বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনার পতনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছে। তাদের হৃদয়ে ভয়ঙ্কর জ্বালা।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাসাসের উদ্যোগে রাজধানীর বিএফডিসির সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা অসম একটি চুক্তি করেছিলেন আদানি গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে। ভারতে যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। অনেক বকেয়া রেখে গেছেন শেখ হাসিনা। সেই বকেয়া কমানোর জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চেষ্টা করছে। অনেক পরিশোধ করেছে, আরও কিছু বাকি আছে। প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার এই তিন মাসের মধ্যে তারা বিভিন্নভাবে জমা দিয়েছে। বকেয়া পরিশোধ করেছে তারপরেও উনারা সন্তুষ্ট নন। উনারা বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ দেয় সেই বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, থ্রেট, হুমকি দিয়েছে যে আমরা টোটালি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেবো। কেন? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নেই এই জন্য? এই জন্যই কি আপনাদের এত রাগ? এত ক্ষোভ?
রিজভী আরও বলেন, আপনাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বন্ধুত্ব, আপনাদের সঙ্গে গণতন্ত্র হত্যাকারীদের সম্পর্ক। আপনাদের সঙ্গে তো বাংলার জনগণের সম্পর্ক নেই। আপনারা খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন আপনাদের হৃদয়ে ভয়ঙ্কর জ্বালা শেখ হাসিনা নাই তাই।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনা ভার্সেস ভারত, বাংলাদেশ আর ভারত নয়। ভারতের পলিসি মেকারদের সঙ্গে এই সম্পর্ক। শেখ হাসিনার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। তাহলে কত গভীর এই সম্পর্ক। এখানে জনগণ কোনো ম্যাটার নয়।
ভারতের নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, আপনাদের একটা নীতি আছে আমরা জানি। আমি পার্শ্ববর্তী দেশের নীতি নির্ধারকদের বলতে চাই তারা যখন একটি উপমহাদেশ ছিল যখন এই উপমহাদেশে স্বাধীনতার আন্দোলন চলছে এবং ওই সময় যখন আরও অনেক স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে, তখন তাদেরই একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা প্রধানমন্ত্রী তিনি এটিকে পছন্দ করেননি। তার একটি বই আছে ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া যেটার রচয়িতা তাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। সেখানে এক জায়গায় তিনি বলেছেন তোমরা যারা এখানে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র করছ, কেউ খালিস্থান রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করছে এটা টিকবে না, তোমাদেরকে আমরা একটা সাংস্কৃতিক সাহিত্য শাসন দিতে পারি, কিন্তু তোমাদেরকে স্বাধীন পলিটিক্যাল ইউনিট দিবো না। এটা হচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তারা ওই নীতি নিয়ে চলে। কিন্তু আপনারা কি তাতে সার্থক হয়েছেন? হবেন না। কারণ এই দেশের মৃত্তিকা থেকে আবরার ফাহাদদের জন্ম হয়, মৃত্তিকা থেকে আবু সাঈদদের জন্ম হয়, মুগ্ধর জন্ম হয়। কোনদিন আপনারা সেটা পারবেন না।
তিনি বলেন, বাংলার মানুষ যেমন স্বাধীনতা প্রিয়, বাংলার মানুষ যেমন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ, ঠিক তেমনি তারা গণতন্ত্র প্রিয়। সুতরাং কর্তৃত্ববাদী, দুঃশাসন, একদলীয় দুঃশাসন এবং জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে আপনারা কখনোই আপনাদের প্রতিভূকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরও বলেন, ৫২, ৬২, ৬৯-৭১ এ যেন এক বিপ্লবের রক্তধারা বাংলার তরুণদের কাছ থেকে শেখ হাসিনা ওটাকে কেড়ে নিতে পারেনি। অনেক চেষ্টা করেছে, অনেক রকম অপপ্রচার করেছে, অনেক ধরনের কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন দিয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছে, বিভিন্ন বই রচনা করেছে আর আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সত্য যে রচনা করতে গিয়েছে তাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে কথা বলতে গিয়েছে তাকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। না হলে লাল দালানের মধ্যে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাঝখান দিয়ে আবার যখন তারুণ্য জেগে উঠলো, কি অভূতপূর্ব আন্দোলন। এক ভাই মারা যাচ্ছে আরেক ভাই তার পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, পুলিশ নিজেই বলেছে এরা তো কমে না। একটা করে গুলি করে মারি আরেকজন এসে দাঁড়ায়।
রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশকে কব্জা করতে চায়, যারা আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, যারা আমাদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করতে চায় তাদেরকে বলে রাখা উচিত এই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আবরার, প্রতিটি ঘরে ঘরে মুগ্ধ। এই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আবু সাঈদদের যুগ যুগ ধরে জন্ম হয়েছে। এই বীরত্ব গাথা ইতিহাস আপনারা হয়তো জানেন না দিল্লী? আপনারা হয়তো জানেন না পার্শ্ববর্তী দেশ কত বীরের আত্মদানের মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশ। আর আপনারা আধিপত্যবাদী নীতির মধ্য দিয়ে এই দেশকে চালাবেন। আপনারা এই দেশের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করবেন, কখনই পারবেন না।
এ সময় জাসাসের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেবা শানু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইথুন বাবু, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।