রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ

0
431

খবর৭১:রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ডেপুটি হাইকমিশনার।

তিনি এই মন্তব্য করলেন যখন বাংলাদেশের সরকার সে দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ডেপুটি হাইকমিশনার কেট গিলমোর বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সেখানে ফেরত পাঠানোর আগে দেখা দরকার যে ফিরে গিয়ে তারা আবার সহিংসতা নির্যাতনের শিকার হবে কিনা।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যে সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেই সমঝোতা কতটা টিঁকবে- সেটা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

কেট গিলামোর মন্তব্য করেন, ‘চার মাস আগে গত আগস্টে যে সংকট শুরু হয়েছিল, সেটা যে কত তীব্র ছিল, আমরা যদি সেটা বিবেচনা করি, আমাকে বলতে হবে রুয়ান্ডার গণহত্যার পর এত দ্রুত এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে আমরা ঘরবাড়ি ছাড়া হতে দেখিনি। ‘

কেট গিলামোর আরো মন্তব্য করেন, ‘রোহিঙ্গারা যে কী ভীষণ নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে, সেটা আসলে অনুমান করা পর্যন্ত কঠিন। কাজেই মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এই লাখ লাখ শরণার্থী তাদের বাড়িঘরে ঠিকমতো ফিরে যেতে পারে, এটা কল্পনা করতে গেলেও আপনার বিশ্বাসে বিরাট বড় একটা উল্লম্ফনের দরকার হবে। ‘

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে কী ঘটেছে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি, এই ঘটনার জন্য কাউকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। এমনকি এই শরণার্থীরা ফিরে গেলে তারা যে আবারো একই ধরনের ঘটনার শিকার হবে না- সেটার পর্যন্ত কোনো নিশ্চয়তা নেই। ‘

বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের এক বৈঠক থেকে যেসব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে তাদের একটি তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনারকে।

পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জানান, যত দ্রুত সম্ভব এই তালিকা তৈরি করা হবে।

বাংলাদেশ সরকারের কী তাহলে এই প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে কেট গিলমোর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের একেবারে সবচেয়ে সাধারণ ভিত্তিটাও যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের উচিত হবে না এই শরণার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সহযোগী হওয়া। ‘

‘শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর পর তারা আবারো যে একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হবে না, এমন নিশ্চয়তা যেখানে নেই, সেখানে বাংলাদেশের এই কাজে যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না’ বলেন মিস গিলমোর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে এই সংকট হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। এটি দশকের পর দশক ধরে চলা বৈষম্য আর গত চার-পাঁচ বছর ধরে পরিচালিত তীব্র নিপীড়নের ফল। গত ‌আগস্ট থেকে যা ঘটেছে, তা ছিল রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার একটি ধারাবাহিক, সচেতন এবং পরিকল্পিত চেষ্টা। কাজেই বাংলাদেশের উচিত হবে মিয়ানমারের কাছ থেকে এমন নিশ্চয়তা আদায় করা, যারা ফিরে যাবে, তাদেরকে মিয়ানমার সুরক্ষা দেবে। ‘

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিনি সর্বশেষ যে তথ্য জানতে পেরেছেন তাতে বাংলাদেশ সরকার মনে করছে মিয়ানমার শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার জন্য কিছু কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

‘আমি জানতে পারলাম সীমান্তের অপর পারে ওরা বেশ কিছু ঘরবাড়ি নতুন করে তৈরি করতে শুরু করেছে এবং শরণার্থীদের নেওয়ার জন্য ওরা কিছু ক্যাম্পও তৈরি করছে। কাজেই এটা শুধু মুখের কথা বা ভাসা ভাসা কিছু নয়, বিষয়টি এখন বাস্তবায়নের পর্যায়ে চলে এসেছে। ‘

টি এইচ ইমাম প্রশ্ন তোলেন, ‘কোনটি আগে? যারা এসব ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি বা ঘটনার তথ্যানুসন্ধান? আমরা কি এগুলোর জন্য দেরি করব? নাকি যাতে এদের নিজের দেশে প্রত্যাবাসন আগে শুরু হয় সেটা দেখব?’

তিনি বলেন এটা অবশ্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এদের ওপর যাতে আবার হামলা না হয় এবং মিয়ানমার সরকার যাতে এদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সেটা দেখা।

‘এ ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। এখন বিষয়টি হলো কীভাবে, কোন মডালিটিতে এরা ফিরে যাবেন। ‘ টি এইচ ইমাম বলেন, মিয়ানমার সরকার এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন, তাই আগে থেকেই তারা নেগেটিভ সিদ্ধান্তে যেতে চান না।

‘যতক্ষণ পর্যন্ত ওদের কাছ থেকে সহায়তা পাব এবং দেখব যে সমস্ত পদক্ষেপ তারা নিয়েছে সেগুলো আমাদের জন্য ভালো, ততক্ষণ অন্য সিদ্ধান্তে যাব কেন?’ তিনি বলেন যারা মিয়ানমারে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিচারের মুখোমুখি করাটা পরের ব্যাপার। কিন্তু তার আগে বাংলাদেশ অবশ্যই চায় দ্রুত এই শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here