মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে নির্মাণযজ্ঞ

0
941

খবর৭১: নানা দৃশ্যমান ও অদৃশ্য চাপের কারণে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ঝুলে গেলে কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ ঠিকই এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পও। সব মিলিয়ে মহেশখালী দ্বীপ এখন কর্মমুখর।

জানা গেছে, বাংলাদেশী শ্রমিক ও জাপানি কারিগরি সহায়তায় এগিয়ে চলছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। সাগর থেকে ১৮ মিটার ড্রাফটের মাদারভেসেলগুলো (গভীর সমুদ্রে চলাচলকারী পণ্যবাহী বড় জাহাজ) ভেড়ানোর জন্য চলছে চ্যানেল তৈরির কাজ। ইতিমধ্যে উপকূলের ভেতরে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ, ১০০ মিটার চওড়া ও ৮ মিটার গভীর চ্যানেল তৈরি হয়ে গেছে, এখন চলছে জেটি নির্মাণের কাজ। ২০২৩ সালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে কয়লাবাহী জাহাজগুলো যাতে এখানে ভিড়তে পারে সেই আলোকে চলছে এই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ।

এক বছর আগে যেখানে ছিল চরাঞ্চল ও বালির তৈরি রাস্তা, সেখানে এখন প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চ্যানেল তৈরি হয়ে গেছে। সাগর থেকে সহজেই এই চ্যানেল দিয়ে জাহাজ প্রবেশের উপযোগী করা হচ্ছে। চ্যানেলের পাড়ে চলছে জেটি নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট ও রাস্তা তৈরির কাজ। বালিবাহী ট্রাকগুলো একের পর এক এসে মাটি ফেলছে এবং একজন জাপানি সুপারভাইজার ট্রাকের চালকদের মাটি ফেলার স্থান দেখিয়ে দিচ্ছেন। জাপান থেকে আনা বিশেষ প্রযুক্তির এই ট্রাকগুলো আমাদের দেশের তিনটি ট্রাকের সমান মাটি পরিবহন করতে পারে। সাগর থেকে আসা কয়লাবাহী জাহাজগুলো এই জেটিতেই এসে ভিড়বে এবং এখান থেকে চলে যাবে ডাম্পিং স্টেশনে। মাটি ফেলার কাজ তদারকি করছেন একজন কর্মকর্তা।

মোহাম্মদ সুজন নামের এ কর্মকর্তা ট্রাক থেকে মাটি ফেলার স্থান দেখিয়ে বলেন, ‘এখানেই এসে জাহাজগুলো ভিড়বে এবং কয়লাগুলো নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে। এটি হবে জেটির সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়ক।’

চ্যানেলের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা জানান, এখন মাত্র চ্যানেলের রূপ দেয়া হয়েছে। চ্যানেলের গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে এবং উভয় পাড় মজবুত করা হবে। মূলত ২০২৩ সালে জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলছে এই কাজ।

এদিকে যেখানে জেটি নির্মাণের কাজ চলছে সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে চর খনন করে বিশ্বের শক্তিশালী ৫টি ড্রেজারের একটি ক্যাসিওপিয়া ভি অবস্থান করছে। সাগরের মাঝখান থেকে চরের ভেতরের জেটিতে (১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল) আসার জন্য নির্মাণাধীন চ্যানেলের গভীরতা বাড়াতে ড্রেজিং করছে ক্যাসিওপিয়া ভি। এই চ্যানেলের চওড়া হবে ২৫০ মিটার এবং গভীরতা হবে ১৮ দশমিক ৫ মিটার। তবে পরবর্তীতে এই চ্যানেলের চওড়া ৭০০ মিটার করা হবে।

এদিকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে নির্মিত হতে যাওয়া দিনে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশাপাশি একই এলাকায় বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা জরিপ করছে জাইকা। জাইকার গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, গভীর সমুদ্র থেকে ১৮ মিটার ড্রাফট নিয়ে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল বিশিষ্ট হচ্ছে এই গভীর সমুদ্র বন্দর। সেখানে সর্বোচ্চ ৮ হাজার একক কনটেইনার বিশিষ্ট জাহাজ ভেড়ার সুযোগ থাকবে।

গভীর এই সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রকল্প পরিচালক মনোনীত করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ( প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলমকে। বন্দর নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘গভীর এই সমুদ্রবন্দরের জন্য জাইকার প্রাথমিক গবেষণা চলছে। তবে এর প্রকৌশলগত সার্ভে শুরু হবে আগামী মার্চের পর। আর তা করতে নয় মাস সময় লাগবে। তাদের রিপোর্ট আগামী বছরের শুরুতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী প্রকল্প তৈরি করা হবে এবং পরবর্তীতে কাজ শুরু করা হবে। তবে আগামী বছর কাজ শুরু করলেও আমরা ২০২২ সালের মধ্যে হয়তো তা চালুর উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারবো।’

তিনি আরো বলেন, মাতারবাড়ির এই বন্দরকে ঘিরেই মহেশখালী ও কুতুবদিয়া সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বিশাল এক শিল্প হাব গড়ে ওঠবে।

জানা গেছে, জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হতে যাওয়া ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মিত হচ্ছে এই বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষের একটি সূত্র মতে, রাজনৈতিক কারণে সরকার সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ না করতে পারলেও মাতারবাড়ি দিয়েই গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধা পাবে দেশ।

উল্লেখ্য, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলতে নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি টিম গত ২১ অক্টোবর জাপানে গিয়েছিলেন। সেখানে কাশিমা পোর্ট নামের একটি বন্দর রয়েছে যা মাতারবাড়ীর মতো। সেই বন্দর পরিদর্শনের পাশাপাশি আগামীর মাতারবাড়ী কেমন হবে তা নিয়ে পর্যালোচনা হয় সফরে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here