সংলাপে গুরুত্ব পেল যেসব বিষয়

0
15

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চতুর্থবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে শনিবারের (১৯ অক্টোবর) এই সংলাপে রাষ্ট্র সংস্কার, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গ প্রধানত গুরুত্ব পেয়েছে। এর বাইরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনি এর আগেও কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এবার রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করতে প্রধান রাজনেতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়েই বেশি কথা হয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
শনিবার চতুর্থ দফার এই সংলাপে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম ছাড়াও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বিজেপি, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ অভিযোগ ওঠার পর জাতীয় পার্টিকে ডাকা হয়নি এই সংলাপে।
আজকের সংলাপে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়েই বেশি কথা হয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এককভাবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আগামী নির্বাচন কমিশনে কারা কমিশনার থাকবেন সেটা সার্চ কমিটি ঠিক করবে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সার্চ কমিটি করা হবে এবং এই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো চাপ বা হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না বলে জানান তিনি।

সংলাপে কোন দলের কী প্রস্তাব

সংলাপের শুরুতেই অংশ নেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। তাদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে গণফোরামের সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছি। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। সরকার গঠিত কমিশনের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব কয়েক দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে দেওয়া হবে।
সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ড. কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে জানান সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, বাজারে পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে।

সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ২৩ প্রস্তাব দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।

দলটির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বলেন, আজ আমরা ২৩টা প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য যা প্রয়োজন প্রস্তাবে সেগুলো রয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন, সুন্দর প্রশাসন চালানোর জন্য, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য, দ্রব্যমূল্যের জন্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তাদের সহযোগিতা করার জন্য আমাদের প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে।
সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চালানো গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দাবি জানিয়েছেন। গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে ব্যাপারে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
সংলাপে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে জানাতে গিয়ে পার্থ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের প্রস্তাব তারা দিয়েছেন।

পার্থ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিষিদ্ধ করা হচ্ছে নাকি নিষিদ্ধ করা হবে সেটা মুখ্য না। একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হবে নাকি হাইকোর্ট থেকে কোনো আদেশের মাধ্যমে হবে সেটি পরের ব্যাপার। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটা আরম্ভ হওয়া উচিত।

বিজেপি সভাপতি বলেন, আমি বলেছি, আপনারা এমন কোনো সংস্কার হাতে নেবেন না, যেটা গণতান্ত্রিক সরকারের নেওয়া উচিত। আপনাদের সংস্কারগুলো নির্বাচনমুখী সংস্কার হলে ভালো হবে। বাকি প্রস্তাব থাকতেই পারে, যেগুলো হয়তো পরবর্তী সরকার করবে। মনে রাখতে হবে, এটা জনগণের সরকার। কিন্তু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকার না।
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা বলেছি আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের জুন বা জুনের পরেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। উনাদের চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। উনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন এবং আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
সংলাপে উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার দাবি করেছেন লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, আমরা বলেছি যত সংস্কার করুক না কেন, সবার আগে সংস্কার করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদের। এ পরিষদের হাতেগোনা কয়েকজনের সফলতা ছাড়া বাকি সবাই ব্যর্থ। তাই ব্যর্থদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
সংলাপ শেষে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, বিদ্যমান সংবিধান জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধান নয়। এটা একটা অবৈধ সংবিধান। তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ও জাতীয় গণফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তার সঙ্গে আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা সুস্পষ্টভাবে সরকারকে বলেছি, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে এনে এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here