খবর৭১:আজ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮২তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯৩৫ সালে এ দিনে কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্যই তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। তাঁর সহধর্মিনী আনোয়ারা সৈয়দ হক পেশায় একজন চিকিৎসক এবং তিনিও বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিথযশা লেখক।
পঞ্চাশের দশক থেকে সৈয়দ শামসুল হক বিচিত্র রচনায় সমৃদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার পান।
সৈয়দ হক কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে।
এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ১৯৫২ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক শাখায় এইচ এস সি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ সালে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। সেই থেকে লেখালেখিকে তিনি একমাত্র ব্রত করে নিয়েছিলেন।
ছাত্রাবস্থায়ই সৈয়দ হকের প্রথম উপন্যাস ’দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘তাস’ প্রকাশের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যাঙ্গণে তিনি স্থায়ী আসন তৈরি করে নেন। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘শীত বিকেল’, ‘রক্তগোলাপ’, ‘আনন্দের মৃত্যু’, ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’, ‘জলেশ্বরীর গল্পগুলোসহ বিচিত্র বিষয়ের গভীর জীবনঘনিষ্ঠ রচনা। তার গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এক মহিলার ছবি’, ‘নীল দংশন’, ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’, ‘তুমি সেই তরবারি’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’ ইত্যাদি। ছোটদের জন্য লেখা ‘সীমান্তে সিংহাসন’, ‘আবু বড় হয়’ ও ‘হাডসনের বন্ধু’ বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তার অতুলনীয় কাব্যনাট্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ বাংলা সাহিত্যে নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করছে।
সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজ্যে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে। তাঁর ভাষা আর আঙ্গিকের উজ্জ্বল নিরীক্ষার পরিচয় উৎকীর্ণ হয়ে আছে ‘বিরতিহীন উৎসব’, ‘অপর পুরুষ’, ‘বৈশাখে রচিত পঙিক্তমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতরসহ বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে। ম্যাকবেথ, টেম্পেস্ট, শ্রাবণ রাজাসহ বিশ্বসাহিত্যের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনাও তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন।
তাঁর ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’। লেখালেখি ছাড়াও সৈয়দ হক বিবিসিতে সাংবাদিকতাসহ পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে চলচ্চিত্রের সাথেও যুক্ত ছিলেন। পরে সাহিত্যচর্চাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বাধীনতা-পূর্বকালেই তিনি আদমজী পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা ও স্বীকৃতিতে তিনি ভূষিত হয়েছেন।
খবর৭১/জি: