অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে প্রবাসী কর্মীরাই: নুরুল ইসলাম বিএসসি

0
464

খবর৭১:প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, প্রবাসী কর্মীদের ত্যাগ, শ্রম ও ঘাম দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। বিভিন্ন দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৭৩ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার নারী রয়েছেন, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস ২০১৭’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সস্মেলনে রোববার মন্ত্রী এ তথ্য জানান।

সম্মেলনে জানানো হয়, সোমবার এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নিরাপদ অভিবাসন যেখানে টেকসই উন্নয়ন সেখানে’। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, সুভেনির প্রকাশ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, অভিবাসন মেলা, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসন দিবসকে সামনে রেখে আমাদের মন্ত্রণালয় সুর্নিদিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হচ্ছে- প্রবাসীদের জন্য ডে-কেয়ার ব্যবস্থা এবং যোগাযোগের জন্য তিনটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। প্রবাসীদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা জানার জন্য এসব হটলাইন সব সময় চালু থাকবে। দেশে ও দেশের বাইরের কর্মীরা এখানে তাদের অভিযোগ করতে পারবেন। নম্বরগুলো হলো: ০১৭৮৪ ৩৩৩৩৩৩, ০১৭৯৪ ৩৩৩৩৩৩ এবং ০২-৯৩৩৪৮৮৮।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, শিগগিরই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারে আবারও বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো শুরু হবে। এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু হবে।

নুরুল ইসলাম জানান, প্রবাসীকল্যাণ ভবনে একটি স্থায়ী জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। অভিবাসনে পিছিয়ে পড়া ২২ জেলার প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে আপাতত প্রশিক্ষণটি শুরু হয়েছে। বিশ্ব বাজারের চাহিদা পূরণে এখন দক্ষ কর্মী পাঠানোর দিকে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে বিদেশ যেতে আগ্রহী কর্মীদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। জাপানের বাজারে বড় পরিসরে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশগামী কর্মীদের শতভাগ বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে।

মন্ত্রী বলেন, বছর শেষে ১০ লাখেরও বেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। আমরা নারী কর্মীদের অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি অভিবাসনকে নারীর ক্ষমতায়নে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স জাতীয় উন্নয়নে অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনায় নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এ সাফল্যে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স অনেক বেশি অবদান রেখেছে। শ্রমবাজার ধরে রাখার পাশাপাশি আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার অনুসন্ধানে কাজ করছি। এরই মধ্যে নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে ৫২ দেশে গবেষণা শেষের পথে। আমরা আশা করছি এখানে আমাদের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

মালয়েশিয়ায় যেতে অনেক সাধারণ মানুষকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে আর মন্ত্রণালয়ের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বেশি টাকা দিয়ে যাচ্ছে তারা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ না করে আমরা কী করতে পারি? যারা অভিযোগ করেন এদের বেশিরভাগ বিদেশ যাওয়ার পরে করেন। তখন কী করে ব্যবস্থা নিই। যাওয়ার আগে যদি লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসে আমি ব্যবস্থা নেব। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের অভিযোগ নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

নারী কর্মীদের নিরাপত্তাসহ আরও অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিড়ম্বনা যে হয় না তা নয়। কিন্তু আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করছে না। অভিযোগ করলে আমরা দূতাবাসের সাহায্যে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। দূতাবাস যদি ব্যর্থ হয় ওই দেশের মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করব। এ পর্যন্ত মাত্র ৯টি আবেদন জমা পড়েছে, এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদারসহ বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে জানানো হয়, সোমবার সকাল ৮টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা হয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র‌্যালি হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিআইসিসিতে অভিবাসন বিষয়ক গম্ভীরা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। বিকাল সোয়া ৩টায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব’ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here