উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল জেলার পল্লীতে অসহায় কিশোরী ভারতে পাচার হওয়ার পরে মুক্তিপনের বিনিময়ে পরিবারের কাছে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে। এ ব্যাপারে নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাচারকারী চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, মামলা ও পাচারের শিকার কিশোরী সূত্রে জানা যায়, নড়াইল সদরের হবখালী ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামের অসহায় দিনমজুর ইয়ার আলি’র কিশোরী মেয়ে তমা (১৭) কে একই এলাকার হারুন মোল্যার মেয়ে মক্ষিরাণী ও প্রতারক এবং নারী-শিশু পাচারকারী চক্রের অন্যমত সক্রিয় সদস্য আদরী (৩৮)সহ পাশ^বর্তী ইলিন্দী গ্রামের আমজাদ মোল্যার ছেলে আওয়াল (৩৫) যোগসাজগে গত ২৬শে জুন ভালো চাকুরির কথা বলে ভারতের পুনেতে নিয়ে যায়। এ সময় আওয়াল ও আদরী তাকে পতিতালয়ে বিক্রী করে দেয়। আওয়াল আদরীকে ফাঁকি দিয়ে বিক্রয়লব্ধ টাকা নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আদরীকে পুলিশ তাড়া করে।
এ সময় আদরী পার্শ্ববর্তী এক বাড়িতে গিয়ে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পায়। পরে তমাকে যে বাড়িতে বিক্রয় করেছিলো সে বাড়িতেই আদরীও আশ্রয় নেয়। এক পর্যায়ে তমার বাড়িওয়ালী মমতাজ রানী ও আদরীর নির্যাতনের মুখে তমা যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়। এ ভাবে এক মাস অতিবাহীত হওয়ার পর ভারতীয় পুলিশ, মানবাধিকার কর্মী ও স্থানীয় লোকের চাপের মুখে তমার পরিবার তমাকে নিয়ে দেশে ফেরত আসার জন্য দাবি জানায়। এক পর্যায়ে আদরী মুঠফোন ও ইমো মেসেঞ্জারে ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে।
আদরীর সাথে দর কষাকষির এক পর্যায়ে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তমাকে ফিরিয়ে দিবে বলে আশ^াস দেয়। তমার পরিবার ধার-দেনা, জমি বন্ধক ও বিভিন্ন মালামাল বিক্রয় করে আদরীর নির্দেশ মোতাবেক দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা মমতাজ রাণীর মাধ্যমে আদরীর দেওয়া ৪টা বিকাশ নাম্বারে প্রতারক আদরীর বাবার উপস্থিতিতে পরিশোধ করে। উক্ত দাবিকৃত টাকা যথাক্রমে বিকাশ নাম্বার ০১৭২০৯২৯৫৯৯ এ ৫ হাজার, ০১৯১০৬৯৬৯৫১ এ ১৫ হাজার, ০১৭৮৪৩০০৩৪০ এ ১৫ হাজার, ০১৯১৯১৩১২২৮ এ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে দাবিকৃত মক্তিপনের ৫০ হাজার পরিশোধ করে।
৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পর তমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুনরায় আরো ৩০ হাজার টাকা দাবি করে।
পরে আদরীকে অনেক অনুনয় বিনয় ও অনুরোধ করার ফলে শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকায় তমাকে দেশে ফেরত নিয়ে আসে। গত বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) নিজ এলাকায় এসে তমাকে রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেনের আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আমার নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, একদল পুলিশ আদরীকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় তমার পিতা বাদী হয়ে নড়াইল সদর থানায় শিশু ও নারী পাচার মামলায় আদরী ও আওয়ালকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-২১, তারিখ- ১১.০৮.২০১৮ ইং।
খবর ৭১/ইঃ