রাণীনগরের জয়িতাদের অজানা কথা দেওয়া হলো তাদের কাজের সম্মাননা

0
371

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” কার্যক্রমের আওতায় সম্প্রতি বেগম রোকেয়া দিবসে উপজেলার পাঁচ নারীকে জয়িতার পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলার পাঁচ জয়িতা হলেন শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী মোছা: আরজুমা বেগম, সফল জননী মোছা: মজিদা খাতুন, সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার ক্ষেত্রে মোছা: ছালমা তাবাসুম, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী মোছা: শাহানাজ আক্তার ও নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে মোছা: মোনোয়ারা।

আমার খুব কম বয়সে বিয়ে দেয় আমার গরীব বাবা-মা। তখন থেকেই আমার স্বামী আমার প্রতি উদাসিন। তবুও আমি একটুও ভেঙ্গে না পড়ে প্রবল মনোশক্তি নিয়ে স্বামীর সংসার থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করি। ঘরে আসে আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে। সন্তারদের প্রতিও আমার স্বামী উদাসিন। আমি সকল অভাব-অনটন, বাধা-বিপত্তিকে পিছু ফেলে এগিয়ে যেতে চাই। এখন আমার মেয়ে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজে অর্নাস কোর্সে পড়াশুনা করছে আর ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। আমি বর্তমানে স্থানীয় একটি প্রকল্প ভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষককতা করি। এভাবইে রাণীনগরের ধোপাপাড়াগ্রামের আব্দুল আলীম প্রামাণিকের স্ত্রী জয়ীতা মোছা: আরজুমা বেগম তার জীবন-যুদ্ধের কথাগুলো বলে ছিলেন।

এদের মধ্যে অপর একজন জয়িতা মোছা: মোনোয়ারা। বাড়ি উপজেলার চকাদিন গ্রামে। বাবা মো: বিশু প্রামাণিক। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য মোনোয়ারার ওপর চলে স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন। এক সময় সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। গরীব বাবা বাড়িতে এনে তাকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন। পরবর্তীতে স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে আর নিতে আসেনি। এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়িতে মাদুর তৈরি শুরু করেন। পরবর্তিতে তিনি সেলাই বিষয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তার জীবনে পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেন। এখন তার অধিনে ৮-১০জন বেকার মহিলা মাদুর তৈরি করার কাজ করে। সে এখন ব্যস্ত নারী।

উপজেলার খাগড়া গ্রামের মৃত-আব্দুল জব্বারের স্ত্রী সফল জননী মজিদা খাতুন। নিজে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হলেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন তার ৬ ছেলে ও ২ মেয়েকে। সন্তানদের উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে এই সফল জননীর ভ’মিকাই তাদের একমাত্র প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। বড় ছেলে বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মরত, ২য় ছেলে থানার ওসি হিসাবে এবং অন্যান্য ছেলে দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছে। মজিদার দুই মেয়েই উচ্চ ডিগ্রি গ্রহণ করে বর্তমান স্বামীর সংসার সামলানোর দায়িত্ব পালন করছে। তিনি জেলাতেও সফল জননী হিসাবে সম্মাননা পেয়েছেন।

উপজেলার চককুতুব গ্রামের মো: আবুল কালাম চৌধুরীর স্ত্রী মোছা: ছালমা তাবাসসুম। তিনি একজন সমাজকর্মী। বর্তমানে তিনি যুব অফিস থেকে গাভী পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে গাভী পালনে এক দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। বর্তমানে তার ৪টি গাভী রয়েছে। তিনি এলাকার নির্যাতিত ও অবহেলিত নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়ে আসছেন।
মোছা: শাহানাজ আক্তার। বাড়ি উপজেলার চককুতুব গ্রামে। স্বামী মো: হারুনুর রশিদ একজন ভ্যান চালক। বিয়ের পর থেকেই সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। একসময় শাহানাজ তার এক বান্ধবীর পরামর্শক্রমে যুব অধিদপ্তর থেকে মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। এখন শাহানাজ লিজ নেওয়া ৩টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। তাই এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী আইরিন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে এই সফল নারীদের খুঁজে বের আনি। এই জয়িতাদের আমরা তেমন ভাবে সম্মানিত করতে পারি না। এই সমাজে আরো যারা নির্যাতিত ও অবহেলিত নারী রয়েছেন তারা এই জয়িতাদের জীবন যুদ্ধের সফল কাহিনী থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারবে। এদের দেখাদেখি তারাও এক সময় সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে। তবেই আমাদের এই কষ্ট সার্থক হবে।

খবর ৭১/ ই:

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here