খবর ৭১ঃনর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল (২১) হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার বাসের সুপারভাইজার ফয়সাল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
বুধবার ফয়সালকে আমলি আদালত গজারিয়া কোর্টে হাজির করা হলে বাসচালকের সহকারী (হেলপার) ও সুপারভাইজারসহ তিনজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেন।
কোর্ট পরিদর্শক হেদায়তুল ইসলাম জানান, জবানবন্দিতে ফয়সাল বলেন- ২১ জুলাই রাতে হানিফ পরিবহনের বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে যানজটে পড়ে। বাসযাত্রী পায়েল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে (প্রস্রাব করতে) বাস থেকে নামেন।
পরে বাসে উঠতে গিয়ে চালক বাসটি দ্রুত টান দিলে পায়েল বাসের দরজার সঙ্গে জোরে ধাক্কা খান। এ সময় নাকমুখ দিয়ে রক্ত বের হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পায়েল। বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজার ধারণা করেন, পায়েল মারা গেছেন। চালকের সহকারী ও সুপারভাইজার পায়েলকে মৃত ভেবে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, সাইদুর রহমান পায়েল হত্যার ঘটনায় হানিফ পরিবহনের বাসচালক জালাল, সুপারভাইজার ফয়সাল ও সহকারী জনিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আটক সুপারভাইজার ফয়সাল। মৃত ভেবেই পায়েলকে ব্রিজের সামনে একটি খালে ফেলে দেয় সুপারভাইজার ফয়সাল।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত নিহত পয়েলের বন্ধু হাকিমুর রহমান আদর সাংবাদিকদের জানান, কুমিল্লা পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আমরা বাসে ঘুমিয়েছিলাম। পেছনের সিটে বসা ছিল পায়েল। ঘুম ভাঙলে পায়েলকে দেখতে না পা পেয়ে বাসের হেলপারকে জিজ্ঞাসা করি। হেলপার জানায়, পায়েল প্রস্রাব করতে নেমে পড়েছিল পরের বাসে চলে আসবে। বাস থেকে নেমে অনেক অপেক্ষা করলেও পায়েল ফিরে আসেনি। পরে জানতে পারলাম গজারিয়া উপজেলার ভাটের চর সেতুর নিচে তার লাশ পানিতে ভেসে আছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে হানিফ পরিবহনের বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাইদুর এবং তার রুমমেট ও বন্ধু আকিমুর রহমান আদর।
ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর ক্যাসেল হোটেলের সামনে যানজটে পড়ে। তখন সাইদুর তার মোবাইল বাসেই রেখে প্রস্রাব করতে নামেন। ওই সময় পায়েলের সহপাঠী ঘুমিয়ে ছিলেন। সকালে তার মোবাইল ফোনে কল দেন তার মা কোহিনূর বেগম। ফোন ধরেন বাসে থাকা তার বন্ধু। পায়েলের নিখোঁজের বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এরপর ২৩ জুলাই সোমবার সকালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর খাল থেকে সাইদুরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ জুলাই মঙ্গলবার রাতে নিহতের মামা গোলাম সরওয়ার্দী বিপ্লব গজারিয়া থানায় বাসচালক, সহকারী (হেলপার) ও সুপারভাইজারকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ২৫ জুলাই আসামি ৩ জনকে গ্রেফতার করে গজারিয়া থানা পুলিশ।
গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ জানান, পায়েলের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের তদন্তে প্রাথমিকভাবে বাসচালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে সুপারভাইজার ফয়সাল পুলিশের কাছে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে তাকে মুন্সীগঞ্জের আদালতে পাঠানো হয়
খবর ৭১/ইঃ