‘অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে হিন্দুদের ইন্ধন দিচ্ছে ভারত’

0
59

বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে ভারত হিন্দুদের ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।

সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে নগরীর লালখান বাজারে পিটস্টপ রেস্টুরেন্টে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে নাজিমুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য পাশের দেশ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত আমাদের দেশের হিন্দুদের ইন্ধন দিচ্ছে, যেন অস্থিতিশীল একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায়। চট্টগ্রাম শহরে হিন্দুদের যত বড় মিছিল হয়েছে এত সনাতনী ধর্মালম্বী কিন্তু এখানে নেই। এখানে সব আওয়ামী লীগের মুসলিম কর্মীরা যোগ দিয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে।’
ছাত্র আন্দোলন থেকে বিএনপি কোনো শিক্ষা নেবে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অন্যায়-অবিচার করলে কেউ মাঠ পাবে না। আমরাও পাব না। আর সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিকদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। আপনাদের ভালো টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে যারা গরিব মানুষের রক্ত চুষে লুটপাটের ভাগিদার হয়েছে তাদের নিয়ে কেউ লিখতে পারেননি। এ দুর্বৃত্তায়ন থেকে আমাদের সবাইকে বের হওয়া উচিত।’

বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের ঘরে আওয়ামী লীগের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে; এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটাও কি প্রমাণ আছে? থাকলে আমাদের দিন। অভিযোগের কথা দিয়ে লাভ নেই। আপনাদের নিয়ে এখন যাব। কোথায় আছে সেটা বলেন। যদি কেউ আশ্রয় দেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

চট্টগ্রামে দল গোছানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আশা করি আমাদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেটা আমরা সাংগঠনিকভাবে গড়ে তুলতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘অনেক নিউজ আপনারা করতে পারেননি। অনেক সত্য ঘটনা আপনারা তুলে ধরতে পারেননি। আপনারা অনেক চাপে ছিলেন। আমরা আপনাদের কাছে যেতে পারিনি।’

বিএনপির নাম ব্যবহার করে অনেক স্থাপনা দখল, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে; এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা লুটপাট বা হামলা করে তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। যারা এগুলো করে তারা বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টিও না। তারা হচ্ছে লুটেরা। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিএনপির কোনো নেতাকর্মী এসব কাজ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে নেওয়াও হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির মিছিলের নাম দিয়ে কিশোর গ্যাং, ইয়াবা পার্টি লুটপাট করছে। এটা যখন আমরা বুঝতে পারি তখন তাদের মিছিল করতে মানা করে দিই। কারণ, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ যে কাজটা করে গেছে সেটা বিএনপি করুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালেও পুলিশ প্রশাসন ছিল। স্বৈরাচার এরশাদের আমলেও পুলিশ ছিল। কিন্তু গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের আমলে পুলিশ যে অত্যাচার করেছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু পুলিশের ওপর নির্যাতনের মতো বড় ঘটনা চট্টগ্রামে দেখতে পাইনি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকায় গিয়েছি। সেখানেও তেমন বড় ঘটনা ঘটেনি। একটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তাও এক আওয়ামী লীগ নেতার ছিল, যিনি হিন্দু। লোকজন তার গাড়ি ভেঙেছে। কারণ, তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। এখান আওয়ামী লীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়কে এক করে ফেললে ভুল হবে।’

এর আগে, লিখিত বক্তব্যে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ছাত্র-জনতা মিলে স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরদ্ধে যে অভূতপূর্ব সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন, অনেক রক্ত ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে সে সংগ্রাম পূর্ণতা পেয়েছে। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতা অসাধ্য সাধন করেছেন। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছেন।’

‘অভূতপূর্ব এক জনবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গত ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে দেশের ছাত্র জনতার মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এ জনবিস্ফোরণ তারই বহিঃপ্রকাশ। এ গণঅভ্যুত্থান আবারও প্রমাণ করল যে, জনগণের শক্তির কাছে কোনো স্বৈরশাসকই টিকে থাকতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের সকল নাগরিকের পরিচয় একটাই, আমরা বাংলাদেশি। সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কোনো কিছুতে আমরা বিশ্বাস করি না।’

‘আমরা এটাও আশ্বস্থ করতে চাই যে, পরিস্থিতি উত্তরণের পর একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলে বিগত ১৫ বছর ধরে আওযামী লীগ ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সংখ্যালঘু ভাইদের যে সহায়-সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল-লুটপাট করছে তাদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে যারা ছাত্র-জনতা হত্যা নির্যাতনের অভিযুক্ত চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা যে ধর্মের পরিচয়ই বহন করুক না কেন তারা স্ব স্ব অপরাধের দায় থেকে সাম্প্রদায়িকতার কার্ড ব্যবহার করে কোনোভাবেই রেহাই পাবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- নগর বিএনপি নেতা এম এ আজিজ, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, হারুন জামান, শফিকুর রহমান স্বপন, নিয়াজ মো. খান, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইস্কান্দার মির্জা, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, ইদ্রিস আলী, কামরুল ইসলাম, নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here