গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে ইক্ষু চাষে উৎসায়িত হচ্ছে কৃষক

0
372

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে ইক্ষু চাষ করে সুফল পেতে শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। আগে ওই সব এলাকায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে ইক্ষু চাষ করে আসছিলেন। আধুনিক ইক্ষুজাত ও ইক্ষু উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার না করে চাষাবাদ করায় এ সব এলাকায় ইক্ষুর ফলন কমে যায়। এতে তারা আর্থিকভাবে কম লাভবান হতে থাকেন। ফলে কৃষকরা ইক্ষু চাষ হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ইক্ষুজাত এবং ইক্ষু উৎপাদন কৌশল, প্রযুক্তি সমূহ চিনিকল বর্হিভুত ওই সব এলাকায় চাষীর জমিতে প্রয়োগ করে প্রদর্শনী স্থাপন ও কৃষকদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কৃষকদের দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পুকুরিয়া, চর পুকুরিয়া, সুলতানশাহী, তালা, মধুপুর ও সীমান্তবর্তী নড়াইল জেলার ডুমুরিয়া এলাকায় বিএসআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ইক্ষুজাত ও বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার করে ৪ থেকে ৫ গুন বেশী উৎপাদন পাচ্ছেন।
ওই সব এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যুগের পর যুগ ধরে তারা তাদের জমিতে ইক্ষু চাষ করে আসছেন। এখানে ইক্ষু ছাড়া অন্য কোন ফসল ভাল হয়না। অধিকাংশ জমিই উচু ও মাঝারী উঁচু। বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমে না। এছাড়া ওই এলাকার মাটি দো’আশ ও বেলে দো’আশ। ফলে জমি ইক্ষু চাষের জন্য উপযোগী।
উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামের ইক্ষু চাষি হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা (৬০) বলেন, বাব- দাদার আমল থেকে আমরা ইক্ষু চাষ করে আসছি। ভাল বীজ না লাগানোর কারনে ইক্ষু গুলো সরু ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তো। রস শুকিয়ে যেত। আমরা ইক্ষু চাষ করে লাভের মুখ দেখছিলাম না। এক পর্যায় জমি পতিত রাখবো বলে সিদ্ধান্ত নেই। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইনসিইটউট (বিএসআআই) রোগ তত্ত্ব বিভাগের পরামর্শে ও কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশনের কারিগরি ও আর্থিক সহয়তায় জমিতে ৪১ ও ৩৭ জাতের শোধনকৃত ইক্ষু বীজ রোপন করি। আমি আগে যে ফলন পেতাম বর্তমানে ওই জমিতে ৪-৫ গুন বেশী ফলন পাচ্ছি।
একই গ্রামের ইমারেত মুন্সি (৬২) বলেন, দুই বিঘা (৫২ শতাংশ বিঘা) জমিতে তিনি ইক্ষু চাষ করেছেন। সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করে আগে তার বিঘা প্রতি ব্যয় হতো ৫/৬ হাজার টাকা। ইক্ষু বিক্রি করতেন ১০/১২ হাজার টাকা। খুবই সামান্য লাভ হতো। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করতে সেচসহ প্রতি বিঘা জমিতে তার সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ তিনি ফলন পেয়েছেন প্রায় এক লক্ষ টাকার।
উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামের আব্দুল খালেক মোল্লার (৭০) সাথে কথা বলে জানা যায়, আমরা লাঙ্গলের ফলা দিয়ে নালা তৈরী করতাম। শোধনকৃত বীজ রোপন করতাম না। কখন কি সার প্রয়োগ করতে হবে জানতাম না। প্রতি বছর একই বীজ লাগাতাম। আমাদেরকে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। এখন কোদাল দিয়ে ৮-৯ ইি গভীর নালা তৈরী করে শোধনকৃত বীজ রোপন করি। মাত্রানুযায়ি টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কসালফেট এবং এমপি সার চারা রোপনের পূর্বে নালায় প্রয়োগ করে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দেই। ফলে ইক্ষু গাছগুলো স্বাস্থ্যবান হচ্ছে। রোগ বালাই থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হচ্ছে।
ইক্ষুচাষী দাউদ আলী মোল্লা (৭০) জানান, আমরা কেবলই চাষী নই। আমরা ইক্ষু দিয়ে গুড়ও তৈরী করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। এবার আমার ৪৬ শতাংশ জমিতে ইক্ষু লাগিয়েছি। আগে ওই জমিতে তার পাট হতো। পানির সমস্যর কারনে জমিতে ভাল পাট হয়না। আগে সামন্য কিছু জমিতে ইক্ষু লাগাতাম। এবার তিনি তার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছেন। ইতোমধ্যে উন্নত জাতের ইক্ষু চাষের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। ইক্ষু চাষ করে তিনি লাভবান হতে পারবেন বলে তার প্রত্যাশার কথা জানান।
বাংলাদেশ সুগার ক্রোপ গবেষনা ইনস্টিটিউট-বিএসআরআই, ঈশ্বরদী, পাবনার রোগ তত্ত্ব বিভাগের প্রধান ও প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর ড. মোঃ শামসুর রহমান বলেন, বেশী ফলন পেতে বাংলাদেশের যে সকল এলাকায় ইক্ষু চাষ হয় সে সব এলাকায বিশুদ্ধ বীজ রোপন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রতি তিন বছর অন্তর শোধন করা রোগ মুক্ত বীজ প্রতিস্থান করতে হবে। তবে ফলনটি আশানুরূপ হবে এবং সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করে যে ফলন পাওয়া যেত-তা থেকে চার-পাঁচ গুন ফলন বেশী পাওয়া যাবে। কৃষকরা ইক্ষ চাষে উৎসায়িত হবে। চিনি আমদানী হ্রাস পাবে ।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here