গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত

0
15

গোপালগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘোনাপাড়া মোড়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলার চালায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এতে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার (৪০) নিহত হয়েছেন। ঘোনাপাড়া মোড়ে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফকির, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্ব এ হামলা হয়।

ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন। কেন ঘটনাটি ঘটেছে, এখনো জানা যায়নি। কেউ কেউ বলছেন, ব্যানার টানাটানি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। রাত আটটার দিকে ওসি বলেন, ঘটনাস্থলের অদূরে পাথালিয়া বাংলালিংক টাওয়ারের পাশ থেকে শওকত আলী নামের একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত শওকত আলী ঢাকায় ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন বলে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, তাঁর স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা (রত্না), রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান, লিন্টু মন্সী, গোপালগঞ্জের সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ সিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান প্রমুখ।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এবং তিনজনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এস এম জিলানী, তাঁর স্ত্রী রওশন আরা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাদশা মোল্লার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা ও গোপালগঞ্জ জেলার নেতা-কর্মী। আহত রোমান মোল্লা ঘোনাপাড়া বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের সমর্থক। এ সময় সময় টিভির গোপালগঞ্জের ক্যামেরা পারসন মানিক হাওলাদারের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বেধড়ক পেটানো হয়।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের অধিকাংশের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেশি অস্ত্রের কোপ আছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম মোড়ে আমরা শান্তিপূর্ণ পথসভা শেষ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছিলাম। ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফকির, স্থানীয় আওয়ামী নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্বে গাড়িবহরে হামলা করা হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার সময় ঘোনাপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। বাধা দিলে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়। হামলায় তিনি নিজেও আহত হয়েছেন।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, বেদগ্রাম মোড়ে বিএনপির একটি পথসভা শেষ করে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। ঘোনাপাড়ায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দুই থেকে তিন শ নেতা-কর্মী দেশি অস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেন। এতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here