পাইকগাছার হাড়িয়া নদীর কাঠের ব্রিজ ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ২০ হাজার মানুষ

0
669

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা)  প্রতিনিধি:
পাইকগাছার হাড়িয়া নদীর উপর শঙ্কদানা কাঠের ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় গত ৫ মাস যাবত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অবহেলিত জনপদের লতার তেঁতুলতলা,শংকরদানা,গংগারকোনা,কাঠামারি,আধারমানিক,পুতুলখালি ও ধলাইসহ লবণ পানি অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। চলতি চিংড়ি উৎপাদন মওসুমে সেখানে উৎপাদিত শত শত মণ চিংড়ি ও তা প্রক্রিয়া করণে বরফসহ এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সরবরাহ থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনে বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি ও উপজেলা সদর পাইকগাছা পৌছাতে নৌকা পারাপারে জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌছেছে। ভারী পণ্য বহনে জোয়ারের উপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা যোগে কয়েক কিঃমিঃ নদী পথ পাড়ি দিতে কখনো এলাকাবাসীকে অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।
এলাকাবাসী জানায়,প্রায় ৫ মাস পূর্র্বে ব্রিজের সিংহভাগ ভেঙ্গে পড়ায় সেই থেকে প্রতি দিন ঝুঁকি নিয়ে সাধারন মানুষ কোন রকম নদী পার হলেও মাস দু’য়েক পূর্বে ব্রিজটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে নদীতে পড়ায় মূলত ঐসময় থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার খবরে দেরিতে হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ঠিক কবে নাগাদ ব্রিজটি সংষ্কার বা পুণঃনির্মাণ হতে পারে তা নিশ্চিত করেনি কেউ।
এলাকাবাসী জানায়,বিস্তীর্ণ জনপদের সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ও লতা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী হাড়িয়া নদীর উপর ২০১০ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করে। ব্রিজের এক প্রান্তে রয়েছে উপজেলার লতার তেঁতুলতলা, শংকরদানা,গংগারকোনা,
কাঠামারি,আধারমানিক,পুতুলখালি ও ধলাই অন্য প্রান্তে রয়েছে কপিলমুনি ইউনিয়নের বারুইডাঙ্গা ভায়া আগড়ঘাটা। দু’টি ইউনিয়নই সুন্দরবন উপকূলীয় চিংড়ি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় স্থানীয়সহ বিভিন্ন এলাকার শত শত চিংড়ি চাষী(ঘের মালিকরা) চলাচল ও উৎপাদিত মাছ উপজেলা ও বানিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনিতে সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম কাঠের ব্রিজটি। এছাড়া দুর্গম পানি বেষ্ঠিত দ্বিপাঞ্চলের বহু ছেলে-মেয়ে পড়া-লেখা করে উপজেলা কিংবা কপিলমুনির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় তাদের দূর্ভোগেরও যেন আজ আর অন্ত নেই। এর আগে ২০১৪ সালে ব্রিজটি অনুরুপ ক্ষতিগ্রস্থ হলে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তা সংষ্কার করলেও ভারী মালামাল বহণে পরের দিনই তা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এরপর সর্বশেষ প্রায় ৫মাস পূর্বে ফের কাঠের ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়লে সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা।
এলাকাবাসী জানান,প্রায় ২শ’ ফুট দৈর্ঘ্যরে পুরাতন ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় প্রতি দিন জরুরী প্রয়োজনে সেখানে উৎপাদিত শত শত মণ চিংড়ি ও তা প্রক্রিয়া করণে বরফসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী পরিবহণে ফের ভরসা করতে হচ্ছে জোয়ার নির্ভর মৃত প্রায় হাড়িয়া নদীর বিলুপ্ত প্রায় নৌকার উপর। খবর পেয়ে ইতোমধ্যে পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডঃ স.ম. বাবর আলীর নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান মাওঃ শেখ কামাল হোসেন, কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার ও লতা ইউপি চেয়ারম্যান দিবাকর বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন কবলিত ব্রিজটি পরিদর্শনে গেলেও ঠিক কবে নাগাদ তা পূণঃনির্মাণ বা সংষ্কার হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা তা নিশিত করে বলতে পারছেননা কেউই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কৃষ্ণ রায় জানান, জন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় বিপর্যস্ত এলাকাবাসীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে খুব তাড়াতাড়ি টোল আদায়ের শর্তে ব্রিজটি সংষ্কার হবে বলে উপজেলা পরিষদের পক্ষে তাদেরকে আশ্বস্থ করা হয়েছে।
এদিকে ব্রিজটি সংষ্কারের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্থি ফিরলেও শঙ্কা কাটেনি। তারা জানান,স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের পট পরিবর্তন হলেও তাদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেনি কেউ। বিস্তীর্ণ জনপদের সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ৭ বছর পূর্বে স্থানীয় সরকার পরিষদের আওতায় একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ হয় অথচ এরই মধ্যে তা কয়েকবার ভেঙ্গে পড়লেও স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকাবাসী মেরামত করে তা। তবে এবার উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সংষ্কার হওয়ায় তাতে নতুন করে টোল আদায় হবে। এটা তাদেরে কাছে যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here