খবর৭১:রাকিব হাসান,পটুয়াখালী, পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধবখালী ইউনিয়নে লোকাল গর্ভান্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট ‘এলজিএসপি’ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির কাজে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত অর্থবছরে এডিপির মাধ্যমে বরাদ্দকৃত রাস্তায় এবারে এলজিএসপির বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। কাগজে কলমে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের বেশিরভাগ টাকা আত্মসাৎ করে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টরা। এনিয়ে স্ব-স্ব ইউনিয়নে সাধারণ মানুষ ছাড়াও সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এলজিএসপি স্বচ্ছতা জবাবদিহীতার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করার জন্য প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তিন-কিস্তিতে এ অর্থ বরাদ্দ করেন । এলাকাবাসী ও সরেজমিনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিন কিস্তিতে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নে ২০ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩শত টাকা বরাদ্দ পায়। প্রতি বছরের মতো এবারও তিন কিস্তির টাকা ওই ইউনিয়নে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড়কৃত অর্থকাগজে কলমে কাজ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ইউনিয়নের সামান্য কিছু কাজ হলেও তা অত্যন্ত নিম্নমানের। উন্নয়ন মূলক কাজে বরাদ্দের এ টাকা ‘বিবিজি ও পিবিজি’ এই দুই অংশে পৃথক ভাবে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। ইউনিয়নে উন্নয়ন মূলক কাজের মধ্যে রয়েছে- গভীর নলকূপ স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র ও চোহার-চেবিল সরবরাহ, ইউনিয়ন তথ্য সংগ্রহ, কম্পিউটার এন্ট্রি, বিভিন্ন তথ্য বোর্ড তৈরী, ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্রের জন্য কম্পিউটার ও অন্য সরঞ্জাম ক্রয়, মাটির রাস্তা তৈরী, প্রতিবন্ধীদের কল্যানে শেয়ার ভিত্তিক বৃক্ষরোপণ, মহিলা ধাত্রী প্রশিক্ষণ, গণল্যাট্রিন তৈরী, দুঃস্থ মহিলাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, বর্ষায় ছাত্রছাত্রীদের পারাপারের জন্য নৌকা তৈরী, হ্যারিং বন্ড রাস্তা তৈরী ও কালভার্ট নির্মাণ ইত্যাদি। এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের সব কাজের বিল ভাইচার ও মাষ্টাররোল সরকারি নিজ নিজ বিভাগে হিসাব জমা দিতে হয়। উপজেলা মাধবখালী ইউনিয়নের কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, একাধিক প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের কোন কাজ না করেই টাকা লোপাট করা হয়েছে। এছাড়াও মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লোকাল গর্ভান্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট এলজিএসপি’ প্রকল্পের কোন সরকারি পরিপত্রকে তোয়াক্কা না করে গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫% উৎকোচের বিনিময়ে নব্বইভাগ গভীর নলকূপ বসিয়েছেন।
ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামের কাদের ব্যাপারী প্রতিনিধিকে বলেন, মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য কুদ্দুস খানকে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাদেরকে এলজিএসপি’র বরাদ্দ থেকে গভীর নলকূপ দেওয়া হয়েছে এবং নলকূপের বসানোর পরে গোড়া পাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাকা করে দেইনি। অথচ এলজিএসপিতে গ্রাহকের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। এভাবেই ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিএসপির টাকায় ১৭টি ডিপটিওবয়েল বসিয়ে প্রত্যেকটি থেকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ইউপি সদস্য মোঃ কুদ্দুস খানের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করেন ইউপি চেয়ারম্যান বলে স্থানীয়রা জানান।
এছাড়াও চৈতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গেট নির্মানের প্রকল্প ও মুন্সির হাট ব্রীজের ঢালের হ্যারিংবন্ড রাস্তা প্রকল্প দেখানো হলেও কোন কাজের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। চৈতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এখানে কোন গেট বা কক্ষ নির্মাণ করা হয়নি। মাধবখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এবং ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. আমিন বলেন, মাধবখালীর ইউপি চেয়ারম্যান প্রকল্পের সিংহ ভাগ টাকা কাজ না করেই নিজেই পকেটস্থ করেছেন। এ কাজের মোট বরাদ্দ থেকে ৩০ ভাগ চেয়ারম্যানরা কমিশন রেখে অবশিষ্ট টাকায় নামে মাত্র প্রকল্পের কাজ করিয়েছেন। এ দুর্নীতি হয়েছে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নে। আমরা এর প্রতিবাদ করি এবং মৌখিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করায়, ইউপি চেয়ারম্যান এর ভাইয়ের নেতৃত্বে ৪ জন ইউপি সদস্যের উপর হামলা চালানো হয়। মাধবখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম মোল্লা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময় ডিপটিওবয়েল বসানো এবং একই রাস্তায় বিভিন্ন প্রকল্পগুলো, যেমন ৪০ দিনের কর্মসূচী, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দ অর্থ, ২/১ টি রাস্তা বার-বার দেখিয়ে এবং আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের নামে অর্থ উত্তোলন করেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম- তালুকদার। বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ দিলে, যুগ্ম সচিব তদন্তের নিদের্শ দিলেও তা রহস্য জনক কারনে থেমে গেছে। নতুন বরাদ্দের টাকা ব্যয় করার আগেই পূর্ববর্তী টাকা ব্যায়ের সঠিক তদন্ত করে,তবেই নতুন প্রকল্প শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, ভিজিডি, ভিজিএফ, টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও হতদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজের ব্যাপারে ইউনিয়নবাসী কিছুটা অবগত থাকে। কিন্তু এলজিএসপি কাজের টাকার ব্যাপারে কেউই অবগত নয়। এ টাকা কখন আসে কখন যায় তা এলাকাবাসীর কেউই টের পায়না শুধু চেয়ারম্যান-মেম্বাররাই জানে। মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম তালুকদার প্রতিনিধিকে বলেন, আমি শতভাগ নিয়ম মেনেই প্রকল্পেগুলো বাস্তবায়ন করেছি। আমার কোন প্রকল্পে ত্রুটি নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রতিনিধিকে বলেন, যেসব প্রকল্পে এখনও কাজ হয়নি সে প্রকল্পগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে। এ ইউনিয়নে এতোগুলো টিউবওয়েল দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে মাধবখালী ইউনিয়নে এলজিএসপির প্রকল্পের কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর৭১/জি: