মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক এখন নড়াইলের গুচ্ছ বাসিন্দা

0
366

 

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
দেশের মধ্যি আমার এক শতক জাগাজমি নাই। তায় বউ ও নাতি ডারে নিয়ে নিয়ে এই গুচ্ছ গ্রামে থায়ি। যুদ্ধের সুমায় যারা দেশের সাথে বেইমানি করিছে, যে রাজাকাররা আমাগে দেশের মানুষরে দিনি দুপুরি জবাই করিছে, মা-বোনের ইজ্জত নেছে, তারা আজকে অনেক অর্থ সম্পাদের মালিক হয়েছে। তারা কেই আমার মত গুচ্ছ গ্রামে মানবেতর জিবন যাপন করতিছেনা। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে,এ কি একজন মুক্তিযুদ্ধার পুরস্কার? এ জন্নি কি দেশটারে স্বাধীন করিছিলাম? মুক্তিযুদ্ধা হইছি বলে সরকার থেয়ে মাসে যে টাহা ভাতা দেয়। আমার ওষদ কিনতি কিনতি তো সে টায়া শেষ হয়ে যায়। আমি মরে গিলি কিডা আমার বউ-সংসার দ্যাখপে? কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো ১৬ ডিসেম্বর এভাবেই বলছিলেন নড়াইলের জেলার মাইটকুমড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামের) বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক (৮১)। বয়সের ভারে অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটছে মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হকের। নিজে ঠিকমত হাঁটাচলাও করতে পারেন না। অন্যের সাহায্যে এবং লাঠি ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। কাজ করার শক্তি নেই এই মুক্তিযোদ্ধার। অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশির ভাগ সময়ই আশ্রয়ণ প্রকল্পের খুপড়ি ঘরে থাকেন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, তবু দারিদ্রতা তাদের পিছু ছাড়ছে না। একটু স্বচ্ছলতার আশায় সামছুল হকের স্ত্রীও কাজ করছেন অন্যের বাসায়। মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেলে ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উন্নতমানের চিকিৎসার প্রয়োজন বলে জানান তিনি। প্রতিবেশিরা জানান, সামছুল হক বর্তমানে বেশ অসুস্থ। তাকে উন্নতমানের চিকিৎসা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক বলেন, ১৯৭১ সাল। আমার বয়স তখন হয়ত ৩০ থেকে ৩২ বছর হবে। তখন নিজ চোখে পাকিস্তানী সেনাদের অত্যাচার দেখে নিজিরে ধরে রাখতি পারিনি। স্বরনার্থীদের সঙ্গে ভারতে চলে যাই। সেখানে ট্রেনিং শেষ করে দেশে এসে যুদ্ধ করি। জীবনের ঝুকি নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেছেন গোপালগঞ্জের ভাটিয়া, নড়াইল ও লোহাগড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। স্বল্প শিক্ষিত সামছুল হক তখন রাজনীতি জানতেন না, শুধু জানতেন নির্বিচারে আমার দেশের মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, আমার দেশের অর্থ অন্য দেশে না গেলে ভাল ভাবে থাকতে পারব, দেশের লোকের অভাব দুর হবে। রক্ত ঝরলো, যুদ্ধ শেষ হল, অভাব তবু শেষ হলো না। বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হকের প্রশ্ন আমার দুঃখ-কষ্টের দিন শেষ হবে তো ? স্বাধীন বাংলার মানচিত্র প্রাপ্তিতে তার গৃহীত ভূমিকার বিপরীতে তার এই ৪৫ বছরের প্রাপ্তি বলতে রয়েছে সীমাহীন অভাব আর সামাজিক অবজ্ঞা। স্থানীয়দের দাবি শামছুল হকের মত হত-দ্ররিদ্র মুক্তিযোদ্ধারা যেন একটু ভালভাবে জীবন যাপন করতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ প্রশাসনের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লোহাগড়া ইউনিটের কমান্ডার মফিজুল হক আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, কতটা অসহায় হলে আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকতে হয়, তা সচেতন মানুষ সহজে বুঝতে পারবেন। আশা করছি নড়াইলের মাইটকুমড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের এই মুক্তিযোদ্ধার দিকে সরকার সুদৃষ্টি দেবেন এবং তার উন্নত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করবেন। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here