সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নের কান্দারগাঁও এলাকায় একটি কোম্পানীর বালু ভরাট কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের বিরোধের জের ধরে যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী মামুনকে কুপিয়ে হত্যার তিন দিন পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে নিহতের মা শিউলী বেগম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকান্ডে সন্দেহভাজন আটক আসামী স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেনসহ ২১জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া আরো ১০-১২জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। ইতোমধ্যে এ মামলায় ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেনসহ আটক ৭ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চেয়ে রোববার নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। মামলার তদন্তের স্বার্থে অন্যান্য আসামীদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী কান্দার গাঁও, ভবনাথপুর, জৈনপুর, রতনপুর ও ছয়হিস্যা মৌজায় ইউনিক নামে কোম্পানীর বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বুধবার রাতে যুবলীগ নেতা জাকিরের ভাগিনা যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী ওরফে মামুনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রতিপক্ষরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্বক ভাবে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। এ ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ আলীর মা শিউলী বেগম বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ্যসহ আরো ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় ভবনাথপুর গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মোশারফ হোসেন, একই গ্রামের মোতালেব মিয়ার ছেলে জসিমউদ্দিন ওরফে জসিম, আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল হামিদ, মোতালেবের ছেলে শহীদুল্লাহ, মিছির আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান ও কান্দারগাঁও গ্রামের রহমান সরকারের ছেলে শামীমকে আটক করা হয়। এ মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১২ জুলাই রিপন হত্যা, ২০১৪ সালে ১৭ জুন সাধন হত্যা, ২০১৫ সালে ১১ মে গোলজার হত্যা, ২০১৪ সালে ১৫ জুন মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজি, ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বজলুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্ঠা, ২০১৭ সালে ১৭ ফ্রেব্রুয়ারী নৌযানে চাঁদাবাজি মামলাসহ ৮-১০টি মামলা রয়েছে।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবী, মোহাম্মদ আলীকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার পতিপক্ষের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। আমরা মোহাম্মদ আলীর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে আটককৃত পরিবারের অভিযোগ,সোনারগাঁও থানা পুলিশ আটককৃতদের থানা হাজতে তিন দিন ধরে আটকে রেখেছে। যা তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরন করা হচ্ছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম ওবায়েদুল হক জানান, নিহত মোহাম্মদ আলীর মা শিউলী বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে প্রধান আসামী করে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১৫ জন অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শামীম সরকার মোহাম্মদ আলীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে এজাহারভূক্ত আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। রোববার সকালে আসামীদের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে।
খবর ৭১/ এস: