খবর ৭১:মিয়ানমার নয়, এবার চট্টগ্রামেই তৈরি হচ্ছে সর্বনাশা ইয়াবা। আর ইয়াবা কারখানার যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে নগরীর ওয়ার্কশপেই। আর কাঁচামাল সংগ্রহ করা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামের খোলা বাজার থেকে।
এরপর কারিগরের দক্ষ হাতে বানানো হয় ‘নকল’ ইয়াবা। নানা কৌশলে তৈরি ইয়াবা ‘আসল’ বলে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সেবনকারীদের হাতে।
মঙ্গলবার রাতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ইয়াবা তৈরির দুটি মেশিন, আড়াই লাখ পিস ইয়াবা এবং অন্তত আরও ১০ থেকে ১১ লাখ সমপরিমাণ ইয়াবা তৈরির কাঁচামালসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
গ্রেফতার চারজন হচ্ছে- ইয়াবা তৈরির কারিগর শ্যামল মজুমদার (৩৭) এবং তার সহযোগী আবদুল্লাহ আল আমান (৩৪), মামুন হোসেন (৩২) ও আয়শা সিদ্দিকা (২৭)।
মঙ্গলবার রাতে ডবলমুরিং থানাধীন বেপারীপাড়া এলাকার কমিশনার গলির আবুল হোসেন সওদাগরের ভবনের তয় তলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা তৈরির মেশিনসহ এ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার শ্যামল মজুমদার গোয়েন্দা কার্যালয়ে জানান, চট্টগ্রামের এক সময়কার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী রাখাল চন্দ্র দে’র কাছ থেকে তার ইয়াবা তৈরির হাতেখড়ি। ২০১২ সালে রাখাল চন্দ্র ও শ্যামল চকবাজার এলাকা থেকে ইয়াবা তৈরির মেশিনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। রাখাল চন্দ্র কারাগারে মারা যায়।
২০১৪ সালে কারাগার থেকে জামিনে বের হয় শ্যামল। এরপর নগরীর মতিয়ার পুল এলাকার একটি ওয়ার্কশপ থেকে বানানো হয় ইয়াবা কারখানার সরঞ্জাম। চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে সংগ্রহীত কাঁচামাল দিয়ে নিজেই তৈরি করে ইয়াবা।
শ্যামল আরও জানান, তার মেশিনে প্রতি ডাইসে ৩০টি করে ইয়াবা তৈরি হয়। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার পিস ইয়াবা তৈরি করা যায়। তার সহযোগী আমান এবং মামুনসহ অন্যরা উৎপাদিত ইয়াবা বিক্রি করে।
সে আরও জানায়, গত বছর পুলিশের একটি টিম তার ইয়াবা কারখানায় অভিযান চালায়। পরে তারা ১৪ লাখ টাকা সমঝোতায় তাকে ছেড়ে দেয়।
শ্যামলের তৈরি ইয়াবা বিক্রেতা আবদুল্লাহ আল আমান জানান, প্রতি পিস ইয়াবা বাবদ শ্যামলকে ৩০ টাকা করে দিতো আমান। সে প্রতি পিস ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা কিংবা আরও বেশি দামে বিক্রি করত। তার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি কিনতো ঢাকার নাছির নামে এক ব্যক্তি। অধিকাংশ ক্রেতা মোবাইলফোনে ইয়াবার অর্ডার দিত। এর মধ্যে কেউ নিজে এসে ইয়াবা কিনে নিত, আবার কমিশনের মাধ্যমেও ইয়াবা বিক্রি করা হত বলে আমান জানায়।চট্টগ্রামের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও ডিজেপার্টিতে সরবরাহ করা হত ইয়াবা।
আমান আরও জানায়, শ্যামলের কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা নকল। এসব ইয়াবা সেবনকারীদের শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এটি চট্টগ্রামসহ দেশে ইয়াবা তৈরির সব চেয়ে বড় কারখানা। তারা ওই বাসার একটি কক্ষে দরজা বন্ধ রেখে ইয়াবা তৈরি করত। আয়শা সিদ্দিকা নামে ওই নারীকে দিয়ে তারা বাসা ভাড়া নেয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার পিস এবং বিপুল পরিমাণ ইয়াবা তৈরির কাচামাল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত কাঁচামাল দিয়ে আরও অন্তত ১০ থেকে ১১ লাখ পিস ইয়াবা তৈরি করা যাবে। উদ্ধারকৃত সরঞ্জামের মধ্যে আছে, দুটি ইয়াবা তৈরির মেশিন, চারটি ডাইস, এর একটির উপর ইংরেজিতে লেখা আছে ‘আর’ এবং অপরটিতে ‘ডাব্লিউ ওয়াই’।’
নগর পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসীন জানান, গ্রেফতার শ্যামল ইয়াবা তৈরির একজন দক্ষ কারিগর। সে আগেও ইয়াবা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার হয়েছিল। অনেক দিন জেল কাটার পর জামিনে বেরিয়ে পুনরায় এ ব্যবসায় জড়ায়। আর কারও কাছে ইয়াবা তৈরির কারখানা আছে সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
খবর ৭১/ এস: