জাতির মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে বাংলাদেশের মানুষের যে আশা-প্রত্যাশা সেই আশা প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবো। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার আগে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির উদ্যোগে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছি, কিন্তু এর বাইরেও অনেক কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির পথও বের করে হবে। যদি আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে পারি তাহলে আমরা অর্থনৈতিকসহ সবদিক থেকেই মুক্তি পেতে সফল হবো।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি, মূলত বাংলাদেশের মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ যারা আছেন এই মানুষগুলোর মধ্যে অনেককেই আমরা হারিয়েছি, অনেকেই শারীরিকভাবে আহত হয়েছেন তাদের সবার আত্মত্যাগের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারকে বিদায় করেছি, অল্প লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। সামনে আরও অনেক পথ বাকি আছে। সেই পথ পাড়ি দিতে পারলে, মানুষের ভোটের অধিকারও নিশ্চিত হবে।
বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যদি এই এলাকার দিকে তাকাই তাহলে আমরা সম্ভাবনাময় একটি এলাকা দেখতে পাই। সিরাজগঞ্জের নাম আসলেই সামনে ভেসে ওঠে তাঁত শিল্পের কথা। এই পেশার সঙ্গে অসংখ্য মানুষ যুক্ত। এর আগেও কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কৃষি ঋণ মওকুফসহ অনেক কিছু করেছিলেন। আমার ইচ্ছা, বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে এই তাঁতশিল্পের পাশে এসে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। সারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের মাধ্যমে এই শিল্পকে কীভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা আমরা করব।
চৌহালীর চীনা বাদামকে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, কেন এই কৃষকদের পাশে সরকার দাঁড়াবে না, কেন এই চীনা বাদাম ছড়িয়ে দেওয়া হবে না। আমরা চেষ্টা করব এই চীনা বাদাম বিদেশে রফতানি করতে। তখন বৃহৎ আকারে চাষ হলে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, যতদিন আমরা আমাদের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি থেকে শুরু করে সকল ফসল ঘরে না তুলতে পারি ততদিন আমাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম যে মানুষগুলো আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ আপনাদের প্রতি তাকিয়ে আছে, তাই দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
এর আগে স্মরণসভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটা দারুণ একটা সিদ্ধান্ত ছিল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে না যাওয়া নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছিল। কিন্তু পরে সবাই বুঝতে পেরেছে তারেক রহমানের সেই সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল।
বৃষ্টির কারণে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর ধরে গুম করছে, একের পর এক গুম-খুনের মধ্যে দিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে নিহত ও আহতদের স্মরণ করছি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়ে রিজভী বলেন, এই আন্দোলনে তরুণদের একটা বড় ভূমিকা আছে। এই ভূমিকায় আছেন তারেক রহমানও। আমি কথা বাড়াব না শুধু বলি, একটা উত্তাল আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়েছেন।
এনায়েতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বৃষ্টির মধ্যেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। বৃষ্টিতে ভিজে তারা নানা স্লোগান দিতে থাকেন।