পুত্রকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে লাশ হলো পিতা

0
494

রেদোয়ান জনি::
অফিস থেকে ছুটিও নেওয়া হয় পুত্রকে ডাক্তার দেখাবে বলে। একদিন পূর্বে চট্টগ্রাম নগরীতে অবস্থান করে। উঠেন এক আত্নীয়ের বাসায়। সকালে পুত্রকে নিয়ে রিক্সায় চড়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য যাত্রা করে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিণতি ঘটে, হলো না ডাক্তার দেখানো। যাত্রাপথে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় ঘটে এক নির্মম ট্র্যাজেডি। পথিমধ্যে রেললাইনে রিকশার চাকা আটকা পড়লে দ্রæতগতির ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল হতভাগা পিতার। পিতার মৃত্যু হলেও ১১ মাস বয়সী পুত্র ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকার হামজারবাগ রেল ক্রসিংয়ে সকাল ১১ টার সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী ডেমু ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায় ব্যাংক কর্মকর্তা রাশেদ খাঁন (৩৭)। তিনি মিরসরাইয়ের ওয়ান ব্যাংক মিঠাছড়া বাজার শাখার এসিসটেন্ট ম্যানেজার ছিলেন এবং তিনি উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের মিঠানালা গ্রামের জীবন আলী ভ‚ঁইয়া বাড়ীর মৃত মফিজুর রহমানের ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। পুত্র কয়েকদিন যাবত অসুস্থ্য তাই তিনি তার ১১ মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে শহরে এসেছিলেন। রাশেদের একমাত্র পুত্রই ছিল ১১ মাস বয়সী আলিফ। তাকে সে খুব আদর যত্নে বেড়ে তুলতেছিলেন। পুত্রের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। ৪ বছর পূর্বে শারমিন ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রাশেদ, শারমিন পেশায় গৃহিনী।

রাশেদের আতœীয় সালা উদ্দিন জানান, ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ব্যাংক থেকে ছুটিও নিয়েছিলেন। সকাল ১১ টার দিকে ছেলেকে নিয়ে তিনি ঘুরতে বের হয়েছিলেন পাশাপাশি ডাক্তার দেখানোরও কথা ছিল। রিকশায় করে হামজারবাগ রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গামী ডেমু ট্রেন রাশেদকে বহনকারী রিকশায় ধাক্কা দেয়। এসময় তাকে উদ্ধার করে চমেকে নিয়ে গেলে কতৃর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

রাশেদের চাচাতো ভাই হারুন রশিদ জানান, রাত ৮ টার সময় মিঠানালা ইউনিয়নের মধ্যম মিঠানালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রাশেদের জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাযায় সকলস্তরের মানুষের ঢল নামে। সহজ সরলমনা রাশেদের এলাকায় বেশ পরিচিতি ছিল।

পাঁচলাইশ জিআরপি থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, রেল লাইনের সাথে রাশেদকে বহনকারী রিক্সার চাকা আটকে গেলে সেমুহুর্তে ডেমু ট্রেন এসে পড়ে এবং তাকে বহনকারী রিক্সাকে চাপা দেয়। নিহত রাশেদ তার সাথে থাকা শিশু সন্তানকে বাঁচাতে পারলেও নিজে মারা যান। তবে তার বাচ্চাটি সুস্থ আছে।

মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন বলেন, রাশেদের মৃত্যুর খবর শুনে আমি দ্রত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাই। লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই সকল প্রক্রিয়া শেষে বিকাল ৪ টার সময় বাড়ির উদ্দেশ্যে লাশ পাঠানোর জন্য সর্বাত্নক সহযোগিতা করি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলা উদ্দিন তালুকদার বলেন, রাশেদ ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here