খবর ৭১: নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছে নগরবাসী। বদলে গেছে রাজধানী ঢাকার চিত্র। মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকা নগরী এখন ফাঁকা। নেই যানজট। রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই একই অবস্থা।
কমে এসেছে নগরীর গণপরিবহন, রিকশা সিএনজি অটোরিকশাও। তবে আধিক্য রয়েছে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসের। জ্যাম কম থাকায় নগরবাসীর ব্যক্তিগত যান চলাচল করছে নির্বিঘ্নে। সরেজমিনে মঙ্গলবার রাজধানীজুড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের চিত্র ছিল গতানুগতিক। তবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম বলে যানজট ছিল না। সন্ধ্যার পরও মতিঝিলের যেসব রাস্তা থাকে বাস-রিকশা আর হকারদের দখলে। দুপুরের দিকে সেখানের চিত্র ছিল কিছুটা ফাঁকা। যানবাহনের সঙ্গে কমে গেছে হকারের সংখ্যাও।
রিকশাচালক মতলব হোসেন বলেন, গেরামের বাড়ি মাইমনসিং (ময়মনসিংহ)। আজই বাড়ি যাইতে চাইছিলাম। তিন্তু যাইনি। বউ পোলাপাইন গতকালই ট্রেনে বাড়ি গেছে। হেল্লাইগা টেনশন নাই। আজ আমি যাব। এখন যা ভাড়া মারছি তাই লাভ।
মতলব বলেন, মতিঝিল অফিস পাড়ায় কিছু মানুষ এখনো দেখা যাচ্ছে। অন্য জায়গায় এত মানুষ নেই। সবাই বাড়ি গ্যাছে গা।
জানা গেছে, ঘরমুখো মানুষদের বাড়ি ফেরার হিড়িক পড়ে গেছে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই। চাকরিজীবীরা আগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে। ফলে মহাসড়ক ফাঁকা, নেই গাড়ির স্রোত। এই ধারা অব্যাহত ছিল সোমবার দিবাগত রাত পর্যন্ত। কারণ সোমবার ঈদের আগে শেষ কার্য দিবস।
গত কয়েক বছর থেকে রাস্তায় গাড়ি চাপ কমাতে রাজধানীর গার্মেন্টগুলোতে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া হয়। কেউ কেউ দু’তিন দিন আগে থেকেই গার্মেন্ট ছুটি দিয়ে দেয়। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর অনুরোধে এই কাজ করা হয়।
সোমবার সকালে রাজধানীর কালশীস্থ ২৪ তলা ভবনের গার্মেন্টের সামনে দেখা যায়, গাড়ির লম্বা লাইন। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাড়ি রাখা হয়েছে। গার্মেন্টের কর্মীরা নিজ উদ্যোগে এসব গাড়ি ভাগ করে এনেছেন। বিভিন্ন জেলার কর্মীরা একসঙ্গে বাড়ি যাবেন।
গার্মেন্টের সিকিউরিটি গার্ড মোকাররম আলী জানান, দুপুরের পর থেকে এসব গাড়ি ছেড়ে যাবে। রোববার সবাইকেই বোনাস দেয়া হয়েছে। প্রতি বছরই এই ব্যবস্থা ব্যবস্থা হয়। মালিক পক্ষের সহযোগিতায় গার্মেন্টের কর্মীরা নিজেরা একত্রিত হয়ে এসব গাড়ি ভাড়া করে থাকে। ফলে ভাড়ার রেট একটু বেশি পড়লেও ঝামেলা নেই।
ধারণা করা হচ্ছিল, শুক্রবারের পর আর তেমন যানজট থাকবে না। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি অফিস চলমান থাকা ও রাস্তাঘাটে উন্নয়ন কাজের জন্য বেহাল অবস্থার কারণে আজও কিছু বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের। ফলে যানজট তেমন না থাকলেও গাড়ি চলছে ধীর গতিতে।
রাজধানীর পল্টনে দেখা গেল এমন চিত্র। প্রেস ক্লাবের উল্টো পাশ দিয়ে পল্টন আসা হয় মেইন রোড হয়ে। রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে।
ফলে এক লাইনে চলতে হচ্ছে বিভিন্ন বাসগুলোকে। এজন্য গাড়ির সংখ্যা কম হলেও কিছু সময় লাগছে পল্টন মোড় পার হতে।
এদিকে রোববার রেল, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে নামে ঘরমুখো মানুষের ঢল। রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশন ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই উঠেছেন ট্রেনের ছাদে। এছাড়া প্রতিটি ট্রেনই ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, মানুষের বাড়তি চাপের কারণে ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে।
প্রতিনিধিরা জানান, ভোর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কাঁচপুর থেকে মেঘনা ব্রিজের ওপার পর্যন্ত ছিল দীর্ঘ যানজট। গতকাল সকাল থেকেও গাড়ি চলছে ধীর গতিতে। গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট দেখা গেছে। এছাড়া মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটের উভয়পারে যানবাহন যানজটের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ঈদে যাত্রীদের ঘরে ফেরা উপলক্ষে বাস-ট্রেন ও লঞ্চঘাটে নিরাপত্তার দায়িত্বে র্যাব-পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত রাজধানীর কোথাও কোনো অপ্রতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।