চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে চোখের অপারেশন করা ২০ রোগির চোখ তুলে ফেলা হয়েছে

0
530

আব্দুস সালাম,চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গায় অস্ত্রোপচারের কারণে ২০ বয়স্ক নারী-পুরুষের চোখ তুলে ফেলার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারের চক্ষু বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী অরোব্লু নামক ভারতীয় একটি ওষুধের ব্যাকটেরিয়া থেকে এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে । তবে অনেকেই বলেছেন অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের কারণেই এ ঘটনা। শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। অপরদিকে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের তরফ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। অপর এক সূত্র বলেছে, আজ রোববার উচ্চ আদালতে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপুরণের রিট হতে পারে।

২০০২ সালে চুয়াডাঙ্গা শহরের কেদারগঞ্জ বাজারে প্রতিষ্টিত হয় ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার। ৫০ শষ্য বিশিষ্ট হাসপাতালে মার্চের ৪, ৫ ও ৬ তারিখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদ্বারা ৬০ জন রোগিকে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। এর মধ্যে ৪ মার্চ ৩৪ জন, ৫ মার্চ ২৪ জন ও ৬ মার্চ ২ জনের অপারেশন করা হয়। তবে ৫ মার্চ ২৪ জন রোগির অপারেশন সফলভাবে করা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার দুইদিন পর এই ২৪ জনের মধ্যে ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন ( পোষ্ট অপারেটিভ ডায়গোনেষ্টিক) দেখা দেয়। দিন যাওয়ার সাথে সাথে তা মারাত্নক আকার ধারন করে। চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম দেখা দিলে তাদেরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে ১২ মার্চ ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করে। এদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও ৮ জন মহিলা। পরবর্তীতে এই ২০ নারী-পুরুষের চোখ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তুলে ফেলতে হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদরের গাইদঘাট গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে গোলদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কালো চশমা পড়ে বসে আসে। সে জানায় কি আর করার আছে বাবা। ৫ মার্চ সে ওই হাসপাতালে চোখের ছানি অপারেশন করে। দুই দিন পর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। পরে ঢাকা নিয়ে চোখটা তুলে ফেলতে হয়েছে।

এদিকে চোখের অপারেশন করিয়ে চোখ হারানো পরিবারগুলোর অধিকাংশের তরফেই ঘটনার সুষ্ঠুতদন্ত পূর্বক প্রকৃত দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে শুধু ওই ২০ জন নয়, দীর্ঘদিন ধরে এখানে অপারেশন করা অসংখ্য রোগী তাদের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি আশাদুল হক জোয়ার্দ্দার অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বর ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে আমার ডানচোখ অপারেশন করিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমার চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক ডাক্তারকে চোখ দেখিয়েছি। তারা সবাই অপারেশনের ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন ‘ওরা অসংখ্য মানুষের চোখ এভাবে নষ্ট করে দিয়েছেন। ওদের শাস্তি হওয়া দরকার।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়াডাঙ্গার একজন ডাক্তার বলেছেন, যেসব রোগীর চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে পরবর্তীতে তাদের আরও ফাঁড়া রয়েছে। এ কারণে অপর চোখটিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি ওই ব্যাকটেরিয়া নার্ভ দিয়ে মস্তিকে ঢুকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে রোগীর।’

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. আতাউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে ওই হাসপাতলের চক্ষু বিভাগের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ এপিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. মো: শরিফুজ্জামান সুমনকে। অন্য দুই সদস্য হলেন মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আবুল হোসেন ও সার্জারি কনসালটেন্ট ডা.তারিক হাসান শাহিন। একই সাথে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ শাহীনের সকল শিক্ষাসনদের ফটোকপি সংগ্রহ করা হয়েছে।

ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপতালের প্রশাসক ডা. শফিউল কবির জিপু বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ‘৫ মার্চ ৫টা বক্স্র থেকে ভারতীয় ‘অরোল্যাব’ কোম্পানির ‘অরোব্লু’ নামক ওষুধ ২৪ রোগীর চোখে পুশ করা হয়। পরে ‘অরোব্লু’ ওষুধসহ বেশ কিছু আলামত ঢাকার মহাখালীর আইসিডিডিআরবিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তারা ১৫ মার্চ রিপোর্ট দিয়েছেন। তাতে অরোব্লু নামক ওষুধে ‘গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার’ উপস্থিতি পান। একই সঙ্গে আক্রান্ত এক রোগীর চোখের পুঁজ সংগ্রহ করে ইসলামিয়া হাসপাতালে পরীক্ষা করা হয়। সেখানেও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ভারতের অরোল্যাবের অরোব্লু ওষুধই এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী।

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here