলসের নামে উপনিবেশিক ধাঁচের এই ঐশ্বর্যময় হোটেলের নামকরণ হয়েছে। মাত্র ১০টি রুমের একটি বাংলো ছিল এটি। বর্তমানে এর কক্ষ সংখ্যা ৭৫। ১৮৮৭ সালে চালু এ হোটেলকে সিঙ্গাপুরের জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা আলফ্রেড হিচকক, শিশুতোষ বই ‘দ্য জঙ্গল বুক’-এর ব্রিটিশ কথাশিল্পী রুডইয়ার্ড কিপলিং, মার্কিন ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এখানে থেকেছেন।
বেভারলি হিলস হোটেল, লস অ্যাঞ্জেলেস : ১৯১২ সালে গড়ে তোলা হয় হোটেলটি। হলিউডের প্রথম সারির তারকারা থেকেছেন এখানে। তাদের মধ্যে অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো, এলিজাবেথ টেলর, অভিনেতা-নির্মাতা জন ওয়েইন ও ওয়েলশ অভিনেতা রিচার্ড বার্টন। ১৯৪৮ সালে হোটেলের বাইরের অংশে সূর্যাস্তের রং করা হয়। পরে এটি স্থান পায় ঈগলস ব্যান্ডের ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ অ্যালবামের কাভারে। সানসেট বুলভার্ডে অবস্থিত এ হোটেল প্রথম ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্বীকৃতি পায়।
রিৎজ হোটেল, লন্ডন : ১৯০৬ সালে গড়া রিৎজ হোটেল লন্ডনের প্রথম স্টিলের স্থাপনা। ১০৯ বছরেরও পুরনো হোটেলটিতে থেকে গেছেন ব্রিটিশ রাজা এডওয়ার্ড অষ্টম, কিংবদন্তি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব চার্লি চ্যাপলিন। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিয়মিত বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে সেখানে যেতেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট চার্লস গল, আমেরিকার ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডি. আইজেনহাওয়ার। হলিউড অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টস ও অভিনেতা হিউ গ্র্যান্টের ‘নটিং হিল’ (১৯৯৯) ছবির শুটিং হয়েছে এখানে। হোটেলে এক রাতের খরচ ৭৭ হাজার ২৩৬ টাকা।
তাজমহল প্যালেস, ভারত : মুম্বাইয়ে ১৯০৩ সালে প্রাসাদতুল্য হোটেলটি নির্মাণ করা হয়। এটাই মুম্বাইয়ের প্রথম বন্দর আকৃতির বিখ্যাত নিদর্শন। এটাই ভারতের প্রথম হোটেল যেখানে নৌযানভিত্তিক এলিভেটর রয়েছে। এখানে রয়েছে ৫৬০টি কক্ষ, ৪৪টি স্যুট ও ৩৫ খানসামাসহ দেড় হাজার কর্মী। ২০১০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মুম্বাই সফরের সময় পুরো তাজমহল প্যালেস ভাড়া করেছিলেন। হোটলটিতে এক রাতে থাকতে বিল গুনতে হবে ৩০ হাজার ৪৫২ টাকা।
খবর ৭১/ই: